E-Paper

নিয়ম উড়িয়ে গলিতে বহুতল

শহরের পদুমবসান এলাকায় একটি বহুতল আবাসন বেআইনিভাবে তৈরি হয়েছে বলে হাই কোর্ট সম্প্রতি সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:২১
তমলুক শহরের নিমতলা মোড়ে এভাবেই গা ঘেঁষে উঠেছে বহুতল।

তমলুক শহরের নিমতলা মোড়ে এভাবেই গা ঘেঁষে উঠেছে বহুতল। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

কলকাতার গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর পুরসভার নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওই বহুতল নির্মাণে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। তবে শুধু কলকাতা নয়, জেলার বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় বহুতল আবাসন এবং অন্য ভবন নির্মাণের প্রবণতা বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুরেও বহুতল নির্মাণে নিয়ম ভঙ্গের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

তমলুক

শহরের পদুমবসান এলাকায় একটি বহুতল আবাসন বেআইনিভাবে তৈরি হয়েছে বলে হাই কোর্ট সম্প্রতি সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। জেলা সদরে এমন নির্দেশ কার্যত নজিরবিহীন ছিল। কিন্তু আইনি লড়াইয়ের জেরে ওই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। শহরের আরও একাধিক বহুতল নির্মাণে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের সামনে ফাঁকা জায়গা রাখা, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ গাড়ি যাতায়াতের জন্য প্রশস্ত রাস্তা থাকা এবং দু’টি ভবনের মাঝে সরকারি নিয়ম মেনে ফাঁকা জায়গা রাখার মতো প্রাথমিক শর্ত মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। নিমতলা এলাকায় পাশাপাশি চারটি বহুতল ভবনে নার্সিংহোম রয়েছে। ভীমার বাজার এলাকায় বিভিন্ন গলি রাস্তার পাশে বহুতল আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে দমকলের প্রবেশ করার পরিস্থিতি নেই। স্টিমারঘাট ও দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকাতেও একই ছবি। পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
করা হচ্ছে।’’

কাঁথি

অনুমোদিত নকশা ও পরিকল্পনা না মেনে বহুতল নির্মাণের সঙ্গে অতিরিক্ত অংশ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে কাঁথিতে। শহরের দিঘা বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় একটি বহুতল ভবনে আসবাবপত্রের শো-রুম রয়েছে। অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী নির্মাণের একেবারে গা ঘেঁষে মাথা তুলেছে সেটি। আগে কাঁথি পুরসভা এলাকায় ১৬ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত নির্মাণে অনুমতি দেওয়া হত। সম্প্রতি তা বেড়ে ২১ মিটার উচ্চতা হয়েছে। তবে অনুমোদিত নকশা ছাড়া চৌরঙ্গী মোড়, নেতাজি সুভাষ রোড, খড়্গপুর বাইপাস এলাকায় মাথা তুলেছে একাধিক বহুতল। অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি বহুতল নির্মাণের সম্পর্কে জেনেও নীরব পুরসভা। আবার, গোটা শহর জুড়ে অনেকেই অনুমোদিত নকশা ও পরিকল্পনা বহির্ভূত নির্মাণের সঙ্গে বারান্দা, দালান কিংবা কক্ষ বানিয়েছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। পুর পারিষদ অতনু গিরির বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বহুতল নির্মাণে কোনও অনিয়ম থাকলে পদক্ষেপ করা হবে।’’

হলদিয়া

শিল্প শহরে বহুতলের বাড়বাড়ন্ত টাউনশিপ ও দুর্গাচক এলাকায়। পুরসভার এলাকায় ২০১৬ সালের বিল্ডিং রুল দেখে অনুমোদন দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বহুতল নির্মাণের জন্য সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বোর্ড অফ কাউন্সিলর (বিওসি)একাধিক বহুতল নির্মাণে অনুমোদন দিয়েছে। যেমন, ব্রজনাথচক এলাকায় ১৩ মোড়ে ১৩ তলা ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ১৩ তলা ভবন নির্মাণ করতে হলে নিয়ম মেনে বহুতলের চতুর্দিকে যে পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখতে হয়, তা রাখা হয়নি বলে দাবি। দুর্গাচক নিউ মার্কেট এলাকায় যে গলিতে চার চাকার গাড়ি ঢুকতে পারে না, সেখানে সাততলা বহুতল হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড হলে দমকল সেখানে পৌঁছাতে পারবে না। পুরসভার কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, পুরপ্রধান, পুর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বহুতল নির্মাণে অনুমোদন পেয়ে গিয়েছেন নির্মাতারা। হলদিয়া পুরসভায় বহুতলের অনুমোদন পেতে হলে ‘অনলাইন বিল্ডিং প্ল্যান অ্যাপ্রুভাল সিস্টেমে’র মাধ্যমে আবেদন করতে হয় বলে জানান পুরপ্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, ‘‘বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ আসেনি।’’

এগরা

এগরা পুরসভায় সেই তুলনায় বহুতল কম। তবে এখানে পুরসভার ছাড়পত্র না নিয়ে বাড়ি তৈরির অভিযোগ রয়েছে। দোতলা বাড়ি তৈরির জন্য পুরসভায় জরিমানা দিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে উপর তলার বাড়ি তৈরির অনুমতি নিতে হচ্ছে। এগরা পুরসভায় বহু নার্সিংহোম তৈরির ক্ষেত্রে পুরসভার ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি। এগরা পুরসভায় জি প্লাস থ্রি পর্যন্ত বাড়ি তৈরির অনুমতি রয়েছে। তবে ২ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ম ভেঙে বেশি উঁচু বাড়ি তৈরির অভিযোগ রয়েছে।

পাঁশকুড়া

পাঁশকুড়া পুর এলাকায় ছ’তলা পর্যন্ত বহুতল রয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, বহুতল নির্মাণের গাইডলাইন মেনে চলতে হয়। কেউ চারতলার বেশি উঁচু আবাসন তৈরি করতে চাইলে তাকে পুরসভা থেকে বিশেষ অনুমোদন নিতে হয়। এক্ষেত্রে পুরসভা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সার্ভে করিয়ে অনুমোদন দিয়ে থাকে। তবে পুর এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে আবাসন তৈরির তেমন অভিযোগ নেই। (শেষ)

(তথ্য: কেশব মান্না, সৌমেন মণ্ডল, দিগন্ত মান্না, গোপাল পাত্র)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy