চলতি সপ্তাহেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাবেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতেও। তার আগে রাজ্য সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে আগামী অবরোধ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করল কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ।
রবিবার খড়্গপুরের খেমাশুলিতে ওই কুড়মি সংগঠনের এক সমাবেশ থেকে ‘ঘাঘর ঘেরা’র ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার নেতৃত্ব। এছাড়াও ছিলেন ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের কুড়মি সংগঠনের নেতারা। কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ-এর সভাপতি রাজেশ মাহাতো জানিয়েছেন, আগামী ১ এপ্রিল থেকে জঙ্গলমহল জুড়ে লাগাতার ‘ঘাঘর ঘেরা’ হবে। অর্থাৎ, বাজনা বাজিয়ে, শোরগোল ও জমায়েত করে সমস্ত রাস্তা অবরোধ করা হবে। আসন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে দেড় মাস পর এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে। তবে এ বার রেলকে অবরোধের আওতায় রাখা হচ্ছে না। কুড়মি সংগঠনটির নেতাদের যুক্তি, রেল কেন্দ্রের অধীনে। তাঁদের আন্দোলন রাজ্যের বিরুদ্ধে। জাতীয় সড়কে আইন শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্বও রাজ্যের। তাই রেলকে বাদ দিয়ে জাতীয় সড়ক ও সমস্ত রাজ্য সড়কের বিভিন্ন জায়গা অবরোধ করা হবে।
কুড়মিদের আদিবাসী তালিকা ভুক্তির স্বপক্ষে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্র সরকারের কাছে সংশোধিত সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট পাঠানোর দাবিতে পুজোর আগে গত সেপ্টেম্বরে খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক কুড়মি সংগঠন। তিন মাসের মধ্যে সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে এমন আশ্বাসে পাঁচদিন পর ওই অবরোধ ওঠে। কিন্তু তারপর তিনমাস গড়িয়ে গেলেও সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট জমা না পড়ায় ১৫ দিনের চরমসীমা বেঁধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন রাজেশরা। রবিবার ১৬ তম দিনে আন্দোলনের ঘোষণা করা হয়।
‘ঘাঘর ঘেরা’ কুড়মালি প্রবচন। কোনও দিকে ফাঁক না রেখে চারিদিক ঘিরে ফেলাকে বলা হয় ‘ঘাঘর ঘেরা’। তবে মনে করা হচ্ছে, সিআরআই রিপোর্ট যাতে রাজ্য পাঠাতে বাধ্য হয়, সে জন্যই সময় হাতে রেখে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজেশরা। সামনে আবার পঞ্চায়েত ভোট। আন্দোলনের যে পোস্টার, ব্যানার দেওয়া হয়েছে তাতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই যে ‘ঘাঘর ঘেরা’ হচ্ছে সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘কুড়মিদের প্রতি রাজ্য সরকার বরাবরই সহানুভূতিশীল। সামাজিক দাবির বিষয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমার মন্তব্য না করাই ভাল।’’ জেলা কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘তোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা।’’ বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুও বলছেন, ‘‘জনজাতিদের নিয়ে তৃণমূল ভোটের রাজনীতি করে। ওদের কোনও সদিচ্ছাই নেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)