Advertisement
E-Paper

পঞ্চব্যঞ্জন রেঁধে করোনা রোগীর পাশে পঞ্চকন্যা

গিন্নিদের এমন উদ্যোগ দেখে পাশে দাঁড়িয়েছেন কর্তারাও।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৬:০৫
উদ্যোগ শুরু হয়েছিল দেবরূপার হাত ধরে।

উদ্যোগ শুরু হয়েছিল দেবরূপার হাত ধরে। নিজস্ব চিত্র ।

কেউ অনলাইন বুটিক চালান, কেউ হাতে তৈরি গয়নার ব্যবসা করেন, কেউ বাচিকশিল্পী, কেউ আবার পুরোদস্তুর গৃহিণী। অন্দর-বাহির সামলেই করোনা কালে এগিয়ে এসেছেন ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ কন্যা। হেঁশেলের সুস্বাদু চিকেন স্টু থেকে পুরোদস্তুর দুপুর ও রাতের খাবার নিজেরাই রেঁধে পাঠাচ্ছেন হোম আইসোলেশনে থাকা করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে। পুরোটাই বিনামূল্যে।

সীমিত সাধ্যের মধ্যেও যে বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, সেটাই করে দেখিয়েছেন দেবরূপা রায়ভুঁই, স্যাঞ্জুলা দে, রিম্পা মণ্ডল, তপু জানা, ও সুস্মিতা মাঝি। গিন্নিদের এমন উদ্যোগ দেখে পাশে দাঁড়িয়েছেন কর্তারাও।

শুরুটা করেছিলেন নাট্যকর্মী ও বাচিকশিল্পী দেবরূপা। মাস খানেক আগে একাই তিনি করোনা আক্রান্ত তিনজনের বাড়িতে খাবার পাঠানো শুরু করেন। দেবরূপার স্বামী পলাশ ভুঁই পেশায় পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক। পলাশ বলেন, ‘‘বিপদে পাশে দাঁড়ানোটাই তো প্রকৃত মানবতার পরিচয়। স্ত্রীর এমন সেবামূলক কাজের সঙ্গী আমিও।’’ দেবরূপা জানালেন, গোড়ায় তিনি একাই তিনটি পরিবারের ন’জন সদস্যের জন্য খাবার বানিয়ে পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু আরও বেশি সংখ্যক করোনা রোগীর পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। তারপরেই বান্ধবী স্যাঞ্জুলাকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেন দেবরূপা। অনলাইন বুটিক চালান স্যাঞ্জুলা। তাঁর স্বামী সৌরভ দে কম্পিউটর-ব্যবসায়ী। স্যাঞ্জুলা এরপর তাঁর আরও তিন বান্ধবী রিম্পা মণ্ডল, তপু জানা, ও সুস্মিতা মাঝিকে দেবরূপার উদ্যোগের কথা জানান। রিম্পা গয়না তৈরি করেন। তাঁর স্বামী হলদিয়ার একটি কলেজের কর্মী। আর তপুর স্বামী শিক্ষক, সুস্মিতার স্বামী ব্যাঙ্ককর্মী। পাঁচ জনেই এখন যে যাঁর রান্নাঘরে খাবার তৈরি করছেন। আর তাঁদের রান্না করা খাবার করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন ‘রেড ভলান্টিয়ার’রা।

সমাজমাধ্যমে ‘স্বপ্নের মেয়েবেলা’ নামে একটি গ্রুপে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে পরিষেবা দিচ্ছেন স্যাঞ্জুলা, দেবরূপারা। গ্রুপ অ্যাডমিন স্যাঞ্জুলা। কবে, কী মেনু হবে সেটা গ্রুপে আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়া হয়। এখন দু’বেলা করোনা আক্রান্ত পরিবারের মোট ৩৫ জন সদস্যের জন্য খাবার বানাচ্ছেন এই পঞ্চকন্যা। আমিষ-নিরামিষ দু’ধরনের খাবারই রেঁধে পাঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা মাথায় রেখে মেনুতে থাকছে চিকেন স্টু, ভেজ স্টু, ভাত, পাতলা ডাল, মাছের ঝোল কিংবা ঝাল, ডিমের কষা, চাটনি, টক দই, পনিরের তরকারি। অফেরতযোগ্য মাইক্রোওয়েভ ফেন্ড্রলি কন্টেনার এবং ফয়েলে খাবার পাঠানো হচ্ছে। পঞ্চ-রমণীর পঞ্চব্যঞ্জনের স্বাদে মুগ্ধ করোনা আক্রান্তরাও। শহরের এক করোনা আক্রান্ত বলছেন, ‘‘দু’বেলা নানা রকম বাড়ির খাবার খেয়ে মনে হচ্ছে না অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি আছি।’’

করোনা রোগীর মনের স্বাস্থ্যও ভাল রাখার চেষ্টা করছেন দেবরূপারা। একলা ঘরে বন্দি মানুষগুলোর মনের জোর বাড়াতে খাবারের প্যাকেটের সঙ্গে রোজই থাকছে নতুন নতুন বার্তা। করোনা আক্রান্তের আরোগ্য কামনা করে চিরকুটে রিম্পা, তপুরা যেমন লিখেছেন, ‘আমাদের দেখা হোক মহামারি শেষে।’

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy