চন্দ্রকোনার ধামকুড়ায় মোরাম খাদান। নিজস্ব চিত্র
বেআইনি মোরাম পাচার রুখতে পুলিশে না জানিয়েই অভিযানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা। তবে তার পরিণতি যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে তার প্রমাণ মিলেছে বুধবার রাতে। মোরাম মাফিয়াদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও অবশ্য দমে যাচ্ছেন না ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা। উল্টে বেআইনি খাদান বন্ধের ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুঁড়ছেন।
খড়্গপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রবীরকুমার রায় অন্তত এমনই সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন। গত বুধবার রাতে তাঁর নেতৃত্বেই মোরাম পাচার বন্ধের অভিযান চলাকালীন আক্রান্ত হতে হয়েছে দফতরের আধিকারিকদের। মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে ভূমি রাজস্ব আধিকারিক শেখ ইয়াসিনকে। আক্রান্ত হয়েছেন মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক-সহ আরও ৭জন। খড়্গপুর গ্রামীণের ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সাদাতপুরে অতিরিক্ত মোরাম বোঝাই ডাম্পার দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষার সময়ই ছুটে আসে জনা পঁচিশেক হামলাকারী। লাঠি, বাঁশ নিয়ে চলে হামলা। পরে ঘটনার খবর পেয়ে আসে পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, তাঁদের না জানিয়েই ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা অভিযানে গিয়েছিলেন। যেখানে ঝুঁকি রয়েছে সেখানে পুলিশে জানানো উচিত। সে ক্ষেত্রে এমন অনভিপ্রেত ঘটনার সম্ভাবনা কমে। যদিও মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের ব্যাখ্যা ছিল, প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হয়। গত দু’বছর ধরে এ ভাবেই অভিযান চালাচ্ছি। আর এখন মাধ্যমিক চলায় তাঁরা পুলিশকে ব্যস্ত করেননি। অভিযান যেখানে চলছিল সেখান ৫০ মিটার দূরে সাদাতপুর ফাঁড়ি ছিল। তবে এমন ঘটনা আঁচ করা যায়নি।
বালি ও মোরাম খাদান বন্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খড়্গপুর গ্রামীণের কলাইকুণ্ডা, বালিয়া, খেমাশুলি, ডিমৌলি, খেলার এলাকায় রয়েছে একাধিক বেআইনি মোরাম খাদান। ভূমি দফতরের দাবি, কয়েকটি বৈধ খাদানও রয়েছে। যদিও বেআইনি খাদান বন্ধে বাস্তবের মাটি যে খুব কঠিন তা জানাচ্ছেন ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা। এক আধিকারিকের কথায়, “একটি খাদান বন্ধ করতে গেলে যে লোকবল প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তাই সেই ঝুঁকি নেওয়া হয় না।” খাদানের সঙ্গে জড়িয়ে বহু মানুষের রুটিরুজিও। তাই খাদান বন্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই পথের মাঝে বালি ও মোরাম বোঝাই ট্রাক পাকড়াও করা হয়। তবে সড়কেও যে ঝুঁকি রয়েছে তা বুঝতে পেরেছেন ভূমি আধিকারিকেরা।
ভয় জয় করেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভূমি দফতর। ভুল শুধরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই অভিযানে নামার কথাও শোনা যাচ্ছে। খড়্গপুরের মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রবীরকুমার বলছেন, “এমন ঘটনা ঘটনার পরে কিছুটা তো অবশ্যই শঙ্কিত। তবে ঝুঁকি আমাদের চাকরির অংশ। তাই এই বেআইনি কারবার বন্ধে সাহস হারাচ্ছি না। আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি। পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই এ বার অভিযান চালাব।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) উত্তম অধিকারী বলেন, “অধিকাংশ অভিযান পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই চলে। রাতে অভিযানে নিরাপত্তার অভাব থাকেই। এর পরে আমাদের জেলার টাস্কফোর্স কমিটির একটি বৈঠক ডেকে পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy