উৎসবের আবহে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুটে বেসরকারি বাস উধাও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করছিলেন যাত্রীদের বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সকালের দিকে যদি বা বাস মিলছে, সন্ধ্যার পর থেকে হাপিত্যেশ অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। আর রাত বাড়লে তো কথাই নেই। তবে এরই মধ্যে যাত্রীদের জন্য আশার বাণী শুনিয়েছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের আশ্বাস, সামনে ছটপুজোর ছুটি থাকলেও আগামী সপ্তাহ থেকে আরও বেশি সংখ্যায় সরকারি বাস রাস্তায় নামবে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ঠাকুরপুকুর, গড়িয়া-সহ বেশ কিছু রুটে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাস ফের চলবে। পাশাপাশি, বেসরকারি বাসের কিছু রুটে শর্তসাপেক্ষে সরকারি বাস ভাড়া দিয়ে চালানোর পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চলছে।
কারণ হিসাবে আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পুজোর ভিড়ে আয় বেড়েছে সরকারি পরিবহণ নিগমের। তাতে কিছুটা হলেও সুরাহা হয়েছে জ্বালানি সমস্যার। পুজোর কয়েক মাস আগেও সরকারি বাস চালিয়ে যেখানে দৈনিক ১৮ থেকে২০ লক্ষ টাকা আয় করতে নাজেহাল হতে হচ্ছিল, সেখানে এখন দৈনিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকায়।
পুজোয় বাস চালিয়ে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের— ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকার বেশি। সিটিসি বা কলকাতা ট্রাম কোম্পানির আয় প্রায় ৪২ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। রাজ্য পরিবহণ নিগমের আয় প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, এই তিন সংস্থা মিলে পুজোর সময়ে সাধারণ রুটে বাস চালিয়ে মোট আয়ের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও, পুজো পরিক্রমা থেকে রাজ্য পরিবহণ নিগমের আয় হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। সিটিসির আয় সাড়ে ছ’লক্ষ। সব মিলিয়ে কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন রুটে বাস চালিয়ে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার কাছাকাছি আয় হয়েছে তিন সরকারি সংস্থার। তাই প্রয়োজনীয়মেরামতি করে আরও কিছু বাস রাস্তায় নামাতে পারলে আয়ের পরিমাণ আরও খানিকটা বাড়তে পারে বলেই মত দফতরের আধিকারিকদের।
দফতর সূত্রের খবর, সিটিসির বাসের সংখ্যা বর্তমানে বেশ কম। প্রায় ৩০০টি বাসের মধ্যে মাত্র ৯০টি সচল রয়েছে। অচল বাসগুলির মেরামতির জন্য বরাদ্দেরও অভাব রয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে গঙ্গাসাগর মেলার আগে ওই সব বাস সারানো না হলে ফের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা আধিকারিকদের।
তবে বাস ভাড়া থেকে আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবহণ নিগমের তৎপরতা আগের তুলনায় বেড়েছে। আধিকারিকদের কথায়, ‘‘যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে বাস দিতে না পারলে ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে ষোলো আনা। শীতের সময়ে মানুষ বিভিন্ন উৎসব, মেলা ছাড়াও ইকো পার্ক, চিড়িয়াখানার মতো দ্রষ্টব্য স্থানগুলিতে ভিড় করেন। ফলে ওই সব জায়গায় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বাসের ব্যবস্থাও করতে হবে।’’