Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

তোমার বন্ধুদের (কফি হাউস এবং ফিল্ম সোসাইটির) হোটেলে একদিন ডাকো। যাওয়ার আগে একদিন আড্ডা হোক।’ হরিসাধন দাশগুপ্তকে বলেছিলেন জঁ রেনোয়া। দিকপাল ফরাসি চলচ্চিত্রকার। ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পী পিয়ের-অগুস্ত রেনোয়া-র পুত্র। বসবাস আমেরিকা আর ফ্রান্সে, বলতেন অবশ্য ‘আই অ্যাম আ সিটিজেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড অব সিনেমা।’ ১৯৪৯-এ কলকাতায় এলেন ‘দ্য রিভার’ ছবির শুটিং করতে, সঙ্গে স্ত্রী দিদো, আর ভাইপো ক্লদ রেনোয়া, ক্যামেরাম্যান।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৫ ০১:২৪
ছবি দুটি অরুণকুমার রায়ের সৌজন্যে।

ছবি দুটি অরুণকুমার রায়ের সৌজন্যে।

‘এক চিত্রকরের চোখ দিয়ে দেখছেন’

তোমার বন্ধুদের (কফি হাউস এবং ফিল্ম সোসাইটির) হোটেলে একদিন ডাকো। যাওয়ার আগে একদিন আড্ডা হোক।’ হরিসাধন দাশগুপ্তকে বলেছিলেন জঁ রেনোয়া। দিকপাল ফরাসি চলচ্চিত্রকার। ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পী পিয়ের-অগুস্ত রেনোয়া-র পুত্র। বসবাস আমেরিকা আর ফ্রান্সে, বলতেন অবশ্য ‘আই অ্যাম আ সিটিজেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড অব সিনেমা।’ ১৯৪৯-এ কলকাতায় এলেন ‘দ্য রিভার’ ছবির শুটিং করতে, সঙ্গে স্ত্রী দিদো, আর ভাইপো ক্লদ রেনোয়া, ক্যামেরাম্যান। প্রোডাকশন ডিজাইনার ইউজিন লোরিয়ে (চ্যাপলিনের লাইমলাইট-এরও প্রোডাকশন ডিজাইনার), তাঁর অধীনেই কাজ জুটল বংশী চন্দ্রগুপ্তের, আর রেনোয়ার সহকারীর কাজ পেলেন হরিসাধন, তাঁর স্মৃতিলেখ-তেই আড্ডার বিবরণ: ‘আমি সেদিন একটা বড় হাঁড়ি করে রসগোল্লা নিয়ে গিয়েছিলাম। রেনোয়া সাহেব তো দেখে পাগল... মাটির হাঁড়ি নিয়ে বিভোর— উনি যেন ভারতবর্ষকে আবিষ্কার করছেন। ওঁর নিজের জীবন শুরু হয়েছিল potter হিসেবে।... ওঁর জন্য কালীঘাট, জগুবাজার ঘুরে ঘুরে প্রচুর মাটির কলসি, হাঁড়ি, জালা, কাঁসার বাটি, থালা, সব কিনে বাক্সবন্দি করে ওঁর হলিউডের ঠিকানায় পাঠাতে হয়েছিল।’ (চলচ্চিত্র, মানুষ ও হরিসাধন দাশগুপ্ত। অরুণকুমার রায় সম্পাদিত)। অরুণবাবুর বইটিতে হরিসাধনের আরও স্মৃতি, রেনোয়াকে ঘিরে, তাঁর সখ্য কমলকুমার মজুমদারের সঙ্গে, বাগবাজারে গঙ্গার পাড়ে যামিনী রায়ের বাড়িতে গিয়ে ছবি দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে ওঠা, কত কী। ব্যারাকপুরে হুগলি নদীর ধারে সেট ফেলা হয়েছিল ‘দ্য রিভার’-এর, সেখানেই ক্লদ, বংশী ও সত্যজিৎ রায় (বাঁ দিকের ছবিতে), আর (মাঝে) রেনোয়া স্বয়ং। লোকেশন বাছতে যেতেন রেনোয়া, বার কয়েক তাঁর সঙ্গী ছিলেন সত্যজিৎ, তাঁর স্মৃতি: ‘কুঁড়েঘর, কচুরিপানায় ভর্তি ডোবার ধারে কলাগাছের ঝাড়— এ-সব দৃশ্য এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন... বুঝতাম যে, মস্ত এক চিত্রকরের চোখ দিয়ে দেখছেন...।’ (অপুর পাঁচালি। আনন্দ)। সুখবর, আসন্ন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে রেনোয়ার এই কলকাতা আগমন নিয়ে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন হচ্ছে, তাঁর পরিচালিত এক গুচ্ছ ছবিও দেখানো হবে উৎসবে, শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে।

ট্রাম-সাহিত্য

‘কয়েকটি আদিম সর্পিণীর সহোদরার মতো/ এই যে ট্রামের লাইন ছড়িয়ে আছে/পায়ের তলে, সমস্ত শরীরের রক্তে বিষাক্ত বিষাদ স্পর্শ/ অনুভব করে হাঁটছি আমি।’ ট্রামলাইন জীবনানন্দের কবিতায় বার বার ফিরে এসেছে। ট্রামলাইন ধরে হাঁটতে গিয়েই দুর্ঘটনায় তাঁর চলে যাওয়া। বাংলা কবিতাকে গ্রাম থেকে কলকাতায় এনেছিলেন কবি। সঙ্গে কলকাতার ঐশ্বর্য ট্রামকেও। অমিয় চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় এসেছে ট্রাম। যখন বাকি সব বাহন ঘুমিয়ে থাকে তখন সে পাড়ার প্রৌঢ় বা প্রৌঢ়াকে পৌঁছে দিত গঙ্গার ঘাটে। সেই ট্রামকেই আরও একবার ফিরে দেখা। ‘লোকসখা’ পত্রিকার (সম্পা: মৃত্যুঞ্জয় সেন) শারদীয় সংখ্যার বিষয়: বাংলা সাহিত্যে ট্রাম। রয়েছে ট্রাম নিয়ে নানা নিবন্ধ। বিশ্ব-মানচিত্রে ট্রাম, ট্রামের গায়ে বিজ্ঞাপন, কলকাতার ট্রাম। সঙ্গে কাব্যনাট্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, সবই ট্রামকেন্দ্রিক।

বাল্মীকি প্রতিভা

‘তেতলার ছাদের উপর পাল খাটাইয়া স্টেজ বাঁধিয়া বাল্মীকি-প্রতিভার অভিনয় হইল৷ আমি সাজিয়াছিলাম বাল্মীকি৷ আমার ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রতিভা সরস্বতী সাজিয়াছিল৷ বাল্মীকি-প্রতিভা নামের মধ্যে সেই ইতিহাসটুকু রহিয়া গিয়াছে৷’ রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতি-তে লিখেছিলেন৷ সেই আদি ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র প্রথম স্বরলিপিও করেন হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা প্রতিভা দেবী৷ সেই স্বরলিপি (সটীক পাঠ সম্পাদনা: অরুণকুমার বসু) এবং সেই আদি ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র গীতরূপ এ বার প্রকাশিত হল বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ থেকে৷ ১৮৮১-তে বাল্মীকি-প্রতিভা প্রথম প্রকাশিত হয়৷ এখন দ্বিতীয় সংস্করণটি (১৮৮৬) প্রচলিত৷ প্রথম সংস্করণের ২৬টি গান থেকে একটি বাদ গিয়েছিল এখানে, যুক্ত হয়েছিল ২৯টি, যার ন’টি ‘কালমৃগয়া’ থেকে নেওয়া৷ প্রথম সংস্করণটি গীতরূপের দিক থেকে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল৷ পরিকল্পনা ও গবেষণায় যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়৷ আদি স্বরলিপির পাঠ এবং তা অবলম্বন করে বিশ্বভারতী সংগীতভবনের ছাত্রছাত্রী শিক্ষকদের গীত-অভিনয় দুটি সিডিতে ধরা রইল।

সুবিনয় স্মরণ

কলকাতার কলেজ ছেড়ে রসায়ন পড়ার জন্য তরুণ গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। সেখানে রসায়ন পড়াতেন সঙ্গীতভবনের অধ্যক্ষ শৈলজারঞ্জন মজুমদার। সেই তরুণ ধরা পড়ে গেলেন জহুরির চোখে। শৈলজারঞ্জন নতুন ছাত্র সুবিনয় রায়কে নিয়ে গেলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। রবীন্দ্রনাথ বললেন, তাঁকে বর্ষামঙ্গলের মহড়ায় নিয়ে নিতে। বদলে গেল জীবন। শৈলজারঞ্জন মন্তব্য করেছিলেন ‘আমার সঙ্গীত শিক্ষণ যাঁদের মধ্যে সার্থক হয়ে উঠেছে সুবিনয় তাঁদের পুরোধা।’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সেই শিল্পী সুবিনয় রায়ের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে ‘কথা ও সুর’। ৫ নভেম্বর আইসিসিআর-এ সন্ধে ছ’টায় অনুষ্ঠিত হবে আলেখ্যগীতি, সুবিনয় রায়ের গান ‘অনন্ত আনন্দধারা’ এবং ‘সুন্দর হৃদিরঞ্জন’ শিরোনামে সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায় গাইবেন রবীন্দ্রগান। পর দিন এখানেই সৃষ্টি পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণে ও বরণে সুবিনয় রায়’। স্মৃতিচারণে জয়শ্রী রায়, দীপক রুদ্র, পংকজ সাহা, অভিরূপ গুহঠাকুরতা। গানে তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, নবনীতা সেন, শান্তনু দত্ত প্রমুখ।

জন্মদিনে

‘‘তখনকার দিনে বাংলাদেশে বাস্তববাদী ছবি মোটেই হত না।... চলচ্চিত্রে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর মধ্যবিত্তের জীবন-যন্ত্রণার এটিই প্রথম বস্তুনিষ্ঠ শিল্পরূপ। ‘এক টুকরো নিশ্চিন্ততা’র সন্ধানে এক দৃঢ়-প্রত্যয় নাগরিকের জীবনপথ পরিক্রমা এর বিষয়বস্তু।’’ নিজের রচিত ও নির্দেশিত ‘নাগরিক’ (১৯৫২-’৫৩) ছবিটি সম্পর্কে বলেছেন ঋত্বিক (চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরো কিছু। ঋত্বিককুমার ঘটক। দে’জ)। তাঁর ৯০ বছর পূর্তির জন্মদিনে, ৪ নভেম্বর বিকেল ৫টায় আইসিসিআর-এ দেখানো হবে ছবিটি। সঙ্গে তাঁর দু’টি তথ্যচিত্রও— ‘আমার লেনিন’ ও ‘দুর্বার গতি পদ্মা’। চেন্নাইয়ের চলচ্চিত্র-ব্যক্তিত্ব শাজি সে সন্ধ্যায় বলবেন ‘দক্ষিণ ভারতীয় অন্যধারার ছবিতে ঋত্বিক ঘটকের প্রভাব’ নিয়ে। ঋত্বিকের ইংরেজি প্রবন্ধ সংকলন সিনেমা অ্যান্ড আই-ও(ঋত্বিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও ধ্যানবিন্দু) পুনঃপ্রকাশিত হবে। দেখানো হবে ঋত্বিককে নিয়ে নবীন পরিচালক সদীপ ভট্টাচার্যের ‘ঋত্বিক কাব্য’। আয়োজনে সিনে সেন্ট্রাল ও ঋত্বিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।

লালন-কন্যা

গুণমুগ্ধদের কাছে তিনি লালন কন্যা। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’, ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ তাঁকে দিয়েছে দেশ বিদেশের সম্মান। তিনি বাংলাদেশের শিল্পী ফরিদা পারভিন। ১৯৬৮-তে রাজশাহি বেতারে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে জনপ্রিয়তা পান লালন গানে। পেয়েছেন নানা পুরস্কার, ‘একুশে পদক’। শিল্পীকে ৩ নভেম্বর সন্ধে পাঁচটায় আইসিসিআর-এ সংবর্ধনা জানাবে কলকাতার লোকসঙ্গীতের দল ‘বাহিরানা’। লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠানে মেয়েদের গানের দল ‘মাদল’, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার-এর আবাসিকদের দল মুক্তবেড়ি ও বাহিরানা। সামগ্রিক পরিকল্পনায় তপন রায়।

প্রাণ ভরিয়ে

কিছুটা আড়ষ্ট, আর ভয়ে গুটিয়ে থাকা। আত্মবিশ্বাস প্রায় তলানিতে। উচ্ছ্বলতার লেশমাত্র নেই। দমদমের অনাথ আশ্রম ‘আশিয়ানা’র কচিকাঁচাদের নাচ শেখাতে গিয়ে এমনটাই মনে হয়েছিল অনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মাস দুয়েক পর থেকেই ‘দিদি’ হয়ে যান ঘরের মানুষ। ছয় থেকে ষোলোর ছেলেমেয়েরা মন খুলে কথা বলতে শুরু করে। গত আট মাস ওদের নাচ শেখাচ্ছেন অনুশ্রী। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনে ওদের একটা নিজস্ব জায়গা দিতেই এই প্রচেষ্টা। ৭ নভেম্বর শিশির মঞ্চে বিকেল ৫টায় অনুশ্রীর নৃত্যসংস্থা রিদমস্কেপ-এর সঙ্গে ‘আশিয়ানা’র সদস্যরা এক সঙ্গে নাচবে। ‘নির্বাণ ২০১৫’-য় মোমবাতি হাতে ‘প্রাণ ভরিয়ে দিশা হরিয়ে...’ গানটির সঙ্গে জীবনে প্রথম বার মঞ্চ ভরিয়ে তুলবে ২০ জন শিল্পী।

লোকরঙ্গ

‘শীত-শুরুতে শহরে নাটক-উৎসব। কসবা অর্ঘ্য-র ‘লোকরঙ্গ ২০১৫’ সাজানো দেশবিদেশের নাটক দিয়ে, দু’পর্বের উৎসবের প্রথম ভাগ ৫-৮ নভেম্বর, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছো, রায়বেশের সঙ্গে থাকছে একটি কন্নড় লোকনাটকও। মহীশূর নটনা প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশক অর্ঘ্য-র কর্ণধার মণীশ মিত্র। পরের তিন দিন ন’টি নাটক— ‘ম্যাকবেথ বাদ্য’ সহ অর্ঘ্যর সাম্প্রতিক প্রযোজনাগুলোর সঙ্গে বহু দিন পর আবারও ‘ঊরুভঙ্গম’। ৭ নভেম্বর কাটবে ‘শেক্‌সপিয়রের সাথে’, আছে দিল্লির বোস স্টুডিয়ো-র হিন্দি নাটক ‘ফাউস্ট’ আর অবশ্য-দ্রষ্টব্য ‘ম্যাক বাইক টেক রান’। লন্ডনের কয়েন স্টুডিয়ো-র নির্দেশক অ্যাডাম বুরাক-এর ‘হ্যামলেট’-এ তিনটি মোটে চরিত্র, বিশ্বের বহু শহর ঘুরে এই নাটক আসছে কলকাতার মঞ্চে। আসছেন পোলিশ নাট্যকার আর্তুর গ্রাবোস্কি, আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘তিয়েট্‌র’-এর হয়ে পুরো উৎসবের বয়ান লিখবেন, শেষ দিনে আইসিসিআর-এ বলবেন মণীশের নাট্যকৃতি নিয়েও।

সুচেতনা

শৈলজারঞ্জন মজুমদার কোনও এক দোলের সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে পরিবেশন করিয়েছিলেন ভানুসিংহের পদাবলী। পরে কলকাতায় ভানুসিংহের গানগুলোর সঙ্গে আরও কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত, ভাগবতের দুটি শ্লোক, বৃন্দাবন বন্দনা যুক্ত করে ‘শোন কে বাজায়’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন। নাচের জন্য তালিম দিয়েছিলেন পূর্ণিমা ঘোষকে। পূর্ণিমার নৃত্য পরিচালনায় ‘সুচেতনা’ পর্ণশ্রী এই অনুষ্ঠানটি আবার মঞ্চস্থ করবে ৫ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় রবীন্দ্রসদনে। আশিস ভট্টাচার্যের একক সঙ্গীত পরিবেশন ও পলি গুহর নাচ ছাড়াও এ দিন প্রকাশিত হবে শৈলজারঞ্জনের ছাত্রী রানু চৌধুরী সম্পাদিত একটি বই, যেখানে স্মৃতিচারণ ছাড়াও থাকছে আচার্যের স্বহস্তকৃত কয়েকটি স্বরলিপি।

বড় তাড়াতাড়ি

কে  যেন কিছু হঠাৎ করে দেবে/ কে যেন কিছু হঠাৎ কেড়ে নেবে’— এ ভাবেই পরিবার বন্ধুবান্ধব অভিনয় মঞ্চ ক্যামেরা ছাড়িয়ে মধ্যরাত্রির কালস্রোত নিমেষে স্তব্ধ হয়ে গেল। কার হাতছানিতে পীযূষ কোন দিকশূন্যপুরের দিকে চলে গেলেন। এই ভরা হেমন্তেও বলা যায়— ‘আজ বসন্তের শূন্য হাত’। যে কোনও সান্ধ্য আড্ডায়, আর সেটি যদি হয় কম সংখ্যক লোকের, ঠিক তখনই— ‘ নিশীথে যাইও ফুল বনে’ বা ‘বিরহ বড় ভাল লাগে’ — এক্কেবারে শচীনকত্তার মতো গেয়ে উঠতেন পীযূষ। একই সঙ্গে অবলীলায় মান্না দে, বা কিশোরকুমারের গানও ছিল ওঁর গলায় ঝলমলে। ‘সতেরোই জুলাই’ নাটকে এক তরুণ আইনজীবীর ভূমিকায় মাতিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাকাডেমি-শিশির মঞ্চ চত্বর। তারও আগে ‘আবার যখের ধন’ ধারাবাহিকে তাঁর আবির্ভাব আজ ইতিহাস। সে সময় দূরদর্শন ও সেই ধারাবাহিকের অভিনেতা হিসেবে পীযূষই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ‘যখের ধন’। এক অত্যাশ্চর্য হাসি ছিল পীযূষের সম্পদ। প্রায় বালক-সুলভ। গালিলেও গ্যালিলেই-তে ওঁর অভিনয় বাংলার মানুষ মনে রাখবেন দীর্ঘকাল। আসলে মঞ্চকেই সবচেয়ে ভালবেসেছিলেন পীযূষ। ওঁর উপস্থিতিই ছিল রঙিন। সমস্ত আড্ডায় সহজেই মধ্যমণি হয়ে উঠতেন। তাঁর প্রতিটি দিনই ছিল তরুণ। কিন্তু ওই যে — ‘এ বারের শীতে গৃহ-জঙ্গল ছাড়িয়ে/ক্লান্তি কলুষ তমসার জলে ধুয়ে/যেখানে অজানা রয়েছে আপন নিরালা/কথা দেওয়া আছে যেতে হবে একবার’। সেখানেই বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলেন পীযূষ।

ছবি: সৌরভ দত্ত

আশিতে পা

এক নম্বরের দুষ্টু আর ডানপিটে ছেলে, রাশভারী দাদু চোখে হারান বলে কেউ কিছু বলতে পারে না। ঢাকা বিক্রমপুরের বাইনখাড়া গ্রামের ছেলেটির শৈশব ময়মনসিংহে, পরে কলকাতায় মনোহরপুকুর রোডে। দস্যি ছেলে দুপুরে ঘুমোতে চায় না বলে মা পাশে শুইয়ে পড়ে শোনাতেন মহুয়া, চয়নিকা, পূরবী-র কবিতা। ঠিক ঘুম আসত। বাবাও একনিষ্ঠ পড়ুয়া, বাড়িতে খাটচৌকি শৌখিন জিনিস গোনাগুনতি, বই সর্বত্র। বাবার কর্মসূত্রে কাটিহার, তখন ক্লাস টু। গল্পের বইয়ের নেশা সেই শুরু। তার পর উত্তরবঙ্গ, দেশভাগ-উত্তর অসম, কোচবিহার হয়ে পাকাপাকি কলকাতা। গোলপার্কে মেসে থাকা, কালীঘাটের স্কুলে পড়ানো। ১৯৫৮ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় বেরিয়েছিল গল্প ‘জলতরঙ্গ’, তাঁর কলম লিখে চলেছে আজও। নিজে বলেন, ‘আমি তেমন কোনও অ্যাচিভার নই’, খুদকুঁড়োর সঞ্চয় ‘কয়েকটি গল্প-উপন্যাস এবং কিছু ফিচার’, কিন্তু এ-ও দৃঢ় প্রত্যয়ে জানান, তারা ছপ্পড় ফুঁড়ে আসেনি, খুব সামান্যর জন্যও অনেক লড়াই করতে হয়েছে। ধৈর্য, অধ্যবসায় আর ভালবাসা তাঁর ‘দু-একটা গুণ’, আর বরাবরের সঙ্গী ‘অন্তর্গত একটি গভীর বিষাদও’। এই সব কিছু নিয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আজ পা দিচ্ছেন আশিতে। এমন মহাবৃক্ষের প্রোথিত শিকড় কি অনন্ত ফুলফলপাতার সন্ধান শ্রমসাপেক্ষ বইকী। ‘অশোকনগর’ সাহিত্য পত্রিকা (সম্পা: অভিষেক চক্রবর্তী) সে কাজই করেছে আদরে, ‘শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ৮০’ (অতিথি সম্পা: কিন্নর রায়) বিশেষ সংখ্যায়। আছে তাঁর আত্মকথা, ছবি, সাক্ষাৎকার, আর তাঁর লেখনের বহুবিধ পাঠ। আজ বিকেল ৫টায় ইন্দুমতী সভাগৃহে পত্রিকার দশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সম্মাননা সংখ্যা প্রকাশ ও লেখকের সংবর্ধনা। সম্মাননা বক্তৃতায় অলোকপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy