প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল চিত্র।
শিক্ষক জগদীশচন্দ্র বসু কড়া মেজাজের! ছাত্রেরা ধারেকাছেই ঘেঁষতে ভয় পেত। প্রফুল্লচন্দ্র রায় দেদার বকাঝকা, মারধর করেন। কিন্তু স্নেহশীল মানুষটির প্রতি ভালবাসায় আবদ্ধ ছাত্রেরা। ভালবাসার আতিশয্যে ‘স্যরের’ সামনে মুখ ফস্কে দু’-চারটে অপশব্দও তাঁরা বলে ফেলতেন। প্রেসিডেন্সি তথা হিন্দু কলেজের ১২৫ বছরের স্মারক সংখ্যায় জনৈক প্রাক্তনীর এমন স্মৃতিচারণ শোনালেন আজকের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক উপল চক্রবর্তী। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীদের প্রকাশিত পত্রিকায় ইংরেজি বিভাগের ডাকসাইটে অধ্যাপিকা কাজল সেনগুপ্তের লেখায় আবার অন্য ইতিহাস। ১৯৬০-এর দশকের গোড়াতেও প্রেসিডেন্সিতে মহিলাদের শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োগ নিয়ে তাচ্ছিল্যই যেন মিশে ছিল। কাজল লিখেছেন, তাঁকে নিয়োগের পিছনে অন্যতম কারণ প্রেসিডেন্সিতে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি। মেয়েদের ‘শরীর খারাপ’ হলে পুরুষ শিক্ষকেরা অসহায় বোধ করতেন কি না!
সোমবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্সি কলেজ ডিজিটাল আর্কাইভ প্রকাশ উপলক্ষে এমন নানা চমকপ্রদ কাহিনি উঠে এল। সভায় উপস্থিত বঙ্গের সারস্বত সমাজের চোখে যা বাংলার আধুনিকতা, বৌদ্ধিক চর্চা, আবার রক্ষণশীলতারও ইতিহাস। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো দিল্লি সেন্টার ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁটছড়ায় এই ডিজিটাল নথি-ভান্ডার গড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোচনা মজুমদার, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক উপল ও সুকন্যা সর্বাধিকারী। ‘হিন্দু কলেজ/প্রেসিডেন্সি কলেজ গ্লোবাল হিস্ট্রি’ শীর্ষক বইও লিখছেন উপল, সুকন্যা ও অন্য গবেষকেরা। রোচনা বলছিলেন, “প্রেসিডেন্সির ইতিহাসের এ সব উপাদানে কলেজ স্ট্রিট, বাংলার ছাত্র রাজনীতি, জেন্ডার (লিঙ্গ পরিচয়), কাস্টের (বর্ণ) ইতিহাসও মিশে।’’
কলকাতার বন্যা থেকে নানা দুর্যোগে দুই শতকের নথি বিপর্যস্ত হয়েছে। তবু কলেজ পত্রিকার পাতা থেকে সরকারি ফাইলের চিঠি, স্মৃতিকথা, কাগুজে প্রবন্ধ জড়ো হয়েছে আর্কাইভে। তবে এমন দিনে তীব্র ভাবে প্রকট প্রেসিডেন্সির চেয়ার প্রফেসর অকালপ্রয়াত স্বপন চক্রবর্তীর অনুপস্থিতি। ২০১৬-য় তাঁর হাতেই আর্কাইভ উদ্যোগের সূচনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সুপ্রিয়া চৌধুরীর কথায়, “এ দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিন ফুরিয়ে আসছে। তাই এমন ইতিহাস চর্চা বিশেষ জরুরি।’’ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘আর্কাইভ অতীতকে নতুন চোখে দেখতে শেখাবে।’’
তবে আর্কাইভটি এখন প্রেসিডেন্সিতে এসেই দেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সেটি উন্মুক্ত করতে মাসে মাসে লক্ষাধিক টাকা খরচের ধাক্কা। প্রেসিডেন্সির শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ইতিহাসের দরজা খোলা অর্থাভাবেই আটকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy