E-Paper

দেশের বৃদ্ধির হারের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলা, কমছে নিজস্ব রাজস্ব আয়, উন্নয়নে লগ্নি কম রাজ্যে

প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মাথা-পিছু জিডিপি-র বৃদ্ধির হার ১৯৯০ থেকে ২০২০-র মধ্যে প্রথম দশকে ৪.৫% ছিল। শেষ দশ বছরে তা ৪.৪%-এ নেমে এসেছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩৮
Shamika Ravi

অর্থনীতিবিদ শমিকা রবি। ছবি: ফেসবুক থেকে

পরিকাঠামোয় টাকা ঢাললে, তবেই দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিশ্চিত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, অর্থনীতিবিদ শমিকা রবি। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে মাথা-পিছু জিএসডিপি (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) বৃদ্ধির হারে শ্লথ গতি দেখা যাচ্ছে। সর্বভারতীয় বৃদ্ধির হারের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে এই রাজ্য। কমছে তার নিজস্ব রাজস্ব আয় এবং পরিকাঠামো-সহ মূলধনী খাতে ব্যয়ও।

১৯৯০ থেকে ২০২০—এই তিরিশ বছরে রাজ্যগুলির বাজেট নথি বিশ্লেষণ করে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। ‘স্টেট বাজেটস ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এই গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন শমিকা রবি ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের মুদিত কপূর। রবির বক্তব্য, ‘‘পরিসংখ্যান বলছে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং পঞ্জাব নিয়ে আমাদের চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে।’’

উপদেষ্টা পরিষদের এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। বিধানসভায় পেশ হওয়া বাজেট ও রাজকোষের হাল সংক্রান্ত নথি তুলে ধরে রাজ্যের অর্থ দফতরের বক্তব্য, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট অনুমান অনুযায়ী, ২০১০-১১ সালের তুলনায় রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব আয়, উন্নয়ন, পরিকাঠামো, সামাজিক ক্ষেত্রে আয় বহু গুণ বেড়েছে। উল্টো দিকে, দেনার বোঝা, রাজকোষ ও রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনা হয়েছে।

রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র বলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যান নিজেই কথা বলছে। তার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।’’

কী বলছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ?

পরিষদের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মাথা-পিছু জিডিপি-র বৃদ্ধির হার ১৯৯০ থেকে ২০২০-র মধ্যে প্রথম দশকে ৪.৫% ছিল। শেষ দশ বছরে তা ৪.৪%-এ নেমে এসেছে। যে সব রাজ্যের মাথা-পিছু রাজস্ব আয় জাতীয় গড়ের থেকে কম, তার মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে। নিজের রাজস্ব আয় মোট আয়ের ৪০ শতাংশের কম বলেই পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের কেন্দ্রের করের ভাগ ও অনুদানের উপরে নির্ভরশীলতা বেশি।

পশ্চিমবঙ্গের মাথা-পিছু সরকারি ব্যয়ও জাতীয় গড়ের থেকে কম। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডে এই অঙ্ক অনেকটাই কম। এই ৩০ বছরে রাজ্যের উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের ভাগও কমেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে উন্নয়নে ব্যয়ের তুলনায় ঋণ শোধ করতে ও সুদ মেটাতে বেশি খরচ হচ্ছে। উন্নয়ন খাতে ব্যয় ও উন্নয়ন ছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যয়ের অনুপাত কমার মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গের হাল সব থেকে খারাপ। পেনশনের মতো খাতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।

রাজ্য সরকারের পাল্টা যুক্তি, ২০২৩-২৪ সালের বাজেট অনুমান অনুযায়ী, ২০১০-১১ থেকে রাজ্যের নিজস্ব আয় চারগুণের বেশি বেড়েছে। ২২,১২৯ কোটি টাকা থেকে তা ৮৮,৫৯৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। উন্নয়ন খাতে ব্যয় বেড়েছে সাত গুণের বেশি। ১৮ হাজার কোটির ঘর থেকে এখন তা ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। মূলধনী খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৫ গুণের বেশি। এর মধ্যে পরিকাঠামো খাতে ব্যয় বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। সামাজিক খাতে ১২ গুণ ব্যয় বেড়েছে।

অমিতের দাবি, ‘‘বিধানসভায় পেশ হওয়া, জনসমক্ষে থাকা নির্ভেজাল পরিসংখ্যান থেকেই আসল ছবি স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা কাকে উন্নয়ন খাতে বা পরিকাঠামো খাতে ব্যয় বলছেন, সেটা বুঝতে হবে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাঁদের দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’’ তা ছাড়া তাঁর বক্তব্য, ১৯৯০ থেকে ২০২০—এই সময়কালের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘মাত্র’ ১২ বছর মতো ক্ষমতায় রয়েছে। বাকি সময়ে অন্য সরকার ক্ষমতায় ছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shamika Ravi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy