Advertisement
E-Paper

জোড়া ধাক্কায় তাঁতে টান, দোষারোপে নেতারা

প্রথমে নোট বাতিল, তার পরে জিএসটি— পরপর দুই ধাক্কায় সেই যে ধুঁকতে থাকা শুরু হল, তা এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি, অভিযোগ পূর্ব বর্ধমানের কালনা-পূর্বস্থলীর তাঁতিদের একটি বড় অংশের।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৬

গরমের মধ্যে টিনের চালের ঘরে খটাখট শব্দে তাঁত বুনছিলেন হাফেজউদ্দিন মণ্ডল। দিনে গোটা দুই শাড়ি তৈরি করেন। বিক্রি হবে কি না, জানা নেই। কিন্তু দেড় দশকের অভ্যাস। শাড়ি বোনার ফাঁকেই বলেন, ‘‘সব দলই প্রচার করছে, তাদের সরকারই উন্নয়ন করেছে। কিন্তু আমাদের তো কোনও উন্নতি নেই!’’

প্রথমে নোট বাতিল, তার পরে জিএসটি— পরপর দুই ধাক্কায় সেই যে ধুঁকতে থাকা শুরু হল, তা এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি, অভিযোগ পূর্ব বর্ধমানের কালনা-পূর্বস্থলীর তাঁতিদের একটি বড় অংশের। ভোটের প্রচারে সব পক্ষের কথাতেই উঠে আসছে তাঁদের দুরবস্থার কথা। তৃণমূল দুষছে কেন্দ্রের ওই দুই সিদ্ধান্তকে। বিজেপির পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকার তাঁতের শাড়ি বাইরে বিপণনের ব্যবস্থা না করার জন্যই এই পরিস্থিতি।

সরকারি হিসেবে, কালনা মহকুমায় তাঁতশিল্পীর সংখ্যা প্রায় ষাট হাজার। ছোট তাঁতিরা নিজেদের তাঁতযন্ত্রে শাড়ি তৈরি করেন। বড় তাঁতিদের ঘরে একাধিক তাঁতযন্ত্র থাকে। সেখানে কাজ করেন তাঁতশ্রমিকেরা। মজুরি মেলে শাড়ি পিছু। তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ি কিনে বাইরে বিক্রি করেন এলাকার তাঁত ব্যবসায়ীরা।

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

বছর চল্লিশের হাফেজউদ্দিন জানান, আগে গুণমান অনুসারে এক মোড়া সুতো মিলত ২৯-৪০ টাকায়। জরির ববিন ছিল ২৫-২৬ টাকা। জিএসটি চালুর পরে সুতোর দাম ৫০-৫৬ টাকা। জরি ৩০-৩৫ টাকা। এ ভাবে দাম বেড়েছে পাড়-সহ সব উপকরণেরই। তাঁর কথায়, ‘‘আগে ছ’শো টাকায় তৈরি একটা শাড়ি ব্যবসায়ীকে দিতাম সাড়ে ছ’শো টাকায়। এখন সেই শাড়ি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ৬৪০ টাকা। কিন্তু দাম মিলছে একই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাওয়ারলুমের শাড়ির দাপটে এমনিই হাতে বোনা তাঁতের বাজার খারাপ। দাম বাড়ালে বিক্রি হবে না।’’ তাঁর দাবি, আগে মাসে গোটা পঞ্চাশ শাড়ি বিক্রি করতেন। এখন মেরেকেটে পঁয়ত্রিশটা বিকোয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁতশ্রমিক পরিমল বসাক, নন্তু ঘোষেরা জানান, শাড়ির রকমফেরে দেড়শো থেকে তিনশো টাকা মজুরি মেলে। নোটবাতিলের পরে বেশ কিছু দিন নিয়মিত কাজ ছিল না। তার পরে আবার কাজ পেলেও শাড়ি প্রতি ২০-৩০ টাকা করে মজুরি কমেছে। মালিকের দাবি, তা না হলে জিএসটি-র খরচ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে, মাসে আয় কমেছে প্রায় হাজার টাকা।

তাঁত ব্যবসায়ী মানিক গোস্বামী, সমীর মজুমদারদের দাবি, নোটবাতিলের সময়ে কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরের বড় ব্যবসায়ীরা শাড়ি কিনতে চাইছিলেন না। নগদ টাকা হাতে না থাকায় তাঁতিরাও শাড়ি বোনার উপকরণ কিনতে পারছিলেন না। ফলে, গোটা ব্যবসাটাই থমকে গিয়েছিল। কয়েক মাস পরে যখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাচ্ছে, তখনই চালু হয় জিএসটি।

মানিকবাবু জানান, জিএসটি-র ফর্ম না পূরণ করলে শাড়ি বিক্রি করা সম্ভব নয়। কিন্তু ছোট তাঁতিদের সেই প্রক্রিয়া বুঝে উঠতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। সুতো-সহ সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি তো আছেই, সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতি মাসে অনলাইনে জিএসটি জমা দেওয়ার ঝক্কি। গ্রামাঞ্চলে হাতের কাছে সেই কাজ করার মতো দক্ষ লোক মেলে না। যেতে হয় কালনা বা সমুদ্রগড়ে। বেড়েছে খরচ।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাঁতিদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। রাজ্য সরকার তাঁতের হাট তৈরি, তাঁতযন্ত্র বিলি, শাড়ি কিনে নেওয়া-সহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’’ বিজেপির বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসের পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার তাঁতিদের প্রশিক্ষিত করে পণ্য অন্য রাজ্যে বিক্রিতে উদ্যোগী হয়নি। তাই তাঁতিরা আজ বিপাকে পড়েছেন।’’

দোষারোপের পালার মাঝে সুদিনের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে হাফেজদের।

Lok Sabha Election 2019 GST Weaver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy