মাস্কহীনদের পাকড়াও করতে তৎপরতা ঝাড়গ্রামের রাস্তায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
কেউ অকুতোভয়, কারণ প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কেউ বলছেন, ‘শ্বশুরবাড়ি যাব, তাই মাস্ক পরিনি’। গরমের অজুহাত, মাস্ক নিয়ে বেরোতে ভুলে যাওয়ার তত্ত্বও দিচ্ছেন অনেকে। তবে মাস্কহীন এই সব পথচলতি মানুষজনকে আর শুধু বোঝানোর রাস্তায় হাঁটছে না ঝাড়গ্রাম পুরসভা। যাঁরা মাস্ক পরছেন না, তাঁদের পথ আটকে একরকম জোর করেই করানো হচ্ছে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা।
একটা সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে অভিযান চালাত পুলিশ-প্রশাসন। ধমকের পাশাপাশি ধরপাকড়ও চলত। সে সব শিথিল হয়েছে বহু দিন। করোনার প্রতিষেধক আসার পরে মাস্ক পরার প্রবণতাও কমেছে। এ বার পুজোয় তো মাস্কহীন অসেচতন ভিড় ছিল রীতিমতো উদ্বেগের। তাই পুজোর পরে সংক্রমণ বাড়ছে কিনা জানতে অরণ্যশহরেও করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে ৬০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সংক্রমণ আটকাতে হলে মাস্ক পরতেই হবে।’’ জেলাশাসক জুড়ছেন, ‘‘মাস্ক না পরে কেউ শ্বশুরবাড়ি গেলে তিনি যদি সংক্রমিত থাকেন, তাহলে শ্বশুরবাড়ি লোকজনও করোনায় আক্রান্ত হবেন। সেটাও তো ভাবতে হবে।’’
করোনা নিয়ে অসচেতন মনোভাব কাটাতেই মাস্কহীন লোকেদের চিহ্নিত করে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা। প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন জায়গায় মূল রাস্তার ধারে করোনা পরীক্ষা শিবির হচ্ছে। শুক্রবার পাঁচমাথা মোড় সংলগ্ন এলাকায় পথচলতি যাঁরা মাস্ক পরেননি তাঁদের ধরে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক তুষারকান্তি সৎপথীও রাস্তায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে মাস্ক পরছেন না। জেলাশাসকের নির্দেশে তাঁদের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’’
বছর বাষট্টির রাজু মহম্মদ নামে পেশায় ফল ব্যবসায়ী। মাস্ক না পরেই সাইকেলে যাচ্ছিলেন। পথ আটকাতেই তাঁর যুক্তি, ‘‘আমার প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই মাস্ক পরিনি।’’ সৌরভ ঘোষ নামে শহরের এক বাসিন্দা সেজেগুজে হেঁটে বাস ধরতে যাচ্ছিলেন। পুরকর্মীরা তাঁকে ধরতে জানালেন, শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন বলে মাস্ক পরেননি। শিউলি মোহন্ত নামে মাস্কহীন এক মহিলা স্কুটি চালিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন। তাঁর আবার বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকের কাছে যাব। তাই মাস্ক পরিনি।’’ শহরের ভরতপুরের বাসিন্দা পুলিনবিহারী হেমব্রম নামে এক বিএসএফ জওয়ানও মাস্ক না পরেই যাচ্ছিলেন। তিনি জানালেন, অনেকেই মাস্ক পরছেন না। তাই তিনিও পরছেন না।
সব মিলিয়ে মোট ২৩৮ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে এ দিন। সকলেই অবশ্য নেগেটিভ। তবে ঝাড়গ্রামের পুর-চেয়ারপার্সন কবিতা ঘোষ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নিজের জীবনের স্বার্থে মাস্ক পরতেই হবে।’’ আর জেলাশাসকের হুঁশিয়ারি, ‘‘এখন মাস্ক না পরলে ধরে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এরপর গ্রেফতার করে মামলা রুজু করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy