E-Paper

সদ্যোজাতকে নিয়েই উচ্চ মাধ্যমিকে  

সেই মত সদ্যোজাত ২১ দিনের মেয়েকে নিয়ে গত ৩ মার্চ বেলপাহাড়ি এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন মালতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৮
সদ্যোজাত মেয়েকে কোলে নিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রেখেছেন মালতি। বেলপাহাড়ির বাকড়া গ্রামের বাড়িতে।

সদ্যোজাত মেয়েকে কোলে নিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রেখেছেন মালতি। বেলপাহাড়ির বাকড়া গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।

আঠারোয় বিয়ে। বছর ঘুরতেই সন্তান। তবে জনজাতি তরুণীটি পড়াশোনায় ছেদ টানেননি। এ বার সদ্যোজাত সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন মালতি মুর্মু হাঁসদা।

মালতির বাড়ি বেলপাহাড়ি ব্লকের ভেলাইডিহা অঞ্চলের বাকড়া গ্রামে। দিয়াশি হাইস্কুল থেকে ২০২৩ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিলদা শ্রীশ্রী সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ে কলা বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। মালতি তখন অষ্টাদশী। ভালবেসে বিয়ে করেন কুড়চিবনি গ্রামের যুবক জয়দেব হাঁসদাকে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিজ়ার করে কন্যা সন্তান প্রসব করেন মালতি। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে পরিজনরা শঙ্কায় ছিলেন। তবে মালতি অবশ্য জানিয়ে দেন, তিনি পরীক্ষা দেবেন।

সেই মত সদ্যোজাত ২১ দিনের মেয়েকে নিয়ে গত ৩ মার্চ বেলপাহাড়ি এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন মালতি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সেন্টার সেক্রেটারি সোমনাথ দ্বিবেদী বলছেন, ‘‘মালতির জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই সে পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালীন পাশের একটি ঘরে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মালতির মা রাইমণি মুর্মু। পরীক্ষা চলাকালীন মাঝে মধ্যে শিশুটিকে স্তন্যপান করাচ্ছে মালতি। মালতির এই মনের জোরকে কুর্নিশ।’’ মালতির স্কুল শিলদা শ্রীশ্রী সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ সুমনা খামরুই বলেন, ‘‘কন্যাশ্রীদের কাছে মালতি এক উজ্জ্বল উদাহরণ।’’ ঘটনাটি জেনে বেলপাহাড়ির বিডিও সুমন ঘোষ বলছেন, ‘‘কন্যাশ্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে মালতি নজির তৈরি করেছে।’’

ইতিমধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও পরিবেশবিদ্যা পরীক্ষা দিয়েছেন মালতি। মঙ্গলবার সংস্কৃত ও বৃহস্পতিবার ইতিহাস পরীক্ষা দেবেন। বাকড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে সন্তানকে কোলে নিয়ে ওই দু’টি বিষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মালতি। পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি শিক্ষা অধিকার রক্ষা মঞ্চের ঝাড়গ্রাম জেলার আহ্বায়ক তথা শিক্ষক সিরজন হাঁসদা বলেন, ‘‘এই ক’দিন মালতি শিশুকন্যা ও মায়ের সঙ্গে স্বামীর বাইকে চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত করছিল। বিষয়টি জানার পর আমরা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’

মালতিরা তিন বোন। মালতি বড়। মেজ বোন লক্ষ্মীমণি দশম ও ছোট বোন পায়েল সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। মালতির বাবা গণেশ মুর্মু বলছেন, ‘‘সিজ়ার হওয়া সত্ত্বেও মালতি পরীক্ষা দিতে চায়। কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। আগ্রহ দেখে বাধা দিইনি।’’ মালতির স্বামী জয়দেব হাঁসদার কথায়, ‘‘আমি উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। তারপর আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। মালতি এরপর কলেজে পড়ুক। উচ্চ শিক্ষিত হোক। এটাই আমার ইচ্ছে।’’

সদ্যোজাত মেয়ের নাম রাখা হয়েছে ‘আরোহী’। মালতি বলছেন, ‘‘সফলতার পথে এগিয়ে যেতে চাই। আমার মেয়েও যেন জীবনে সফল হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

HS Exam 2025 Belpahari

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy