মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
রাজ্যের বিভিন্ন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য বুধবার একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়াদের জন্য আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে তার জন্য ১০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছেন তিনি। পাশাপাশি, বাগদি, বাউরি-দুলে এবং মাঝিদের জন্যও আলাদা আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করবে রাজ্য। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে যে ঘোষণাকে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ দিন নবান্নে সংশ্লিষ্ট সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আসা নানা প্রস্তাব তিনি মেনে নেন। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ট্রাস্টি বোর্ডকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া ছাড়াও তাঁদের কমিউনিটি কেন্দ্রের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাউরি-বাগদিদের ‘বাংলা আবাস যোজনা’র সুবিধাদান, তাঁদের জন্যও কমিউনিটি কেন্দ্র, দু’টি গার্লস স্কুল, বাগদি-বাউরি-দুলে সম্প্রদায়ের এক জন করে বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ, কীর্তন অ্যাকাডেমির গঠনের মতো প্রতিশ্রুতি এ দিন দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “সবাইকে বলবেন, রাজ্য সরকার সব সময় পাশে রয়েছে। ভুল বুঝবেন না।”
এ দিন রাজ্যের ২৫ হাজার উদ্বাস্তু পরিবারকে পাট্টা দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মোট ১ লক্ষ ২৫ হাজার উদ্বাস্তু পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “একটাও উদ্বাস্তু কলোনি থাকবে না, যেটা বেআইনি বলা যাবে। বাংলাদেশ-সহ অন্য দেশ থেকে যাঁরা এসেছেন তাঁদের পাট্টা দেওয়ার মানে, তাঁরা এ দেশের নাগরিক। নিজস্ব অধিকারে রাজ্য সরকার এটা করে দিল।”
আরও পডুন: শুভেন্দু আলাদা সভা করতেই পারেন, মমতার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি: শিশির
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পিছনে ভোটের অঙ্কই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিরোধীরা। বিশেষ করে মতুয়া-কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলির নিরিখে। এর আগে নমঃশূদ্রদের জন্য আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়েছিল রাজ্য। মতুয়াদের একাংশ এই সম্প্রদায়ের মধ্যেই পড়েন। তার পরেও মতুয়াদের জন্য আলাদা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত তাঁদের ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়েই— এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির জেতা রানাঘাট ও বনগাঁ কেন্দ্র অনেকটাই মতুয়াদের নিয়ন্ত্রণে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রেও তাঁরা বড় ফ্যাক্টর। সব মিলিয়ে ৪০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ‘প্রভাব’ রয়েছে মতুয়াদের। আবার বাঁকুড়ায় বাগদি-বাউড়ি ভোটের বড় অংশ লোকসভা ভোটে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিল। বাগদি-বাউড়িদের প্রভাব রয়েছে পুরুলিয়া, বীরভূমেও। সেই কারণে তাঁদের জন্যও আলাদা পর্ষদ গড়া হল বলে অনেকের মত।
আরও পডুন: রাজ্যে এক দিনে রেকর্ড সুস্থ, ৯ শতাংশের নীচে সংক্রমণের হার
বিধানসভা ভোটের আগে এই সব পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছে বিজেপি। দু’দিনের সফরে রাজ্যে এসে আজ, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন সারবেন প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শুক্রবার মধ্যাহ্নভোজন সারবেন একটি মতুয়া-উদ্বাস্তু পরিবারে। এই অবস্থায় এ দিন নাম না-করে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেন মমতা। মতুয়াদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক দাবি করে তিনি বলেন, “এখন যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, তারা জানে না। বড়মা যত দিন বেঁচে ছিলেন, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে, তাঁর দেখাশোনা আমি করতাম।’’
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষদের শংসাপত্র পাওয়ার পদ্ধতি আরও সরল করা হবে। এ বার থেকে মা-বাবার কারও শংসাপত্র থাকলেই চলবে। যাঁদের তেমন কিছু নেই, যাচাই করে তাঁদেরও শংসাপত্রের ব্যবস্থা করবে সরকার। মমতা বলেন, “কেন্দ্রের অনেক নিয়মে ১৯৫০-৫২ সালের কাগজপত্র চাইতে হত। এখন সে সবের দরকার নেই। পরিবারের এক জনের তা থাকলেই হবে।” সরকারের সিদ্ধান্ত, সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ২ লক্ষ ছেলে-মেয়েকে মোটরসাইকেল কেনার ঋণ দেওয়া হবে। তাঁতিদের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আওতায় এনে তাঁদের তিন বছরের সব উৎপাদন কিনে নেওয়ার কথা এ দিনও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘উদ্বাস্তু বা জনজাতিদের জন্য এর আগে কত কিছু বলেছেন, সে সব বাস্তবে হয়নি। এখন ভোট সামনে বলে ওঁদের কথা আবার মনে পড়েছে!’’ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর মন্তব্য, ‘‘আগেও বিভিন্ন উন্নয়ন পর্ষদ হয়েছে, তাতে কাজ কতটুকু হয়েছে? এখন ভোটের সময় এসেছে বলে জনজাতি, মতুয়াদের মন পেতে মুখ্যমন্ত্রী ফের নানা ঘোষণা করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy