Advertisement
E-Paper

দেশ জুড়ে ধর্মীয় অন্ধকার, রাজ্য জুড়ে শিক্ষার অন্ধকার

২০২২ সালের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, কত ক্ষয়ের মধ্যে কেটেছে দিনকাল। তা সত্ত্বেও নতুন বছর নিয়ে আনন্দ-আহ্লাদের শেষ নেই। যা কিছু নতুন, হাজার অন্ধকারেও সে দিকে তাকিয়ে থাকে সবাই। 

সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২০
অতিমারির অন্ধকারে দু’-তিন বছর ভাল কাটেনি বিশ্বে প্রায় কারও।

অতিমারির অন্ধকারে দু’-তিন বছর ভাল কাটেনি বিশ্বে প্রায় কারও। প্রতীকী চিত্র।

‘‘যখনই কোনও নতুন বছর এসেছে, এক বছরের বেশি টেকেনি।” শিবরাম চক্রবর্তীর এই অমোঘ উক্তি মনে পড়ে বছর শেষের ও নতুন বছর শুরুর হইচই আর শোরগোলে। অথচ, তা সত্ত্বেও নতুন বছর নিয়ে আনন্দ-আহ্লাদের শেষ নেই আমাদের। যা কিছু নতুন, হাজার অন্ধকারেও সে দিকে তাকিয়ে থাকি আমরা। সময় বদলাবে, সুদিন আসবে, এটাই কি আশা?

অতিমারির অন্ধকারে দু’-তিন বছর ভাল কাটেনি বিশ্বে প্রায় কারও। আমাদের এ বছরটাও শুরু হয়েছিল কোভিডের জ্বর ও নির্বাসন দিয়ে। গত এক-দু’বছরে চেনা-পরিচিত এত মানুষ চলে গেলেন যে, স্মৃতির দুর্বলতাই কামনা করেছি রোজ। ২০২২ সালের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, কত ক্ষয়ের মধ্যে কেটেছে দিনকাল। এক দিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ। সংবাদপত্রের পাতায়, টেলিভিশনের শিরোনামে, সমাজমাধ্যমের ভাইরাল বার্তা সেই যুদ্ধের গ্লানি বয়ে এনেছে।

অন্য দিকে, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিল। রান্নার গ্যাস, জরুরি ওষুধ, বিদ্যুৎ— সব কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হতে অবশেষে নাগরিকেরা গর্জে ওঠেন। ৯ জুলাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ইলোন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণ খানিকটা হলেও সমাজমাধ্যমে বাক্ স্বাধীনতার আরামকে খর্ব করল। চলে গেলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ।

অন্য দিকে, কোভিডের ঝড় সামলে ২০২২ সালে হই হই করে হয়ে গেল ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্ব দেখল, রাজপুত্রের মতো মেসির কাপ জয় থেকে এমবাপের উত্থান। যেখানে মানুষ মানুষের স্পর্শ ভুলে যাচ্ছিল, পথে স্পর্শ বাঁচিয়ে চলাই অভ্যেস হয়ে যাচ্ছিল, সেখানে বিশ্বকাপের ‘গো-ও-ও-ও-ল’ বলে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরাটা আমার কাছে খানিক স্পর্শ জয়ের আনন্দ বয়ে আনছিল।

অতিমারিতে ‘আইসোলেশন’, ‘কোয়রান্টিন’, মুখের একাংশ ঢেকে বেরোনো নিয়ে আমরা যখন নাস্তানাবুদ, ঠিক তখনই ইরানের মেয়েরা মনে করিয়ে দিলেন এই আরোপিত আড়ালের জেলখানায় চিরকালই বন্দি ছিলেন তাঁরা। ঠিক করে হিজাব না পরায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছরের তরুণী আমিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয় সেখানে। যার প্রতিবাদে পথে নামেন ইরানের মেয়েরা। তাঁদের স্লোগান হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’। ৪৪৮টি প্রাণের বিনিময়ে প্রতিবাদ অবশেষে দানা বাঁধে।

তেমনই ব্রাজ়িলে দানা বাঁধে বামপন্থার জয়ের আনন্দ। মাত্র তিন বছরের মধ্যে কয়েদি থেকে সরাসরি প্রেসিডেন্ট। এমনই লুলা ডি সিলভার কাহিনি! রাজনৈতিক অন্ধকার দেখেছে ভারত বা পশ্চিমবঙ্গও। দেশ জুড়ে নেমেছে ধর্মীয় অন্ধকার। শ্রেণি, জাত, ধর্মের নিরিখে হিংসা আর বৈষম্য দেশে ক্রমবর্ধমান! অন্য দিকে, রাজ্য জুড়ে এসেছে শিক্ষার অন্ধকার। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির কারণে বাসা বেঁধেছে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি তীব্র অবিশ্বাস।

এই দুইয়ের মাঝে হঠাৎ রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কি কোনও নতুন রাজনৈতিক আঙ্গিকের ঘোষণা? বহু দিন পরে কোনও নেতা হেঁটে সারা দেশ ঘুরছেন। ভারতের সঙ্গে এই মাটির স্পর্শের কোথাও কি কোনও যোগাযোগ নেই?

ব্যক্তিগত ভাবে আমার তেমন কিছু বদলায়নি। তবে ঘন ঘন কফি খাওয়া ছেড়েছি। অতিমারির পরে শারীরচর্চায় মন দিয়েছি। কবিতার সঙ্গে ভালবাসা ক্রমে জটিল আকার নিয়েছে। চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে প্রাপ্য পারিশ্রমিক চাইতে শিখেছি। আর শিখেছি অকারণে হাসা। ভেবে দেখেছি, মানুষ সারা দিনে অসংখ্য বার অকারণে হাসে। কারণ, কোন অভিব্যক্তি ঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলবে মনের অবস্থা, তা অজানা। তাই ভয়ঙ্কর অতিমারির সময়েও মানুষ নানা মজার কথা ভাগ করে হাসতে শিখেছে। মানুষ মার খেতে খেতে হাসে, খিদে চাপতে চাপতে হাসে, দৈনন্দিন অবক্ষয়ে ডুবতে ডুবতে হাসে। সেই হাসিরই সুর ধরে আসে বছর শেষের আর বছর শুরুর আনন্দোৎসব। হয়তো বদলাবে না কিছু। কিন্তু যদি বদলায়? এই ‘যদি’কে আঁকড়েই আরও একটা বছরের দিকে এগিয়ে চলেছি।

জানলায় একটা বসন্তবৌরি আসত। অনেক দিন তাকে দেখি না বলে মনখারাপ ছিল। এ বছরেরশেষে দেখছি, নতুন এক পাখির আগমন ঘটেছে। কুসুম হলুদ গা, কালো ডোরা। নাম জানি না। তাই সে পাখির নাম আপাতত আমার কাছে ‘নতুন বছর’। দেখি, সে ডানা মেলে কোন পথে যায়।

throwback New Year 2023
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy