Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নীতি পাঠের নিদান স্কুলে
Panskura

পর পর খুন, ধর্ষণে কিশোর মনে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা

মনোবিদদের মতে, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের মধ্যে কমছে সহনশীলতা। পাশাপাশি বেড়েছে লোভ-লালসা।

কুরবান খুনে গ্রেফতার তসলিম আরিফ ওরফে রাজা। ফাইল চিত্র

কুরবান খুনে গ্রেফতার তসলিম আরিফ ওরফে রাজা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০১:০৮
Share: Save:

জেলায় এক পর এক খুন, ধর্ষণের ঘটনা রাজ্যের মধ্যে শিক্ষায় এক নম্বর থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের শিক্ষক মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। পর পর ঘটে যাওয়া এই ধরনের অপরাধ শিক্ষায় আগুয়ান এই জেলার ছাত্রছাত্রীদের মনে বিরূপ সংস্কৃতি ও নীতিহীনতা প্রভাব ফেলতে পারে বলে শিক্ষক থেকে অভিভাবক সকলেই আশঙ্কা করছেন।

গত কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে এক নম্বর স্থান দখল করে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর। শিক্ষায় শিরোনামে থাকার পাশাপাশি সম্প্রতি যে ভাবে পর পর খুনের ঘটনা ঘটছে তাতেও সংবাদ শিরোনামে এই জেলা। গত পাঁচ মাসে জেলায় হাড় হিম করা খুনের ঘটনা ঘটে গিয়েছে ছ’টি। পাশাপাশি রয়েছে গণধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাও। জেলায় হিংসার এই পরিসংখ্যান ভাবিয়ে তুলেছে সমস্ত মহলকেই। এই পরিস্থিতিতে শুধু পড়াশোনা নয়, নতুন প্রজন্মের দরকার সাংস্কৃতিক ও নীতি শিক্ষার পাঠ—এমনই অভিমত মনোবিদদের।

খুনের ধরন দেখে আতঙ্ক গ্রাস করেছে জেলাবাসীর মধ্যে। কারণ অদূর অতীতে এই ধরনের খুনের ঘটনা ঘটেনি। রাতারাতি মাতঙ্গিনী, সতীশ সামন্তদের জেলায় এ ভাবে রক্তপাতে চিন্তিত সাধারণ মানুষ থেকে মনোবিদ সকলেই। পাঁশকুড়ার শিক্ষিকা দেবযানী ভৌমিক বলেন, ‘‘এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা খুবই কমে গিয়েছে। এমনকী পরিণাম নিয়েও হেলদোল নেই। সামান্য কারণে খুন করতে হাত কাঁপছে না! বড়দের পাশাপাশি অল্পবয়সীরাও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে।’’

মনোবিদদের মতে, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের মধ্যে কমছে সহনশীলতা। পাশাপাশি বেড়েছে লোভ-লালসা। পারিবারিক রক্ষণশীলতায় শিথিলতার কারণে বেড়েছে অবাধ মেলামেশা। অল্প বয়সে যৌনতা, মাদক ও অর্থের নেশা বাড়িয়ে তুলছে হিংসা। যার পরিণতিতেই খুনের মতো ঘটনা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অলোক পাত্র বলেন, ‘‘বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা দাদু, ঠাকুমা, কাকা-কাকিমা, খুড়তুতো ভাই-বোনেদের সান্নিধ্য পায় না বললেই চলে। কারণ, এখন নিউক্লিয়ার পরিবারে অনেকে বিশ্বাস করেন।’’ তাঁর মতে, তা ছাড়া, স্কুলেও শিক্ষকদের কাছ থেকে আগের মতো স্নেহ পায় না ছাত্রছাত্রীরা। মানসিক অবসাদ দূর করতে বন্ধুবান্ধবের ভূমিকা অসীম। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে পার্থিব বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। ফলে বন্ধুপ্রীতি বিশেষ তৈরি হয় না। তাই এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নিজেদের খুব একা ভাবতে শুরু করে।’’

অলোকের কথায়, ‘‘মা ছেলেমেয়ের চোখ দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে চাকরি করার সুবাদেই হোক বা মোবাইলে নিজেদের ব্যস্ত রাখার দরুন সন্তানের মনের কাছকাছি সহজে পৌঁছতে পারেন না। ফলে বাবা-মায়ের সাহচর্য না পাওয়া বহু ছেলেমেয়ে নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করে। এই সমস্ত সন্তানরা বড় হয়ে যখন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখনই তাদের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে। তার পরিণতিতেই ঘটে খুন, ধর্ষণ থেকে নানা ধরনের অপরাধ।’’

কিন্তু রাজনৈতিক খুনের পিছনে কি মনস্তত্ত্ব রয়েছে?

এক চিকিৎসকের মতে, ‘‘এখন রাজনীতির ধারণাটাই বদলে গিয়েছে। রাজনীতি এখন রুটি-রুজির জায়গা হয়ে গিয়েছে। তাই অন্য কেউ ক্ষমতা দখল করে নেওয়া মানেই নিজের পেটে টান পড়া। ফলে রাজনৈতিক খুনের পিছনে রাস্তা সাফ রাখার বিষয়টাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট থেকে সঠিকভাবে সন্তানদের গড়ে তোলা গেলে বৃহত্তর জীবনে তারা অনেক বেশি সফল হয়। এর জন্য চাই দলগত কাজে অংশগ্রহণ। খেলাধূলা, শরীরচর্চা, নাচ, গান, নাটক ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে শিশুদের নিয়োজিত রাখা। সেই সঙ্গে স্কুলে নৈতিক পাঠ। তা হলে আগামী দিনে তারা বৃহত্তর জীবনে একজন সফল নাগরিক হতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panskura Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE