প্রতীকী ছবি।
বহু প্রচার চালিয়ে মানুষকে অঙ্গদান সম্পর্কে বেশ কিছুটা সচেতন করা সম্ভব হয়েছিল গত কয়েক বছরে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির ধাক্কায় অঙ্গদান ও সেই অঙ্গ অসুস্থ মানুষের দেহে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া কার্যত থমকে গিয়েছে।
মৃত ও জীবিত মানুষের দেহ থেকে দান করা অঙ্গ সংগ্রহ এবং প্রতিস্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন’ (রোটো)-এর পূর্ব ভারতের কেন্দ্র এসএসকেএম হাসপাতাল। চলতি বছরে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পরে অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন এতটাই কমেছে যে সংস্থার চিকিৎসক-কর্তারা চিন্তিত।
তাঁদের মতে, কোভিডের প্রাথমিক ধাক্কা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ এখন সামলে উঠেছেন। এ বার সর্বস্তরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ব্রেন ডেথ কেসগুলি দ্রুত চিহ্নিত করা এবং পরিবারের সম্মতি আদায় করে মৃতদেহ থেকে অঙ্গ সংগ্রহ বাড়ানো উচিত। কিডনি বা যকৃতের মতো অঙ্গের ক্ষেত্রে জীবিত দাতাদের থেকে অঙ্গসংগ্রহে আবার গতি আনতে হবে। তা না হলে প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
রোটোর এসএসকেএম কেন্দ্রের নথিভুক্ত অপেক্ষমাণ গ্রহীতার সংখ্যা এই মুহূর্তে প্রায় ৪০০। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ কিডনি, ১২ শতাংশ লিভার ও ৮ শতাংশ অন্য অঙ্গের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এসএসকেএম কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী জানান, ২৩ মার্চের পর থেকে মে মাস পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্টেশন’-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ বন্ধ রাখা হয়। জুন মাসে এসএসকেএমের কেন্দ্র তাদের নিজস্ব বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে, অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত কাজ তারা আবার শুরু করবে। কিন্তু তাদের সামনে বেশ কিছু সমস্যা এসে উপস্থিত হয়।
অর্পিতাদেবীর কথায়, ‘‘কোভিড সংক্রমণের ভয় সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ছাড়া, যোগাযোগ বা যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। অথরাইজেশন কমিটির বৈঠক করতে সমস্যা হচ্ছে। আদালত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইনি কাজকর্ম করায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। হাসপাতাল ও রোটো-য় কর্মীসঙ্কটও রয়েছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এন আর এসের মতো সরকারি হাসপাতাল হোক বা কোনও বেসরকারি হাসপাতাল, সর্বত্র কোভিডের চিকিৎসাই এখন সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। অধিকাংশ জায়গায় আইসিইউয়ে কোভিড রোগী রয়েছেন। সেটা সামলে অন্য কোনও কেসে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করে অঙ্গ তোলা বা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে হঠাৎ রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হতেই পারে।’’
এত কিছুর পরেও অগস্ট মাসে এ রাজ্যে দু’টি ঘটনায় ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয়েছে। তাঁদের থেকে তিনটি কিডনি, ত্বক ও কর্নিয়া এসএসকেএম ও একটি কিডনি, যকৃৎ একটি বেসরকারি হাসপাতাল পেয়েছে। অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল হৃদ্যন্ত্র পেয়েছে, যা বসানো হয়েছে এক কিশোরীর শরীরে। ভিন্ রাজ্যের হাসপাতালের এক রোগীর শরীরে ফুসফুস প্রতিস্থাপিত হয়েছে। লকডাউন পর্বে এসএসকেএম ছ’জন জীবিত দাতার থেকেও অঙ্গ পেয়েছে। তবে যা প্রয়োজন, তার তুলনায় এটা খুবই কম বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্পিতাদেবীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের লক্ষ্য থাকে প্রতি বছর জীবিত ও মৃত দাতাদের থেকে অঙ্গ সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপন আগের বছরের থেকে বাড়িয়ে যাওয়া। ২০১৮ এবং ২০১৯-এ তা অনেকটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এ বছর কোভিড তাতে বাধা দিয়েছে। এর থেকে বেরিয়ে আসাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy