বের করে আনা হচ্ছে প্রৌঢ়ার দেহ। নিজস্ব চিত্র।
তছনছ হওয়ার ছবি ছড়িয়ে রয়েছে একতলার সারা ঘর জুড়েই। খোলা পড়ে আছে আলমারি, বিছানায় ছড়ানো জিনিসপত্রের মধ্যেই লুটিয়ে রয়েছেন অচৈতন্য প্রৌঢ়া। বাইরে কৌতুহলী বাসিন্দাদের ভিড় ঠেলে ঢুকল পুলিশ এবং লালবাজারের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা। আসে স্নিফার ডগ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই প্রৌঢ়াকে।
শুক্রবার সকালে তালতলার ডক্টরস লেনে বছর ষাটের প্রৌঢ়ার খুন হওয়ার ঘটনায় ফের নতুন করে সামনে এল শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তার অভাবের চিত্রটা। পুলিশ জানিয়েছে, ডক্টরস লেনের ওই পুরনো দোতলা বাড়ির একতলায় একাই থাকতেন আলো মজুমদার। সম্প্রতি ছেলে চন্দন মজুমদার চাকরিসূত্রে ঝাড়খন্ড চলে যাওয়ায় একাই থাকতেন আলোদেবী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই এই বাড়িতে নিজে প্রায় সমস্ত কাজ করতেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপরেও তাঁকে স্থানীয় ব্যাঙ্কে যেতে দেখা গিয়েছে। শুক্রবার সকালে সেই বৃদ্ধারই খুন হওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই নানান প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, বালিশ বা ওই জাতীয় কিছু চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে আলোদেবীকে। কিন্তু কি কারণে এই খুন? ছড়ানো ছেটনো অবস্থায় আলমারি খোলা দেখে পুলিশের অনুমান লুঠের উদ্দেশ্যেই এই খুন।
বাড়ির পরিচারিকাদের দরজা খুলে দেওয়ার সুবিধার জন্য রাতে একতলার একটি ঘরেই থাকতেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতেও তাকে দরজা বন্ধ করতে দেখা যায়। সকালে মৃতার ভাই লক্ষ করেন, দরজা খোলা, উঁকি দিয়ে ভিতরে দেখেন, ঘর এলোমেলো। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধার হাতে কানে বা গলায় সোনার গয়না ছিল। তা হলে কী লুঠ করতেই এসেছিল দুষ্কৃতীরা? আততায়ীরা বৃদ্ধার পূর্ব পরিচিত বলেই অনুমান পুলিশের। এমনকী আততায়ী রাতে ওই ঘরেই ছিল অনুমান পুলিশের। কিন্তু ঘন জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় প্রায় গায়ে গায়ে লাগানো বাড়ির কেউই কোনও চিত্কার বা আওয়াজ শুনতে পাননি বলেই জানিয়েছেন।
সম্প্রতি পাড়ার একটি গোলমালের জেরে এলাকায় বেশ কিছু পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেই পুলিশি প্রহরাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ঘটে গিয়েছে এই খুন। ভাই মোহনলাল নির্মাণকাজের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুবাদে বাড়িতে বিভিন্ন মিস্ত্রিদের যাতায়াত লেগেই থাকত। তারাই কেউ এই খুনের সঙ্গে জড়িত কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। বছরের গোড়াতেই কসবায় বৃদ্ধাখুনে গ্রেফতার হয় তারই জামাই। গার্ডনরিচে বৃদ্ধা খুনের কিনারা হয়নি এখনও। এরই মধ্যে তালতলার এই ঘটনায় শহরে প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের নিরাপত্তাহীনতায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন:
হিন্দ সিনেমার সামনে প্রকাশ্যে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে খুন যুবককে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy