Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফিরে দেখা

দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল। পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জুন ১৯৬৪ থেকে ২০ জুলাই ১৯৬৪ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল। পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জুন ১৯৬৪ থেকে ২০ জুলাই ১৯৬৪ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০০:১০
Share: Save:


সরষের ফুল
দেখতে চান তো—


‘‘মাছ কেনার আগে
একটু আতর কিনে নিন’’

—কালোবাজারের তেল
কিনা, তাই কালো

সোমবার, ৮ আষাঢ়, ১৩৭১ (১ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) MONDAY, JUNE 22, 1964

৬৫ লক্ষ লোকের রেশন: আজ সোমবার হইতে বৃহত্তর ১৯০৫টি ন্যায্য দোকান মারফতে সরকারী মজুত হইতে বাংলা মিহি চাল সরবরাহ ব্যবস্থা শুরু হইতেছে। এই এলাকার দশ লক্ষ দশ হাজার পারিবারিক রেশন কার্ডে ৬৪ লক্ষ ৯০ হাজার লোককে এক কে জি চাল, দুই কে জি গম দেওয়া হইবে। ক্রেতার পক্ষে চালের সমপরিমাণ গম লওয়া বাধ্যতামূলক। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় সূষ্ঠভাবে রেশন বিক্রয়, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কলিকাতা এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে ব্যাপক পুলিশী ব্যবস্থা করা হইতেছে। কলিকাতায় ৮৮৪টি ন্যায্য মুল্যের দোকানে খাদ্য দপ্তরের কর্মচারীদের সাহায্য করার জন্য ৫২৫ জন পুলিশ অফিসার এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কাজের জন্য তিন হাজার পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা হইয়াছে। পুলিশ অফিসারগণ রবিবারই খাদ্য দপ্তরে রিপোর্ট করিয়াছেন।

মঙ্গলবার, ৯ আষাঢ়, ১৩৭১ (২ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) TUESDAY, JUNE 23, 1964

কলিকাতা পৌরসভা কর্তৃক শতকরা ১০ টাকা হারে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত: কর কাঠামো পুনর্বিবেচনা করিয়া কলিকাতা কর্পোরেশন প্রায় সব ক্ষেত্রেই করের হার বাড়াইয়া দিতেছেন। বর্ধিত করের চাপে বহু মধ্যবিত্ত পরিবার বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছেন। এই নিদারুণ দুর্মূল্যের বাজারে উচু হারে ট্যাক্স যোগাইতে অনেক পরিবারের ভিটা ছাড়া হইবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। এই নূতন অ্যাসেসমেন্টের পুনর্বিবেচনা অনুরোধ জানাইয়া পৌর দপ্তরে অজস্র দরখাস্ত জমা পড়িতেছে। পাহাড়প্রমাণ দরখাস্তের শুনানীর জন্য অফিসারের সংখ্যা বাড়াইবার দাবিও উঠিতেছে। ‘‘জেনারেল রিভ্যালুয়েশন’’ করার জন্য কর্পোরেশন প্রায় ঢালাওভাবেই শতকরা দশ টাকা হারে ট্যাক্স বাড়াইয়া দিতেছেন বলিয়া জানা যায়। সোমবার একজন কাউন্সিলার অভিযোগ করেন যে, বহু জীর্ণ পুরাতন বাড়ীর ক্ষেত্রেও শতকরা দশ টাকা হারে ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রস্তাব হইয়াছে। পুরানো বাড়ীর ডেপ্রিসিয়েশন ধরিয়া মূল্য কম করা উচিত, কিন্তু তাহা করা হয় নাই।


‘‘দেখা দিয়ে লুকালি কোথায়?’

বুধবার, ১০ আযাঢ়, ১৩৭১ (৩ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JUNE 24, 1964

ইলিশের লুকোচুরি: রাজ্য মত্স্য দপ্তরের দুর্ভাগ্য! সুন্দরবন এলাকায় মাতলা ও বিদ্যা নদীতে রূপালী ইলিশের ছড়াছড়ির খবর পাইয়া দপ্তরের ছয়টি মোটরচালিত নৌকা তড়িঘড়ি ছুটিয়াছিল। কিন্তু ইলিশ মাছ যেমন কোন খবর না দিয়া চকিত চমকে দেখা দিয়াছিল, তেমনই আবার অদৃশ্যও হইয়াছে। সরকারী জালে নাকি ইলিশ মাছ ধরা পড়ে নাই। মঙ্গলবার মত্স্য দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, তবে তাঁহারা হাল ছাড়েন নাই। দপ্তরের নৌকাগুলি গোটা বর্ষাকাল ঐ এলাকায় টহল দিয়া বেড়াইবে। ইহা ছাড়া বরানগর এলাকায়ও গঙ্গার ইলিশ ধরিবার জন্যে নৌকা প্রস্তুত রাখা হইয়াছে। তবে এখনও পর্যন্ত জাল ফেলিয়াও মাছ ধরা যায় নাই। মুখপাত্র বলেন, সুন্দরবন এলাকায় ইলিশ মাছের যে আকস্মিক প্রাচুর্য দেখা যায় তেমন নাকি গত সাত বছরের মধ্যে দেখা যায় নাই। সম্ভবত মত্স্যপ্রিয় বাঙ্গালীরই বরাত খারাপ তাই সরকারী নৌকা পৌঁছাতে না পৌছাতেই ইলিশ মাছ কোথায় অদৃশ্য হইয়া গেল কেউ জানে না।

বৃহস্পতিবার, ১১ আষাঢ়, ১৩৭১ (৪ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JUNE 25, 1964

কলাকাতার মহানগরীতে তীব্র জলকষ্ট: বুধবার কলিকাতা কর্পোরেশনের বিশেষ সভায় নগরীর জলকষ্টের এক শোচনীয় চিত্র ফুটিয়া ওঠে। কংগ্রেসী এবং বিরোধী পক্ষের বিভিন্ন পৌরপিতা ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলিতে থাকেন পানীয় জল দূরের কথা বহু এলাকায় অপরিস্রুত জলেরই অভাব, নলকূপও বিকল, বন্টন ব্যবস্থা ত্রুটীপূর্ণ, বিভাগীয় অফিসারেরা নির্বিকার। অনেকে বাড়িতে বাড়িতে জলের মিটার বসানর এবং বে-আইনী জলাধারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। জল সরবরাহ এবং বন্টন ব্যবস্থায় গলদের প্রতিবাদে একজন বিরোধী সদস্য মেয়রের আসনের উদ্দেশ্যে শ্রীকামরাজের নাগরিক সম্বর্ধনার কয়েকটি কার্ড ছুড়িয়া দেন। তিনি বলেন, যে কংগ্রেসী পৌর কর্তৃপক্ষ সব ওয়ার্ডে সমভাবে জল সরবরাহ করিতে পারেন না, এই নিদারুণ জলাভাবের দিনে বে-আইনীভাবে জল মজুত ও ভাগ লইয়া মুনাফাবাজী বন্ধ করিতে যাঁহারা অক্ষম তাঁহাদের সমাজবাদী নেতার নাগরিক সম্বর্ধনানুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। সদস্য মহাশয়ের নাম শ্রীসত্যানন্দ ভট্টাচার্য।

শুক্রবার, ১২ আষাঢ়, ১৩৭১ (৫ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, JUNE 26, 1964

বাংলায় বেকারের সংখ্যা উদ্বেগজনকরূপে বৃদ্ধি: পশ্চিমবঙ্গে বেকারের সংখ্যা উদ্বেগজনকরূপে ফাঁপিয়া উঠিয়াছে। সরকারী হিসাবেই দেখা যায় এই রাজ্যে তালিকাভুক্ত কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সর্বাধিক। ভারতের মোট তালিকাভুক্ত কর্মপ্রার্থীর এক-পঞ্চমাংশই পশ্চিমবঙ্গে। এই রাজ্যে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছাইয়াছে যে, বছরের পর বছর কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নাম লিখাইয়া, এখানে ওখানে হাঁটাহাঁটি ঘোরাঘুরির পর হতাশ যুবকেরা আর কার্ডই রিনিউ করাইতেছেন না। তিন মাসের মধ্যে কার্ড রিনিউ না করাইলে কর্মসংস্থান কেন্দ্রে কার্ড বাতিল হইয়া যায়। এবছর মে মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কর্মসংস্থান কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ লক্ষাধিক কার্ড বাতিল করিয়া দিয়াছেন।


না না, সাদা পোষাকে
গেলেই পুলিস বলে ভাববে।

চ্যারিটি ম্যাচ দেখতে
যাচ্ছেন বুঝি?

—এক্ষুণি গ্রেপ্তার করুন একে,
মুড়ির সঙ্গে তেলেভাজা খেতে চাইছেন

শনিবার, ১৩ আষাঢ়, ১৩৭১ (৬ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JUNE 27, 1964

পৌর কর বৃদ্ধির প্রস্তাবে তীব্র প্রতিবাদ: প্রায় পাইকরী হারে পৌর ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে শুক্রবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক সভার বিভিন্ন সদস্য প্রবল আপত্তি জানান। অতঃপর মেয়রের সহিত একটি বেসরকারী বৈঠকে ব্ষয়টি আলোচনা হইবে বলিয়া ঠিক হয়। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ট্যাক্স বৃদ্ধির সংক্রান্ত সংবাদ ও মন্তব্যের উল্লেখ করিয়া বিরোধী পক্ষের সদস্য শ্রীনরেন সেন বলেন, কর বাড়াইবার বিরুদ্ধে জনসাধাণের মধ্যে যে বিক্ষোভ আছে, সংবাদপত্রে তাহা প্রকাশিত হইয়াছে। তিনি এ সম্পর্কে আলোচনার দাবি জানান। বহু কংগ্রেসী এবং বিরোধী সদস্য তাঁহাকে সমর্থন করেন।

রবিবার, ১৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JUNE 28, 1964

ভূয়া কার্ডের সন্ধানে এবার বাড়ি বাড়ি তল্লাসী: রেশনের দোকানে কার্ড পরীক্ষা করিলে বিপুল পরিমাণ ভূয়া-কার্ড ধরা পরিবে বলিয়া পুলিস যে আশা করিয়াছিল সপ্তাহব্যাপী অভিযানের পরও সে প্রচেষ্টা তেমন সফল হয় নাই। সেজন্য গৃহে গৃহে কার্ড পরীক্ষার এবং ভূয়া কার্ড বাতিলের এক ব্যাপক পরিকল্পনা লওয়া হইয়াছে। আগামী ৬ই জুলাই হইতে খাদ্যদপ্তরের কর্মী, পুলিস এবং জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা বৃহত্তর কলিকাতায় বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়া রেশন কার্ড পরীক্ষা করিবেন বলিয়া জানা যায়। ২২শে জুন হইতে ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত এই দুই সপ্তাহে যেসব রেশন কার্ডে আদৌ কোন চাল বা চিনি লওয়া হয় নাই, সে কার্ডগুলি খাদ্যদপ্তর বাতিল বলিয়া ঘোষণা করিতে পারেন। ঐসব রেশন কার্ড খাদ্যদপ্তর হইতে পুনরায় এনডোর্স করাইয়া লইতে হইবে।

রবিবার, ১৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JUNE 28, 1964

বিড়লা সংগ্রহশালার খনি গ্যালারীর উদ্বোধন: ‘বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার যথার্থ প্রয়োগ ব্যতিত বর্তমান যুগে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভবপর নহে’। —শনিবার বিকালে কলিকাতায় বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহশালার খনি গ্যালারির উদ্বোধন করিয়া কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শ্রীঅশোককুমার সেন ঐরূপ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, খনি শ্রমিকদের মর্যাদা পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহা ছাড়া উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হইতেছে। ফলে একদিকে শুধু যে উত্পাদন বৃদ্ধি পাইয়াছে তাহা নহে, তত্সহ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মদক্ষতাও সমধিক বৃদ্ধি পাইয়াছে। জাতির উন্নয়নের পথে কয়লাশিল্পের একটি বিশিষ্ট ভূমিকা এবং উত্তরোত্তর এই ভুমিকা আরও বৃদ্ধি পাইবে। বিড়লা সংগ্রহশালায় কিউরেটর শ্রী এস কে বাগচী সমবেত সুধীমন্ডলীকে স্বাগত জানান। সংগ্রহশালাটির পূর্ণাঙ্গ রূপদানের উদ্দেশ্যে খনি বিষয়ের এই নূতন গ্যালারিটি স্থাপন করা হইয়াছে। ইহা লইয়া এই সংগ্রহশালায় বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার দযটি বিষয়ের গ্যালারি হইল।

রবিবার, ১৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JUNE 28, 1964

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি বাজেট পেশ: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬৪-৬৫ সালের বাজেটে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা ঘাটতি দেখনো হয়। তবে বর্ষারম্ভে তহবিল ধরিয়া ঘাটতির চূড়ান্ত পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লক্ষ টাকার কিছু উপর। শনিবার সেনেটের সভায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সতীশচন্দ্র ঘোষ ঐ ঘাটতি বাজেট পেশ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমপ্রসারিত কর্মকান্ডের সঙ্গে তাল দিতে বিপুল ব্যায়বৃদ্ধির সম্ভাবনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অধ্যাপক ঘোষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজে ব্যয় ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতেছে। কিন্তু আয়ের ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটিতেছে। আয়ের সূত্রগুলি ক্রমশঃ শুকাইয়া যাইতেছে। ইহাই উদ্বেগের প্রধান কারণ। বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনাকালে কয়েকজন সদস্য ‘শিক্ষা’ ও ‘দর্শন’ বিভাগ দুইটিতে লেকচারার নিয়োগের ব্যাপারে স্বজনপোষণ ও নীতি-বিরুদ্ধ ক্যর্যকলাপের অভিযোগ উত্থাপন করেন। এই সম্পর্কে দুই একজন সদস্যের কঠোর সমালোচনাপূর্ণ বক্তৃতা ছাড়া সর্বক্ষণই এক প্রকার একঘেয়ে আলোচনা চলে।


সমস্যার সমাধান হয়ে গেল স্যার,
সব রেশন কার্ড ভূয়ো বলে
ঘোষণা করে দিয়েছি।

স্মরক ডাক টিকিট কেনা
আর বেচাই আমার
পেশা যে হুজুর

—আমরা মন্ত্রী নই।
আমাদেরকি
ডাকটিকিট বেচছেন?

মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ়, ১৩৭১ (৯ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক), TUESDAY, JUNE 30, 1964

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় নব জাগরণের স্রষ্টা আশুতোষ: সোমবার রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডস্থিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান কলেজ ভবনে স্যার আশুতোষ মুখার্জি জন্মশতবারিষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এইদিন ৭৭নং আশুতোষ মুখার্জি রোডস্থিত স্যার আশুতোষের পৈতৃক ভবনে আশুতোষ মুখার্জি ভারতীয় ভাষা ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করিয়া রাষ্ট্রপতি বলেন, এই ইনস্টিটিউট হইবে মহান শিক্ষাবিদের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত স্মৃতিরক্ষা। স্যার আশুতোষের বহূমুখী প্রতিভা এবং বিরলস কর্মসাধনার উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় নবজাগরণ স্বাধীনতাবোধের বিকাশ এবং দরিদ্রের প্রতি অধিকতর মনোযোগদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশ-মানসকে প্রস্তুত করিয়াছেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।

মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ়, ১৩৭১ (৯ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) TUESDAY, JUNE 30, 1964

তেল চাহিয়া ক্রেতাকুল নাজেহাল: কলাকাতায় তেলের বাজারের হাল বদলাইবার আশু কোন সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে না। সোমবারও তেল তেল করিয়া ক্রেতারা নাজেহাল হইয়াছেন। বাড়তি দরে টিনের তেল অবাধে বিকাইতেচে। দীর্ঘ লাইনের শেষে ন্যায্য দরে এখানে ওখানে সরিষার তেলের নামে যাহা জুটিয়াছে বহু ক্ষেত্রেই তাহা নিকৃষ্ট ধরণের বলিয়া অভিযোগ পাওয়া যায়। সোমবারও চালের বাজারের অবস্থা ভাল ছিল। খোলা বাজারে চালের দেখা পাওয়া গিয়াছে। রথতলায় এই দিন খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট ছয় হাজার বস্তা চাল বিক্রি করা হইয়াছে। এইদিন রথতলায় আট ওয়াগন এবং রামকৃষ্ণপুরে ২৩ ওয়াগন উড়িষ্যার চাল আসিয়াছে: রামকৃষ্ণপুরে ২ ওয়াগন মেদিনীপুরের চাল এবং রথতলায় ২ ওয়াগন পাঞ্জাবের খুদও আমদানি হয়। চলতি সপ্তাহে রেশন দোকানে পরিবারের কার্ড পরীক্ষা করিয়া কোন কার্ড পরিবারের লোক সংখ্যা অপেক্ষা বেশী লোক দেখান থাকিলে তাহা সঙ্গে সঙ্গে কমাইয়া দিবার একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করা হইয়াছে বলিয়া জানা গেল।

বুধবার, ১৭ আষাঢ়, ১৩৭১ (১০ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 1, 1964

বেলেঘাটা থানা এলাকায় পুলিসী জুলুম: গত সোমবার রাত্রে বেলেঘাটা থানার বারোয়ারীতলা রোড ও ইস্ট কুলিয়া রোডের কাছে এক হাঙ্গামা সম্পর্কে পুলিস সেখানে গিয়া কতকগুলি গৃহের মধ্যে ঢুকিয়া নিরীহ ব্যক্তিদের উপর নির্বিচারে মারপিট করে বলিয়া অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। অভিযোগে আরও প্রকাশ, দুইজন ভদ্রমহিলাও এই সময় পুলিসের হাতে নিগৃহীত হন। হাঙ্গামা সম্পর্কে পুলিস তিনজন ছাত্রসহ ১১জন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ হইতে এইরূপ অভিযোগ করা হয় যে, ঐদিন রাত্রে উল্লিখিত এলাকায় ফুটবল খেলার ব্যাপারে দুইদল ছেলের মধ্যে বচসা হয়। ইহার কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে পুলিস হাজির হয়। কিন্তু ঐ সময় ঘটনাস্থলে বিবাদমান কাহাকেও পুলিস পায় না। তখন পুলিস ইচ্ছামত রাস্তার পাশের কতগুলি বাড়ীতে ঢুকিয়া দুই-একজন মহিলাসহ নিরীহ ব্যক্তিদের উপর মারধর করে এবং এ সম্পর্কে ১১ জন নিরাপদ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করিয়া লইয়া যায়।


....‘‘বনমহোত্সবে লাগানো যে সব গাছ মারা গেছে ব্যথিতচিত্তে তাদের স্মরণ করে....’’

বুধবার, ১৭ আষাঢ়, ১৩৭১ (১০ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 1, 1964

বিধান রায় শিশু হাসপাতাল: নারকেলডাঙ্গা মেন রোডে প্রস্তাবিত বিধানচন্দ্র শিশু হাসপাতাল ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রাথমিক ব্যবস্থাদি সম্পন্ন হইয়াছে। মূল ভবনটি তৈয়ারীর কাজ শুরু করিতে কিছু বিলম্ব থাকিলেও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের বাসগৃহের কাজ আরম্ভ হইবে বলিয়া আশা করা যায়। স্বর্গত মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিবসের প্রাক্কালে বি সি রায় মেমোরিয়াল কমিটির পক্ষ হইতে উহার সেক্রেটারি শ্রীঅতুল ঘোষ মঙ্গলবার তাঁহার বার্ষিক রিপোর্ট ইহা প্রকাশ করিতেছেন। শ্রী ঘোষ জানাইয়াছেন যে— গত অক্টোবর মাসে কলিকাতা কর্পোরেশন এই প্রস্তাবিত হাসপাতালের নয়া অনুমোদন করেন। মূল ভবনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় ডিসেম্বরে। ঐ মাসেই নির্মাণ ব্যাপারে এক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু জানুয়ারী মাসে প্রারম্ভিক কাজ হিসাবে মাটি খনন সুরু হইলে দেখা যায় ওখানে জমির অবস্থা ভাল নয়। শীঘ্রই জমি পরীক্ষার চুড়ান্ত ফলাফল পাইবার ও আর সি সি পাইল সংক্রান্ত টেন্ডার চূড়ান্ত হইবার সম্ভাবনা আছে।

বৃহস্পতিবার, ১৮ আষাঢ়, ১৩৭১ (১১ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JULY 2, 1964

কলিকাতায় ইউনিট ট্রাষ্ট পরিকল্পনার উদ্বোধন: একশত টাকার বিনিময়ে ইউনিট ট্রাস্টের দশটি ইউনিট ক্রয় করিয়া পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জি বুধবার কলিকাতায় ইউনিট ট্রাস্ট স্কিমের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে শ্রামিখার্জি বলেন, নবীন বাংলায় রূপকার কর্মবীর বিধানচন্দ্রের জন্ম এবং মৃত্যু দিবসে এই জনকল্যাণ স্কিমের প্রবর্তন— ঘটনাটি আকস্মিক হইলেও তাত্পর্যপূর্ণ। ইউনিট ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার মহত্ এবং বিচক্ষণ পরিকল্পনার প্রশংসা করিয়া শ্রীমুখার্জি বলেন, জনকল্যাণকামী রাস্ট্রের পক্ষে এমন একটি ট্রাস্ট আপরিহার্য। ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পক্ষে অর্থসঞ্চয় অত্যাবশ্যক হইলেও সহজ নয়। দীর্ঘমেয়াদী লগ্নী মধ্যবিত্তেক পক্ষে কল্পনাতীত। কেন না, কখন তাঁহার নহগদ টাকার প্রয়োজন হইবে তা সে নিজেও জানে না।

শনিবার, ২০ আষাঢ়, ১৩৩১ (১৩ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JULY 4, 1964

সরিষার তেলে ভেজাল: শুক্রবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক সভায় একজন কংগ্রেসী সদস্য অভিযোগ করেন যে, কলিকাতায় সরিষার তেলে দারুণ ভেজাল দেওয়া হইতেছে ইহার ফলে নগরীতে অন্ধত্বের প্রসার ও মহামারীর আশঙ্কা আছে। এই দিনের সভায় জনস্বার্থে সংক্রান্ত আলোচনার সময় অল্ডারম্যান শ্রীঅনিল চ্যাটার্জি ঐ অভিযোগ উত্থাপন করিয়া বলেন যে, সরিষার তেলের সঙ্গে ‘টোবাকো অয়েল’, ‘ক্যাপক অয়েল প্রভৃতি মিশান’ হইতেছে। এজন্য ‘টোবাকো অয়েলের’ চাহিদা সম্প্রতি এত বৃদ্ধি পাইয়াছে যে এক কুউন্টাল ঐ তেলের দাম ১৪০ টাকা হইতে ১৭০ টাকা হইয়াছে। তিনি বিষয়টি সম্বন্ধে কর্পোরেশন স্বাস্থ্য দপ্তরকে অবিলম্বে তত্পর হইতে অনুরোধ জানান।

রবিবার, ২১ আঘাঢ়, ১৩৭১ (১৪ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JULY 5, 1964

কলিকাতা বন্দরে জাহাজের ভিড়: কলিকাতা বন্দরে ভিড়ের জন্য শনিবার পর্যন্ত চারটি খাদ্যবাহী জাহাজ মাল খালাসের অপেক্ষায় রহিয়াছে। উহাদের তিনটি বন্দরে ঢুকিয়াও ব্যর্থ খালি পায় নাই। অপরটি বন্দরে ভিড়িতে না পারিয়া সাগর মোহনায়ই অপেক্ষা করিতেছে।


ভুল হল স্যার, শতবার্ষিকী উত্সব
নয়, স্মৃতিবার্ষিকী উত্সব।

নুন, চিনি, মশলা,
ক্লোরীণ সব দিয়েছি।

ভয় পাবেন না, এ তেল খেলে
অন্ধদের কোন ক্ষতি হয় না।

সোমবার, ২২ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৫ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) MONDAY, JULY 6 1964

কলকিতার ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তসঙ্কট: রক্তদানে ইচ্ছুক লোকজনের অভাবে কলিকাতার ব্লাড ব্যাঙ্কটি সঙ্কটে পড়িয়াছে। বিভিন্ন গ্রুপের রক্ত যথেষ্ট পরিমাণে মজুত না থাকার দরুন বহু ক্ষেত্রে চাহিদা মত রক্ত দেওয়া দুঃসাধ্য হয়। এমন কি রক্তের ঘাটতির জন্য অনেক প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারও পিছাইয়া দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। প্রকাশ পেশাদার রক্তদাতাদের যখন খুশী রক্ত দেওয়া নিয়ন্ত্রণ করার পর এই সমস্যা আবার বেশ মাথাচাড়া দিয়েছে। ইতিপূর্বে টাকার বিনিময়ে যাহারা ঘন ঘন রক্ত দিয়া নিজেদের স্বাস্থ্য বিপন্ন করিত তাহাদের উপর কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হইয়াই বাধানিষেধ আরোপ করিতে হইয়াছে। তবে মাঝে মাঝে রক্ত দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করিয়া প্রত্যেককে এখন ফটো সহ পরিচয়পত্র দেওয়া হইয়াছে। আর শর্ত আরোপিত হইয়াছে যে—দেড় মাসে একবার এবং বছরে আট বারের বেশী কেহই ঐ ব্যাঙ্কে রক্ত জমা দিতে পারিবে না।

সোমবার, ২২ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৫ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) MONDAY, JULY 6 1964

কলিকাতায় মুষলধারায় বৃষ্টি: শনিবার রাত দুপুর হইতে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত কলিকাতা ও শহরতলীতে মূষলধারায় বৃষ্টি হয়। রবিবার সারাদিম বিচ্ছিন্ন মেঘের আনাগোনার বিরাম ছিল না। সকালে কিছুক্ষণের জন্য থামিলেও আবার দুপুর হইতে বিকাল অবধি মাঝে মাঝেই আকাশ ভাঙিয়া বৃষ্টি নামে। সারাদিনে মোট ৮৮.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একটানা বৃষ্টিতে মহানগরীর যানবাহন চলাচল বিপর্যস্ত হইয়া যায়। জায়গায় জায়গায় বিদ্যুত্ সরবরাহ বানচাল হইয়া যায়। আকাশবাণী কলিকাতার বেতার অনুষঅঠান প্রচারে বেশ কিছুক্ষণ বাধা পড়ে। চিত্তরঞ্জন এভিনিউর সেন লেনের বস্তীতে একটি বাড়ী ধসিয়া যায়। তবে কেহ হতাহত হয় নাই।

বুধবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 8, 1964

খুশিমত বিক্রয় চলিবে না: কলিকাতায় খোলাবাজারে চাউলের সংকটমোচনের জন্য রাজ্যের খাদ্য দপ্তর নূতন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছেন। অতঃপর কোন চাউলের পাইকারই সরাসরি শুধু নিজেদের পছন্দমত খুচরা বিক্রেতাদের নিকট চাউল বেচিতে পারিবেন না। আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহ হইতেই নূতন ব্যবস্থা কার্যকর হইবে। খাদ্যদপ্তর যে-সব খুচরা বিক্রেতাকে পারমিট দিবেন, পাইকারগণকে সেই সকল লোককেই চাউল বিক্রয় করিতে হইবে। খাদ্যদপ্তর এইজন্য খুচরা বিক্রেতাদের একটি নীতন তালিকা প্রণয়ন করিতেছেন। মঙ্গলবার ফ্রি স্কুল স্ট্রীটে খাদ্যদপ্তরে পাইকারী চাউল ব্যবসায়ীদের সহিত সরকারী অফিসারদের যে বৈঠক হয়, খাদ্যদপ্তরের মুখপাত্র সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত জানাইয়া দিয়াছেন বল্য়া প্রকাশ। খাদ্যদপ্তরের পদস্থ কর্মচারীফুড এনফোর্সমেন্ট পুলিশের প্রতিনিধিগণও এই বৈঠকে যোগ দেন।

বুধবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 8, 1964

রসা রোডের উপর নূতন রেল ওভারব্রিজ: টালিগঞ্জে রসা রোডের উপর নূতন রেল ওভারব্রিজের নির্মাণকাজ দ্রূতগতিতে আগাইয়া চলিতেছে। পূর্বরেল কর্তৃপক্ষ আশা করেন আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই এটির নির্মান শেষ হইবে। পূর্ব রেলপথের শিয়াসদহ-বজবজ শাখার বালিগঞ্জ ও কালীঘাট স্টেশনের মধ্যে টালিগঞ্জ রেলপুল নামে আগে ৩০ ফুট চওড়া যে সেতু ছিল রেল কতৃপক্ষ সেটিকে ভাঙ্গিয়া এই ৮০ ফুট চওড়া নীতন সেতুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে এটির নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া হয়। পরিকল্পনামত রসা রোডের (বর্তমান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড ও দেশপ্রাণ শাসমল রোডের সংযোগস্থলে) উপর পুরাতন ৩০ ফুট প্রশস্ত পুলকে ভাঙ্গিয়া উহার পাশে ৪০ ফুট পকরিয়া দুই ভাগে মোট ৮০ ফুট প্রশস্ত নীতন পুল করা হইতেছে।

বুধবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 8, 1964

সত্যজিতের নূতন জয়: চলচ্চিত্রকার শ্রীসত্যজিত্ রায় চতুর্দশ বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান অর্জন করিয়াছেন। ‘‘মহানগর’’ চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনার পুরস্কার পাইলেন। বারোদিন ব্যাপী এই উত্সব আজ সমাপ্ত হইয়াছে। ‘অপুচিত্রত্রয়ের’ স্রষ্টা শ্রীরায় ‘‘মহানগর’’ (কাহিনীকার: নরেন্দ্রনাথ নিত্র) চিত্র মধ্যবিত্ত জীবনের সমস্যা এবং সংঘাত তুলিয়া ধরিয়াছেন। ইতিপূর্বে শ্রীরায়ের ‘পথের পাঁচালী’ এবং ‘অপারাজিত’, যথাক্রমে কান (১৯৫৬) এবং ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবে (১৯৫৭) ভারতের জন্য শ্রেশ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মান বহন করিয়া আনিয়াছিল।


—কলকাতার ম্যাপ নক্সা এসব চেয়েছি,
কলকাতার জল, সরষ্র তেল
তো আনতে বলিনি।

—ড্রেনপাইপ নিয়ে ঝামেলা?
কর্পোরেশনে ধাঙ্গড়দের খবর দে।

বুধবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 8, 1964

সত্যজিতের নূতন জয়: চলচ্চিত্রকার শ্রীসত্যজিত্ রায় চতুর্দশ বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান অর্জন করিয়াছেন। ‘‘মহানগর’’ চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনার পুরস্কার পাইলেন। বারোদিন ব্যাপী এই উত্সব আজ সমাপ্ত হইয়াছে। ‘অপুচিত্রত্রয়ের’ স্রষ্টা শ্রীরায় ‘‘মহানগর’’ (কাহিনীকার: নরেন্দ্রনাথ নিত্র) চিত্র মধ্যবিত্ত জীবনের সমস্যা এবং সংঘাত তুলিয়া ধরিয়াছেন। ইতিপূর্বে শ্রীরায়ের ‘পথের পাঁচালী’ এবং ‘অপারাজিত’, যথাক্রমে কান (১৯৫৬) এবং ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবে (১৯৫৭) ভারতের জন্য শ্রেশ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মান বহন করিয়া আনিয়াছিল।

বৃহস্পতিবার, ২৫ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৮ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JULY 9, 1964

বস্তির ঘরে ঘরে তল্লাসী: ভুয়া কার্ডের সম্ধানে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি হইতে কলিকাতার বস্তি এলাকার ঘরে ঘরে অভিযান শুরু হইবে। এব্যাপারে পুলিশকে সাহায্য করিবেন খাদ্য দপ্তরের কর্মচারী ছাড়া হোমগার্ড এবং স্পেশাল পুলিশবাহিনীর সদস্যরা। শহরের মোট আট শতাধিক ন্যায্য মূল্যের দোকানের মধ্যে প্রায় ৩০০টি বস্তি এলাকায় এবস্থিত। ঐ তিনশত দোকানের প্রত্যেকটির সঙ্গে ৭০০/৮০০ করিয়া পারিবারিক রেশন কার্ড আছে। অর্থাত্ এই তিনশত দোকান হইতে আড়াই লক্ষের মত পরিবার রেশনের চাল গম সংগ্রহ করেন। বুধবার সন্ধ্যায় লালবাজারে পুলিশের সদর-দপ্তরে খাদ্য-দপ্তর, হোমগার্ড এবং স্পেশাল পুলিশের প্রতিনিধিদের সহিত পুলিশ কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে এই অভিযানের কর্মসূচী স্থির হয়। বৈঠক শেষে পুলিশের এখ মুখপাত্র বলেন দুই হইতে আড়াই লক্ষ ঘরে গিয়া প্রতি পরিবারের প্রকৃত জনসংখ্যা নির্ধারণ ‘‘দুরুহ কাজ’’।

বৃহস্পতিবার, ২৫ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৮ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JULY 9, 1964

কলিকাতা পৌরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি: রাজ্য সরকার এক নূতন অর্ডিন্যান্স জারী করিয়া কলিকাতা পৌরসভার ওয়ার্ড ও আসন সংখ্যা বাড়াইয়া ৮০ হইতে ১০০ করার প্রস্তাব করিয়াছেন। আর্ডিন্যান্সটি দুই একদিনের মধ্যেই জারী হইবে বলিয়া নির্ভরযোগ্য মহল হইতে জানা গিয়াছে। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অধিক সংখ্যক প্রতিনিতিধিসম্পন্ন কলিকাতা পৌরসভার পরবর্তী নির্বাচন যাহাতে মার্চ মাসে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হইতে পারে তজ্জন্যই রাজ্য সরকার অর্ডিন্যন্স জারীর ব্যাপারে উদ্যোগী হইয়াছেন। বর্তমানে কলিকাতা পৌরসভার ৮০টি ওয়ার্ডে ৮০ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন। সরকার ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০০ এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যাও অনুরুপ (১০০) করার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়টি পেশ করা হইবে। প্রতিনিধি সংখ্যা বর্ধিত করা এবং ওয়ার্ডের সীমানা পূনর্বিন্যাস সংক্রান্ত বিষয়টি নীতিগতভাবে রাজ্য সরকার মানিয়া লইলেও অর্ডিন্যান্স জারী করার পূর্বে পুনরায় মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার, ২৫ আষাঢ়, ১৩৭১ (১৮ আষাঢ়, ১৮৮৬) THURSDAY, JULY 9, 1964

কলিকাতায় মত্স্য-সরবরাহ বৃদ্ধিকল্পে ৩৮ কোটি টাকার পরিকল্পনা: মত্স্যাশী বাঙালীর জন্য একটি খোসখবর: মাছ আসিতেছে। মাছের ধান্ধায় রাজ্য সরকার গলদঘর্ম। খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই তাই এবার আসরে নামিতেছেন। কলিকাতার মাছ জোগাইবার জন্য কেন্দ্রীয় কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এক বিরাট পরিকল্পনা ফাঁদিয়াছেন। এজন্য ব্যয় হইবে ৩৮ কোটি টাকা। কলিকাতায় বছরে ৪০ হাজার টন মাছ দরকার। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় সম্বত্সর্র চাহিদা মিটিবে। মাছ অবশ্য এখনই মিলিবে না, ধৈর্যধারণ কর্তে হইবে। এই প্রকল্প অনুযায়ী উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও অন্ধ্র প্রদেশে দুই লক্ষ একর পরিমিত এলাকায় মাছের চাষ করা হইবে। স্থানীয় সরবরাহ বাড়াইবার জন্য এইসব এলাকা হইতে কলিকাতার বাজারে মাছ আনা হইবে।


—এ বাড়ীতে জলের অভাব
হবে না, বলেছিলাম কিনা?

না, পাঁপড় ভাজা চাইনি,
কেবল তেল চাই

রবিবার, ২৮ আষাঢ়, ১৩৭১ (২১ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JULY 12, 1964

নিরানন্দ রথযাত্রা উত্সব: উদ্যোগ ছিল, আয়োজনেরও অভাব ছিল না; কিন্তু কলিকাতায় এবারের রথযাত্রা তবুও তেমন জমে নাই। কারণ, এক—বৃষ্টি, দুই—দ্রব্যমূল্য এবং তিন—সরিষার তেলের অভাব। গত কয়েকদিন ধরিয়া কলিকাতায় যে ধারাবর্ষণ চলিতেছিল শনিবারও তার কোন ব্যতায়—হয় নাই। সকাল হইতেও আকাশ মেঘলা এবং প্রায় অবিরাম বারিপাত। রথযাত্রার পক্ষে আশঙ্কিত আবহাওয়া, কিন্তু রথের মেলার পক্ষে বিপর্যয়কর। একঘেয়ে অস্বস্তিকর বৃষ্টিতে এবারের রথযাত্রার ধুমধাম লক্ষণীয়রূপে স্তিমিত ছিল। এবারের অনুষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের প্রভাবও অত্যন্ত স্পশ্ট ছিল। মেলায় দোকানের অভাব ছিল না, দোকানেও পসরার অকুলান ছিল না; কিন্তু ক্রেতাদের আনাগোনায় বিলক্ষণ হ্রাস দেখা যায়। যাহারা আসিয়াছ তাহাদেরও অধিকাংশই দশ দোকানে দর করিয়াছে, কিন্তু বিশেষ কিছু সওদা করে নাই।

বুধবার, ৩১ আষাঢ়, ১৩৭১ (২৪ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 15, 1964

বানতলা জলনিকাশী ব্যবস্থার শঙ্কাজনক আবস্থা: সামান্য বর্ষণেই কলিকাতার পথঘাট জলমগ্ন হইয়া নাগরিক জীবনে যখন প্রায়ই বিপর্যয় দেখা দেয়, সেই সময়ে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বানতলা জলনিকাশী ব্যবস্থা চরম অবস্থায় পৌছিয়েছে। কলিকাতা কর্পোরেশনের বিভাগীয় রিপোর্টেই আশঙ্কা করা হইয়াছে যে, অবিলম্বে প্রতিকার না হইলে সমগ্র জলনিকাশী ব্যবস্থাটিই ভাঙ্গিয়া পড়িবে। কলিকাতার সামগ্রিক জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নতির জন্য মোট ৩৫ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার এক প্রকল্প রচিত হইয়াছে। দীর্ঘ এগার বছর যাবত্ বানতলা (‘‘আউটফল’’) জলনিকাশী ব্য।বস্থা রাজ্য সরকারের নিকট হস্তান্তরের বিষয়ে টালবাহানা করা হইতেচে। ১৯৫৩ সালে ঐ ব্য়বস্থাটি রাজ্য সরকারের হস্তে অর্পণ করিবার প্রস্তাব হয়। কিন্তু ঐ হস্তান্তরের র্তাদি ঠিক করা এবং হস্তান্তরের চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ আজও হয় নাই।


এ বাড়ীতে মাথার ছাদ ভেঙ্গে পড়ার
ভয় নেই, আর ভাড়াও বেশ সস্তা।

টালা-বেলগাছিয়ার
ভবিষ্যত্

—ডি ভি সি জল
ছাড়বে শুনে.....

বুধবার, ৩১ আষাঢ়, ১৩৭১ (২৪ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 15, 1964

লবণ হ্রদ উন্নয়নের জন্য সংস্থা: লবণ হ্রদ এলাকার উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কোম্পানী আইন অনুসারে একটি কোম্পানী রেজিষ্ট্রী করার যে সিদ্ধান্ত আসে, তাহা কার্যকর করা আপাতত স্থগিত রাখা হইয়াছে। সরকার পুনরায় সমগ্র বিষয়টি পরীক্ষা করিয়া দেখিতেছেন। তাঁহাদের ধারণা বিলি ব্যবস্থা একটি কোম্পানীর হাতে ন্যস্ত হইলে এই ব্যপারে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাইবে। আগামী সত্সর (১৯৬৫) গোড়ার দিকে লবণ হ্রদ এলাকায় জমি-জায়গা বিলি শুরু হইবে বলিয়া আশা করা যায়। এখানে ১২ হাজার প্লচে ৫০ হাজার পরিবারকে জমি বিক্রয়ের পরিকল্পনা আছে। ইহা ছাড়া সরকার ও ‘‘নিজ বাড়ীর মালিক নিজে হউন’’ পরিকল্পনা অনুসারে ৩৫ হাজারের মত ফ্ল্যাট নির্মাণ করিবেন।

বুধবার, ৩১ আষাঢ়, ১৩৭১ (২৪ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JULY 15, 1964

নয় লক্ষ ষাট হাজার লোকের রেশন কার্ড বাতিল: এ পর্যন্ত কলিকাতা শহরে প্রাপ্তবয়স্ক ইউনিটের বাতিল রেশন কার্ডের সংখ্যা দাড়াইয়াছে নয় লক্ষ ষাট হাজার। ঐ কার্ডগুলির অধিকারীর কোন অস্তিত্ব ছিল না বলিয়া খাদ্যদপ্তরের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার জানান। তিনি জানান যে, আজ [বুধবার] হইতে প্রধানত শহরের বস্তি অঞ্চলে ভূ.া কার্ডের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হইবে। এ ব্যাপারে পুলিসকে সাহায্য করিবেন খাদ্যদপ্তর হোমগার্ড এবং স্পেশ্যাল পুলিস বাহিনীর সদস্যরা। এই অভিযানকালে বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় আটশত কর্মচারী বস্তির ঘরে ঘরে গিয়া প্রতি পরিবারের প্রকৃত সকস্যসংখ্যার সহিত রেশন কার্ডে উল্লিখিত সংখ্যা মিলাইয়া দেখিবেন। এই তদন্তের ভিত্তিতে পরে ব্যবস্থা লওয়া হইবে।

বৃহস্পতিবার, ৩২ আষাঢ়, ১৩৭১ (২৫ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JULY 16, 1964

পৌরসভার বৃক্ষ রোপণ এবার বন্ধ: কলিকাতা কর্পোরেশন এবার আর বনমহোত্সব পালন করিবেন না। শহরের পথের ধারে পৌর সভার বৃক্ষ রোপন এবার বন্ধ। কারণ পর্যাপ্ত সংক্যক বৃক্ষ বেষ্টনী সরবরাহ করা হয় নাই। বুধবার পৌর সভার টাউন প্ল্যানিং এ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট কমিটি ঐ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়। মাখানেক আগে চারটি কর্পোরেশন ডিস্ট্রিক্টের প্রত্যেকটিতে এক শতটি করিয়া পৌর সভার সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দিয়াছিলেন। জুলাই মাসে বন-মহোত্সব উপলক্ষে রোপিত চারা গাছগুলি রক্ষা করিতেই ঐ বেষ্টনীর দরকার। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত সামান্য কয়েকটি বেষ্টনীই মাত্র সরবরাহ করা হইয়াছে। এমতাবস্থায় কমিটি চারা গাছ লাগান নিরর্থক মনে করিতেছেন। গত বছর বন-মহোত্সবে পৌরসভা নগরীর পথের ধারে বৃক্ষ রোপণ করিয়াছিলেন।

শুক্রবার, ১ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৬ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, JULY 17, 1964

কলিকাতায় মেয়েদের পলিটেকনিক: এই বছর জুলাই মাস হইতে কলিকাতায় মেয়েদের পলিটেকনিকে দুইটি বিষয়ের ডিপ্লোমা কোর্স সুরু হইতেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য এই ধরণের প্রতিষ্ঠান ইহাই প্রথম। ইলেকট্রিকাল কম্যুনিকেশান এঞ্জিনীয়ারং এবং আরকিটেকচারাল ড্রাফটসম্যানশীপ— এই দুইটি তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স ৩০টি করিয়া ছাত্রীর শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। আগামী ১৮ই জুলাই ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ। এই প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারসম্পর্কিত বিষয়ও শিক্ষা দেওয়া যায় কিনা সে সম্পর্কেও বিচার-বিবেচনা করিয়া দেখা হইতেছে। ইহা ছাড়া সিভিল এঞ্জিনীয়ারিং ড্রাফটসম্যানশীপ, টেক্সটাইল ডিজাইনস, শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারেও একটি প্রস্তাব কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন আছে।

শনিবার, ২ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JULY 18, 1964

এলগিন রোডে নেতাজী হল: নেতাজী স্মৃতিরক্ষায় ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এলগিন রোডে নেতাজী হল নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হইয়াছে। নেতাজী হল সোসাইটির উদ্যোগে পরিকল্পনাটি রূপায়িত হইবে। মহানগরীতে আটতলা বিশিষ্ট এই ভবনটি নির্মাণে জনসাধারণের দান গ্রহণের জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক আব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে টাকাকড়ি লওয়ার ব্যবস্থা হইয়াছে। শুক্রবার সম্ধ্যায় এলগিন রোডে নেতাজীর বাসভবনে নেতাজী হল সোসাইটির উদ্যোগে একটি সভা আয়োজিত হয়। সভায় পৌরোহিত্য করেন শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ এবং প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য শিক্ষামন্ত্রী শ্রীরবীন্দ্রলাল সিংহ। শ্রীসিংহ তাঁহার ভাষণে বলেন, নেতাজী হল নির্মাণের ব্যাপারে জনসাধারণের দান সাগ্রহে গৃহীত হইবে। সভাপতি শ্রীঘোষ প্রয়োজনীয় কূপন ও অন্যান্য কাগজপত্র উল্লিখিত দুইটি ব্যাঙ্কের পরিচালকের হস্তে অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে শ্রীঅমিয়কুমার বসু সোসাইটির কার্যাবলী সংক্ষেপে বিবৃত করেন।

শনিবার, ২ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৭ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JULY 18, 1964

মহানগরীর পথ জলমুক্ত করার জন্য সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি: শুক্রবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক সভায় সামান্য বর্ষণে নগরীর পথঘাট জলমগ্ন হওয়ায় প্রবল বিক্ষোভ প্রকাশ করিয়া জল নিস্কাশনের ব্যবস্থা উন্নতির জন্য সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি জানান হয়। এইদিন উত্তর-পূর্ব কলিকাতা নাগরিক কমিটির মহিলা বিক্ষোভকারী ডেপুটি মেয়র শ্রীদেবেন্দ্রলাল দত্তের সহিত সাক্ষাত্ করেন। তাঁহারা এক স্মারকলিপিতে অভিযোগ করেন যে, কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ডে জল জমিয়া নর্দমা ও রান্নাঘর একাকার হইয়া যায়। তাঁহারা পানীয় জলের অভাব দুর, জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাণিকতলা মেন রোড এবং উল্টোডাঙ্গা মেন রোডের অবশিষ্ট অংশে ভুগর্ভস্থ সমস্যার সুরাহার দাবি জানায়।


—না, সঙ্গে কোন মহিলা নেই,
কেবল এক বস্থা চাল আছে।

কোথায় বৃক্ষ রোপণ
করবেন, স্যার?

— কি বলি বল, আজকাল বাজারের টাকা
পয়সা কিছু ম্যানেজ করতে পারছি না

রবিবার, ৩ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৮ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JULY 19, 1964

স্নাতকোত্তর পঠন পাঠনের সুযোগ: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচিত কয়েকটি কলেজকে স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠনের অনুমতি দিবার জন্য আগ্রহশিল। এ বিষয়ে একটি খসড়া বিধিও প্রণয়ন করা হইয়াছে। উহা এখন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের কমিটির বিবেচনাধীন। পরে উহা সেনেটের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হইবে। শনিবার সকালে সিটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের রজত জয়নিতী উত্সব অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রী বি এন মালিক সভাপতির ভাষণ প্রসঙ্গে ইহা জানান। তত্পূর্বে উত্সবে সমাগত অভ্যাগতবর্গকে স্বাগত জানাইয়া সিটি কলেজ পরিষদের চেয়ারম্যান ডঃ ডি এন বসু ঐ কলেজের প্রভূত অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠনের সুযোগ না দেওয়ার জন্য দুঃখ পরকাশ করেন। ইহারই উত্তরে শ্রী মালিক উক্ত মন্তব্য করেন।

রবিবার, ৩ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৮ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JULY 19, 1964

মাছের জন্য গড়িয়াহাট মার্কেটে মারামারি: চাল, তেল ও মাছ— কলিকাতা এবং শহরতলীর বাজারে দুষ্প্রাপ্য। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চান নাই বলিলেই চলে। মাছের আমদানীও কমের দিকে। ফলে স্থানে স্থানে ক্রেতা-বিক্রেতায় কলহ বাঁধিয়াছে। শনিবার একটি বাজারে ক্রেতাদের অসন্তোষ বিক্ষোভের আকারে ফাটিয়া পড়ে। ঐদিন সকালে দক্ষিণ কলিকাতার গড়িয়াহাট মার্কেটে মাছ লুঠ হয় বলিয়া অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া বাজারে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত মারামারির সৃষ্টি হয়। মাছ বিক্রেতাদের প্রহারের অভি।োগে পুলিস দুই ব্যক্তিকে ধরিয়া লইয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজন মত্স্য বিক্রেতাকেও থানায় লইয়া যাওয়া হয়। শুক্রবার দক্ষিণ কলিকাতার অপর অকটি বাজারের সামনে চাল বোঝাই গাড়ী লুঠের সংবাদ পাওয়া যায়।


—অফিসের ফাইল এখানেই নিয়ে এলাম বাবু।

সোমবার, ৪ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৯ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) MONDAY, JULY 20, 1964

কলিকাতায় গমের অনটন: রবিবার হাওড়া রামকৃষ্ণপুর এবং রথতলায় যথাক্রমে চারটি এবং সাতটি চাউল বোঝাই ওয়াগন আসিয়া পৌছে। প্রত্যেকটি ওয়াগনে আনুমানিক ২২৫ কুইন্টাল চাউল থআকে। রথতলায় যে সাত ওয়াগন চাউল আসে, তন্মধ্যে দুখানি উড়িষ্যা হইতে বাকী পাঁচটি উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্র প্রভৃতি রাজ্য হইতে। এই পাঁচটি ওয়াগনে সবই খুদ ছিল। শনিবার রামকৃষ্ণপুরে এক ওয়াগন চাউলেও আসে নাই। এদিকে সরকার যে নির্দিষ্ট সংখ্যক খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে পাইকারী ব্যবসায়ীদের যুক্ত করার নয়া ব্যবস্থা চালু করিয়াছেন, তাহা সর্বত্র এখনও চালু হয় নাই। অনেক খুচরা দোকানদার নয়া ব্যবস্থামত পারমিট পাইলেও নূতন ব্যবস্থামত চাউল এখনও ক্রেতাদের কাছে সহজপ্রপ্য হয় নাই। রবিবার বাজারে ঘুরিয়া দেখা গেল, উড়িষ্যার চাউল ইধিকাংশই মোটা এবং সে চাউলই ৮০ পয়সা দরে কেনাবেচা হইতেছে।

সোমবার, ৪ শ্রাবণ, ১৩৭১ (২৯ আষাঢ়, ১৮৮৬ শক) MONDAY, JULY 20, 1964

কলিকাতার হাসপাতালসমূহে তরম অব্যবস্থা: মহানগরের সরকারী ও বেসরকারী কয়েকটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ, দুই জায়গায়ই কতকগুলি ক্ষেত্রে পরিচালন ও চিকিত্সা-ব্যাবস্থায় বিলি-বন্দোবস্তের অভাব, চিকিত্সক-নার্স শয্যা ও চিকিত্সার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, রোগী ভর্তির ব্যাপার লইয়া অযথা টালবাহানা ও অবহেলা— এই সব অব্যবস্থা রাজ্যের সামগ্রিক চিকিত্সা-ব্যবস্থার উপর রোগীদিগকে ক্রমেই বীতরাগ ও বিতৃষ্ণ করিয়া তুলিতেছে। ফল হইয়াছে এই, নিতান্ত বাধ্য না হইলে কোন রোগী হাসপাতালের শরণাপন্ন হইতে চান না। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর রোগীদের মধ্যে হাসপাতাল চেতনা বাড়ানোর যে প্রচেষ্টার কথা প্রচার করেন, তাহা এই সব অব্যবস্থার দরুন ব্যর্থ হইতেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অনেক কম। সুতরাং ডাক্তারের অপ্রতুলতার দরুন রোগীদের দুর্ভোগ পোহাইতে হয়।


—টায়ার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনটি চাকা নিয়েই চালাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

looking back firey dekha 1964 june july news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE