Advertisement
E-Paper

আধার নেই, একশো দিনের কাজে আঁধার

একশো দিনের কাজের প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। অগস্টের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু হাতে যখন মাত্র আড়াই মাস বাকি, তখন লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই দূরে পশ্চিম মেদিনীপুর।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৭:৫৩

একশো দিনের কাজের প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। অগস্টের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু হাতে যখন মাত্র আড়াই মাস বাকি, তখন লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই দূরে পশ্চিম মেদিনীপুর। পরিসংখ্যান বলছে, জঙ্গলমহলের এই জেলায় একশো দিনের প্রকল্পে যত শ্রমিক রয়েছেন, তার মধ্যে ৬৬ শতাংশেরই এখনও আধার কার্ড নেই।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ বহু দিনের। ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে মজুরির টাকা বেহাত হয়ে যাওয়া ঠেকাতেই শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এর ফলে, আগামী দিনে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পেতে হলে শুধু জবকার্ড থাকলে হবে না, আধার কার্ডও থাকতে হবে। তাই অগস্টের মধ্যে শ্রমিকদের সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত না হলে সমস্যা হতে পারে।

তা-ও কেন এই কাজে পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর? সদুত্তর এড়িয়ে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক মনমোহন ভট্টাচার্যের জবাব, ‘‘কাজ এগোচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য মানছেন, ‘‘আধার কার্ডের জন্য বিভিন্ন এলাকায় শিবির করা হয়। জেলার সর্বত্র সমান সংখ্যক শিবির হয়নি। তাই কিছু সমস্যা রয়েছে। আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক শিবির করা হবে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেন, এমন শ্রমিকের সংখ্যা ২২,৯২,৯৩২ জন। এর মধ্যে আধার কার্ড রয়েছে ৭,৮০,৩০৩ জনের। অর্থাৎ মাত্র ৩৪ শতাংশের আধার কার্ড রয়েছে। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে ১০টি ব্লক। এই ১০টি ব্লকে ৩০ শতাংশেরও কম শ্রমিকের আধার রয়েছে। সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি শালবনি ব্লকে। হিসেব বলছে, এখানে মাত্র ১০ শতাংশ শ্রমিকের আধার কার্ড রয়েছে।

আধার কার্ড না থাকায় আগামী দিনে কাজ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের মালতী সিংহ, লক্ষ্মীরানি হাঁসদা, বিজলা মাহাতোরা। মালতীদেবী, বিজলাদেবীদের কথায়, “আমরা গরিব মানুষ। শুনেছি, আধার কার্ড করতে হবে। তবে আমাদের এখনও ওই কার্ড হয়নি। কার্ডের জন্য কাজ না পেলে তো সংসার চলবে না।’’ লক্ষ্মীরানিদেবীরা মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বলেন, “এলাকায় আরও শিবির হবে। শিবির হলেই একশো দিনের প্রকল্পের শ্রমিকদের আধার কার্ড করানো হবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আবার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে কাজ পেতে হলে এখনই আধার থাকা বাধ্যতামূলক বলে জেলায় কোনও নির্দেশ আসেনি।’’

নিয়মানুযায়ী সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত নন, এমন কেউ জবকার্ড পাওয়ার আবেদন করতে পারেন। তিনি পঞ্চায়েতে আবেদন করলে সরকার ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে কাজ দিতে বাধ্য। কাজ না পেলে বেকার ভাতা পাওয়ার কথা আবেদনকারীর। কিন্তু এই কার্ড বিলি এবং কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। কাজ প্রাপকদের নামের তালিকায় (মাস্টার রোল) প্রচুর ভুয়ো নাম ঢোকানো হয় বলে অভিযোগ। যে টাকায় যতখানি কাজ হওয়ার কথা, বাস্তবে তার থেকে অনেক কম কাজ হয় বলেও অভিযোগ।

২০১৩ সাল পর্যন্ত একশো দিনের মজুরির টাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টেই আসত। কাজের পর মাস্টার রোল অনুযায়ী পঞ্চায়েতের তরফে সংশ্লিষ্ট উপভোক্তার ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে দেওয়া হত।

মজুরি বন্টনে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে অনলাইনে মজুরির টাকা জমা করার পদ্ধতি চালু করে। ওই বছর থেকে চালু হয় ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডার (এফটিও) পদ্ধতি। উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর সংযুক্ত হলে মজুরি বিলিতে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে বলেই আশা। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই আশা পূরণ কত দিনে হয়, সেটাই এখন দেখার।

Workers aadhar card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy