E-Paper

দেহের ভিড়ে মায়ের খোঁজ 

স্থানীয়রা জানালেন, এই বাজি কারখানায় প্রতিদিন ২০-২৫ জন কাজ করতেন। এ দিন ১৫-১৬জন কাজে এসেছিলেন।

গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৮:৩১
Aftermath of Egra explosion

পরিজনের দেহের খোঁজ কিশোরের। নিজস্ব চিত্র  

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আচমকাই বিকট শব্দ। সঞ্জীব বাগ তখন গাড়ি চালানোর কাজ সেরে ঘরে ফিরে দুই ছেলেকে নিয়ে বিশ্রাম করছেন। বুঝতেও পারেননি ওই শব্দ বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের। যাতে প্রাণ গিয়েছে তাঁর স্ত্রী মাধবী বাগ (৩৫)-এরও।এগরার খাদিকুল গ্রামে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে ৮ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, সংখ্যাটা ১০-১২ও হতে পারে। পুলিশের তরফে মৃতদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে গ্রামের অনেকেই জেনে গিয়েছেন, তাঁর পরিজন আর নেই। বেআইনি ওই বাজি কারখানায় মূলত স্থানীয় মহিলারাই কাজ করতেন। যেমন মাধবী। প্রতিদিনের মতো এ দিনও সকাল সাতটায় বাজি কারখানার কাজে চলে গিয়েছিলেন তিনি। স্বামী সঞ্জীব জানালেন, বাড়ির কাজ সামলেই মাধবী গত তিন মাস ধরে এই বাজি কারখানায় কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণের কথা জেনে তড়িঘড়ি এলাকায় পৌঁছন সঞ্জীব। গিয়ে দেখেন, জ্বলছে গোটা কারখানা। ভয়ে আর এগোতে পারিনি। পোড়া দেহের ভিড়ে স্ত্রীর দেহও খুঁজে পাননি। তবে শুনেছেন, পুলিশ স্ত্রীর দেহ উদ্ধার করেছে। সঞ্জীবের হাহাকার, ''তিন-চার ঘন্টা কাজ করলে তিনশো টাকা মজুরি পেত। স্ত্রীকে শুধু তারাবাজিই তৈরি করতে হত। দু'জন উপার্জন না করলে সংসার চালানো কঠিন। এখন তো সব শেষ হয়ে গেল।''

স্থানীয়রা জানালেন, এই বাজি কারখানায় প্রতিদিন ২০-২৫ জন কাজ করতেন। এ দিন ১৫-১৬জন কাজে এসেছিলেন। সবাই খাদিকুল গ্রামেরই বাসিন্দা। ছলছল চোখে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল মাধবীর বারো বছরের ছেলে আকাশ। বলল, ''আমার মা-ও বাজি তৈরি করতে এসেছিল। আর বেঁচে নেই। দেহটাই তো খুঁজে পাচ্ছি না।''এ দিনের বিস্ফোরণে শক্তিপদ বাগেরও মৃত্যু হয়েছে বলে বিশ্বাস তাঁর পরিবারের। শক্তিপদের ভায়রাভাই তপন মাইতি জানালেন, শক্তিপদও গত কয়েকমাস ধরে এই বাজি কারখানায় কাজ করছিলেন। গরিব পরিবার। এক ছেলে কেরলে কাজে গিয়েছে। সংসার চালাতেই ঝুঁকি নিয়ে এই কাজে লেগেছিলেন। তপনও এ দিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন। তারপর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, পরের পর বাজি ফাটছে। কারখানার চারদিকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দমকল এসে আগুন নেভালে দেখতে পান শক্তিপদের ঝলসানো দেহ কারখানা থেকে ছিটকে অন্তত ২৫ মিটার দূরে পুকুরের জলে পড়ে রয়েছে। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে কেরল থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরছেন শক্তিপদের ছেবে।এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এখানে বেআইনি বাজি তৈরির কারবার চলত। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বাজির সঙ্গে বোমাও তৈরি করা হত বলে দাবি। গ্রামবাসীর ক্ষোভ, পুলিশের গাফিলতিতেই গ্রামের এতগুলো নিরীহ লোকের প্রাণ গেল। কৃষ্ণপ্রসাদের মতো বাজি কারবারিদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে গোটা খাদিকুল। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তল্লাশি চলে। চলে ধরপাকড়ও। কৃষ্ণপদও তো আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Egra Explosion News

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy