ওষুধের দোকানে পিওএস-এ টাকা দিচ্ছেন এক ক্রেতা।- নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতেই বুটিক। শাড়ি, কুর্তি, ব্যাগ পরিচিতদের মধ্যেই বিক্রি করা হয়। সেই বুটিকের মালিক ব্যাঙ্কে এসে বলছেন, “পিওএস যন্ত্র চাই। নোট সঙ্কটে বিয়ের মরসুমেও নগদে কেউ জিনিস কিনছে না।”
কেরানিতলার চা দোকানটিতে সব সময় ঠাসা ভিড়। ধারের খাতায় খদ্দেরের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। টাকা চাইলে কেউ নোট সঙ্কটের গল্প শোনাচ্ছেন, কেউ আবার পকেট থেকে কার্ড বের করে দেখাচ্ছেন। এই চা দোকানিরও ব্যাঙ্কে আবেদন, ‘‘পিওএস যন্ত্র দিন।’’
নোট বাতিলের ধাক্কায় এই কার্ড সোয়াইপ যন্ত্রের চাহিদা এখন মেদিনীপুরের মতো মফস্সল শহরেও তুঙ্গে। শহরের প্রতিটি ব্যাঙ্কের শাখায় দিন গড়ে ৪-৫ ব্যবসায়ী যাচ্ছেন ‘পিওএস’ (পয়েন্ট অব সেল) যন্ত্র নিতে। নোট সঙ্কটের বাজারে এই যন্ত্রটিই যে এখন একমাত্র ত্রাতা, তা বুঝে গিয়েছেন সকলেই। দিন পনেরো আগে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ‘পিওএস’ যন্ত্র নেন জেলা পরিষদের উল্টো দিকের এক ওষুধ দোকানের মালিক অমলেন্দু সাউ। তিনি বলেন, “এই যন্ত্রের সব থেকে বড় সুবিধে হল, খুচরোর ঝামেলা নেই। ৫৪৩ টাকা বিল হলে ক্রেতার কাছে ৩ টাকা খুচরো মেলে না। আমার পক্ষেও সাত টাকা দেওয়া কঠিন। এখন আর সেই সমস্যা নেই।” অমলেন্দুবাবু জানালেন, পিওএস যন্ত্র আনার পরে ওষুধ বিক্রি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। বড়বাজারের শাড়ি ব্যবসায়ী অশোক তাপাড়িয়ারও বক্তব্য, “বিয়ের মরসুম। ব্যাঙ্কে টাকা থেকেও মানুষ নিঃস্ব। এই সময় এই যন্ত্রই ত্রাতা। গ্রামের কিছু লোক ছাড়া বেশিরভাগ খদ্দেরই এখন কার্ডেই কেনাকাটা করছেন।”
ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে পিওএস যন্ত্র চেয়ে আবেদনের সংখ্যা তাই লাফিয়ে বাড়ছে। স্টেট ব্যাঙ্কের মেদিনীপুর শাখা থেকে ইতিমধ্যে ৫৫টি যন্ত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যন্ত্র চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে আরও ৭৫টি। ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শক্তিকুমার ঘোষ বলেন, “যন্ত্র পেলেই প্রত্যেক আবেদনকারীকে দেওয়া হবে।” অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের রাজাবাজার শাখা থেকে ১৫টি, এইচডিএফসি-র মেদিনীপুর শাখা থেকে ৪৫ যন্ত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অনুমান, যা পরিস্থিতি তাতে আগামী ছ’মাসের মধ্যে চা দোকান, পানের গুমটিতেও আর নগদে জিনিস কেনার প্রয়োজন হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy