নামেই শহুরে থানা। অথচ, ঝড়-বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কাটানোই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই থানায়! ঝড়-জল কাটিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ আসতে কখনও সময় লাগছে দু’ঘণ্টা, কখনও আরও বেশি। ঝড়-বৃষ্টিতে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রভাব ফেলছে থানা পরিচালনার কাজেও। থানার ‘অন্ধকার কাটাতে’ তাই কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত ভাঙড় ডিভিশনের জন্য এ বার ছ’টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর কিনছে লালবাজার।
লালবাজার সূত্রের খবর, ভাঙড় ডিভিশনের আটটি থানার জন্য আপাতত ছ’টি জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খরচ ধরা হয়েছে ৩৩ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই জেনারেটর কেনার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। বরাত প্রক্রিয়া শেষ হলে বর্ষার আগেই জেনারেটরগুলি মিলবে বলে আশা করছেন লালবাজারের কর্তারা। জেনারেটর কেনা হলেও ভাঙড় ডিভিশনের কোন কোন থানায় সেগুলি রাখা হবে, তা অবশ্য এখনই নিশ্চিত করে বলতে চাননি লালবাজারের কর্তারা। তবে জানা গিয়েছে, উচ্চ ক্ষমতার ওই জেনারেটরগুলি ডিজ়েলচালিত, ১০ কেভিএ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এ ছাড়াও এই জেনারেটরগুলির আওয়াজও অনেক কম।
গত বছরের জানুয়ারিতে কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত হয় ভাঙড়। কলকাতা পুলিশের আওতায় আসার পরে ভাঙড়কে ভাগ করা হয় আটটি থানা এলাকায়। থানাগুলির পরিকাঠামোগত পরিকল্পনার জন্য পৃথক দলও গড়ে দেয় লালবাজার। এক জন ডিসি-র নেতৃত্বে মোট চার জন ইনস্পেক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন ভাবে হাতিশালা, পোলেরহাট, উত্তর কাশীপুর, বিজয়গঞ্জ বাজার, মাধবপুর, চন্দনেশ্বর, বোদরা এবং ভাঙড়— এই আটটি থানা নিয়ে তৈরি হয় ভাঙড় ডিভিশন। রয়েছে ডিভিশন অফিস, ট্র্যাফিক গার্ড। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় গ্রামকেন্দ্রিক ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত হলেও শুরু থেকেই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে লালবাজারকে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এই ডিভিশনে কাজ করা পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, শীতকালে লোডশেডিংয়ের সমস্যা না হলেও বর্ষা বা গরমের সময়ে এলাকায় মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা হয়। যা আরও বাড়ে ঝড়-বৃষ্টি হলে। ভাঙড় ডিভিশনের একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘বৃষ্টি হলে তা-ও বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরার আশা থাকে। কিন্তু কালবৈশাখী বা ঝড় হলে কখন আলো আসবে, তার কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে থানার কাজ পরিচালনা করতে অসুবিধা হলেও কিছু করার থাকে না।’’ আপাতত প্রতিটি থানার তরফে কিছু বিকল্প আলোর বন্দোবস্ত করা হলেও সমস্যা যে মেটেনি, তা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন অধিকাংশ পুলিশকর্মীই।
জানা যায়, ভাঙড় ডিভিশনে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা। যদিও এই ডিভিশন বাদ দিয়ে কলকাতা পুলিশের বাকি ন’টি ডিভিশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিইএসসি। সিইএসসি-র আওতাধীন কলকাতার অধিকাংশ জায়গায় ভূগর্ভস্থ পথে বিদ্যুৎ বণ্টনের ব্যবস্থা থাকায় সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা অনেকটাই কম। উল্টো দিকে, ভাঙড়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে খুঁটি বা ‘ওভারহেড’ তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সেই কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা সেখানে তুলনামূলক ভাবে বেশি বলে মত পুলিশকর্মীদের।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ভাঙড়ের এক কর্তার যদিও দাবি, ‘‘এমনিতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। ২৪ ঘণ্টা বিশেষ দলও কাজ করে। কিন্তু গোটা এলাকাটির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ওভারহেড তারের মাধ্যমে হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টি বা যান্ত্রিক বিভ্রাট হলে অনেক সময়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। তবে, দ্রুত সেই সমস্যার সমাধানও করা হয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)