Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
মানুষের ন্যূনতম চাহিদার কাজ কতদূর করল পঞ্চায়েত? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ বিদ্যুৎ
Problem Of Street Lights

অপ্রতুল পথবাতিতেই আঁধার ভয় শাসকের

সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ছেয়ে যায় মেদিনীপুর গ্রামীণ, শালবনি, কেশপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পথবাতি নেই। বাজার এলাকাগুলিতে কিছু পথবাতি আছে।‌ গ্রামবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

roads.

টর্চ জেলেই যাতায়াত দাসপুরের শ্যামসুন্দরপুরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৪
Share: Save:

এখন আর বিদ্যুৎহীন কোনও গ্রাম নেই। বাম আমলের সঙ্গে নিজেদের তুলনা টানতে গিয়ে হামেশাই তৃণমূল নেতারা এই দাবি করেন।তবে দুই জেলার সার্বিক ছবি বলছে, বিদ্যুৎ সংযোগ হলেও ক্ষোভ রয়েছে পথবাতির অপ্রতুলতা, লোডশেডিং এবং ‘লো ভোল্টেজ’ নিয়ে। ফলে চিন্তামুক্ত নয় জোড়াফুল।

সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ছেয়ে যায় মেদিনীপুর গ্রামীণ, শালবনি, কেশপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পথবাতি নেই। বাজার এলাকাগুলিতে কিছু পথবাতি আছে।‌ গ্রামের পথে তা কমই। গ্রামবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পঞ্চায়েতগুলির অবশ্য দাবি, আগে অনেক এলাকায় পথবাতির ব্যবস্থা ছিল না। গত কয়েক বছরে ব্যবস্থা করা হয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ থেকেও বেশ‌ কিছু এলাকা‌য় পথবাতি বসানো হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কোথাও হাইমাস্ট বাতি, কোথাও লোমাস্ট বাতি বসানো হয়েছে। হাইমাস্ট বাতি পিছু খরচ হয়েছে গড়ে ৫০ হাজার টাকা। মেদিনীপুর গ্রামীণ, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা প্রভৃতি এলাকায় এমন বাতি বসানো হয়েছে। ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকে অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাতে আলো নেই। বাতিস্তম্ভ নেই জনবহুল মোড় কিম্বা বাজার গুলিতেও। তা ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় কথায় কথায় দিনের একটা বড় সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে। তার সঙ্গে এই গরমে বাড়ে ‘লো ভোল্টেজ’-এর সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে ঝা চকচকে রাস্তা , লক্ষ্মীর ভান্ডারকে হতিয়ার করে প্রচারে নামলেও সেই আলো নিয়ে কথা শুনতে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীদের। বীরসিংহে রাস্তায় বিকল বাতি সরিয়ে নতুন আলো বসানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। দাসপুর, চন্দ্রকোনা, সোনাখালি এবং ক্ষীরপাই ব্লকের আশি শতাংশ গ্রামীণ রাস্তায় পথবাতি নেই। ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ মাজি মানছেন, “গ্রামের সব রাস্তায় পথবাতির ব্যবস্থা করা যায়নি।”

গড়বেতার তিনটি ব্লকে বহু রাস্তায় পথবাতি নেই। বিদ্যুৎহীন গ্রাম না থাকলেও, আলোহীন গ্রামীণ রাস্তা গড়বেতার তিনটি ব্লক মিলিয়ে অন্তত ৩০টি রয়েছে। অনেক পঞ্চায়েতে হাইমাস্ট বাতিস্তম্ভ বসানো হলেও, তার অধিকাংশই বিকল। বিদায়ী প্রধান তথা এবার গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের প্রার্থী শ্যামল বাজপেয়ী বলেন, "কয়েকটি আলো খারাপ আছে, সেগুলিও সারানো হচ্ছে।" গোয়ালতোড়ের জিরাপাড়া, পাথরপাড়া, সারবোত পঞ্চায়েতের অনেক এলাকায় রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা নেই। খড়্গপুর মহকুমার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা সন্ধ্যা হলেই আঁধারে ডুবে যাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে। মহকুমার সবং, ডেবরা, পিংলা, খড়্গপুর-১, খড়্গপুর-২, দাঁতন, দাঁতন-২ ব্লকে গ্রামীণ রাস্তায় আলো না থাকায় পথে চলা কঠিন হয়েছে স্থানীয়দের। সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাইরে থেকে নানা কাজে আসা মানুষকে। জেলায় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার খাসতালুকেও বাজার ছাড়া গ্রামীণ সড়কে পথবাতি না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সবংয়ের মাদুরের গ্রাম সার্তায় আসেন বিদেশি পযর্টকেরা। অথচ সেই সার্তার পথ সন্ধ্যা হলেই ডোবে আঁধারে।

ঝাড়গ্রামেও পথবাতি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় ৫০টির বেশি সৌরবাতির ব্যবস্থা করেছেন। মূলত হাতির চলাচলের এলাকায় আরও চারশোটি সৌরবাতি বসানোর কাজ চলছে সাংসদ তহবিলের টাকায়। অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্যাডোবা এলাকায় হাতে গোনা কিছু পথবাতি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। স্থানীয় বাসিন্দা মালতী ঘোষ বলছেন, ‘‘বছর খানেক আগে হাতির হানায় এলাকায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও এলাকায় পর্যাপ্ত পথবাতি নেই।’’ বছর খানেক গোপীবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে রাস্তায় পথবাতি বসেছে। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুন্ডু বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল হাসছে বলে তৃণমূল দাবি করে, কিন্তু রাত হলেই জঙ্গলমহল অন্ধকারে কাঁদে। গ্রামীণ এলাকার অধিকাংশ অন্ধকারে থাকে।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে রাস্তায় প্রচুর পথবাতি বসেছে। আগে গ্রামীণ এলাকায় কোনওদিন পথবাতি ছিল না।’’ (চলবে)

(তথ্য সহায়তায়:রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী,কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lights midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE