গোয়ালতোড়ের রাস্তায় করা হয়েছে তোরণ। নিজস্ব চিত্র
পাটাশোলের খুঁটান মেলায় অহিরা গীত শুনাব/ রাত্রিবেলায় ঝুমুর গীতে সারা রাত কাটাব— আঞ্চলিক ভাষায় সম্প্রতি জনপ্রিয় হওয়া গানের কলি এখন গোয়ালতোড়ের কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে।
শুক্রবার গোয়ালতোড়ের পিংবনির পাটাশোলে হবে গরু খুঁটান উৎসব। বসবে মেলাও। বহু পুরনো এই খুঁটান উৎসবে শামিল হতে শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামই নয়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ রাঢ়বঙ্গের অন্যান্য জেলা থেকেও বহু মানুষ আসেন। গরু খুঁটান প্রতিযোগিতায় অংশ নেন অনেকে। থাকে পুরস্কার। কুড়মিদের দাবি নিয়ে আন্দোলন দানা বাঁধায় এ বার পাটাশোলের খুঁটান উৎসব অন্য মাত্রা পেয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘‘আমাদের ন্যায্য দাবি থেকে সরছি না, খুঁটান উৎসবেও আমরা সরব হব দাবি আদায়ে।’’
পাটাশোলের খুঁটান উৎসব ও প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে কুড়মি সেনা নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠন এ বার কুড়মিদের দাবি আদায়ে খেমাশুলিতে টানা রেল রোকো কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিল। কুড়মি সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি থাকা সত্বেও তাঁদের তফসিলি জনজাতি তালিকাভুক্ত করা হয়নি। সেই তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মি সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সেইসব সংগঠনের অনেকেই বলছেন, ন্যায্য এই দাবি আদায়ের আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে শুধু মিছিল, সভা, অবরোধে সীমাবদ্ধ না থেকে, এ বার থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিগুলিতেও প্রচার করা হবে। জানা গিয়েছে, পাটাশোলের জাঁকজমকপূর্ণ গরু খুঁটান উৎসবে সে রকমই প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। উৎসবে জড়ো হওয়া কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিজেদের দাবি তুলে ধরা হবে বলে উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে, উদ্যোক্তারা এ বার অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁদেরই, যাঁরা কুড়মিদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে নানা সময়ে পাশে থেকেছেন। এমনকি প্রধান অতিথি করা হয়েছে পুরুলিয়ার এক আইনজীবীকে। তিনি কুড়মিদের আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া কর্মীদের হয়ে আদালতে লড়াই করেছেন।
পাটাশোলের খুঁটান প্রতিযোগিতার পরিচালক কুড়মি সেনার জেলা সভাপতি উজ্জ্বল মাহাতো, জেলা সম্পাদক তন্ময় মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের ন্যায্য দাবি থেকে সরছি না, খুঁটান প্রতিযোগিতার আসরেও আমরা এই দাবিতে প্রচার করে জনমত গড়ে তুলব।’’ শুধু ঐতিহ্যশালী গরু খুঁটানই নয়, পাটাশোলের উৎসবে থাকবে অহিরা গীত, ঝুমুর গানের আসরও। রাতভর চলবে মেলা। গরু খুঁটান প্রতিযোগিতার সফলদের গোখাদ্য ও ট্রফি দেওয়া হবে। প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। রাস্তায় রাস্তায় করা হয়েছে তোরণ। চলছে মাইকে প্রচার। উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারি আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই, এলাকাবাসীর সাহায্যে হওয়া এই উৎসবে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy