Advertisement
E-Paper

কুকুর হইতে সাবধান!

কখনও রাস্তা আটকে তো কখন কোনও বাড়ির দরজার সামনে তারা নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকে। রাতে মোড়ে মোড়ে শুরু হয় দল বেঁধে শুরু হয় পাড়া বৈঠক। দ্রুত গতির বাইক বা কারও প্রতি সন্দেহ হলেই আক্রমণ করতে তেড়ে যায় সারমেয়কূল!

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৩০
কুকুরের দাপটে পথ চলা দায়। স্টেশন যাওযার রাস্তায়।

কুকুরের দাপটে পথ চলা দায়। স্টেশন যাওযার রাস্তায়।

দিনে তারা শান্ত। উৎপাতও তুলনায় কম। কিন্তু রাত বাড়লেই ভোল বদলে স্বমহিমায় হাজির!

কখনও রাস্তা আটকে তো কখন কোনও বাড়ির দরজার সামনে তারা নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকে। রাতে মোড়ে মোড়ে শুরু হয় দল বেঁধে শুরু হয় পাড়া বৈঠক। দ্রুত গতির বাইক বা কারও প্রতি সন্দেহ হলেই আক্রমণ করতে তেড়ে যায় সারমেয়কূল!

দিন কয়েক আগেই স্কুটি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ইন্দার সায়ম্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। স্কুটির হাতলে ঝুলছিল মাংসের প্যাকেট। সায়ন্তিকা স্কুটি দাঁড় করিয়ে ওষুধ দোকানে ঢোকেন। সেই সুযোগে কুকুরের দল নিমেষে প্যাকেট ছিঁড়ে মাংস বের করে নেন। ফের তাঁকে যেতে হয় মাংসের দোকানে।

মাস কয়েক আগেই কুকুরের কামড়ে জখম হন ভবানীপুরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী স্বপন দাশগুপ্ত। স্বপনবাবু বলছেন, “রাতে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ ডাকতে শুরু করল একটি কুকুর। তার ডাকে আরও পাঁচ-ছ’টি কুকুর জড়ো হয়ে যায়। তাড়াতে গেলে পায়ে কামড় বসিয়ে দেয়।’’

রেলশহরের বাসিন্দাদের কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা রয়েইছে। একটু জোরে হাঁটলে বা মোটরবাইকের পিছনে প্রায়ই কুকুরের দল ধাওয়া করে। প্রাণপণে ছুটে কেউ কেউ বেঁচে যাচ্ছেন। আবার অনেককে জখম করছে সারমেয়-বাহিনী। প্রায় রোজই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে জখম রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন। বাড়ছে জলাতঙ্কের আশঙ্কাও।

শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, বছর কয়েক আগেও শহরে কুকুরের এত দাপট ছিল না। দিন যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা। বছর কুড়ি আগেও পুরসভা ও রেলের পক্ষ থেকে গাড়ি এসে পাড়ার কুকুর ধরে নিয়ে যেত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গাঁধী পশু আইন কার্যকর করার পরে পুরসভা কুকুর ধরার কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসে। কুকুর না ধরলেও পুরসভার পক্ষ থেকে কুকুরদের নির্বীজকরণের কাজ হত। এখনও বন্ধ সবই।

সুভাষপল্লি, খরিদা, ভবানীপুর, ইন্দার বিদ্যাসাগরপুর, জীবনানন্দ সরণী, বামুনপাড়া, তলঝুলি, রবীন্দ্রপল্লি, সোনামুখি, বালাজি মন্দিরপল্লি, কুমোরপাড়া, মন্দিরতলা এলাকায় রাস্তার কুকুরের সংখ্যা অনেক। রেলের কলোনি এলাকার কুকুর তো রয়েইছে। স্বপনবাবু বলছেন, ‘‘আগে এলাকায় এত কুকুর ছিল না। আসলে পুরসভার পক্ষ থেকে এখন কুকুর ধরে নির্বীজকরণ করতে দেখি না। তাই কুকুরের কামড় সহ্য করতে হচ্ছে।” সুভাষপল্লির বাসিন্দা সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত লীনা গোপ বলেন, “রাতে অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরতে হয়। কুকুরের হাত থেকে বেঁচে বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতা যে কী দুর্বিষহ তা বলা বাহুল্য। এ বিষয়ে পুরসভার পদক্ষেপ করা উচিত।’’

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০ জন কুকুর কামড়ের টিকা নেন। তাঁদের অধিকাংশই খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাস্তার কুকুরদের নিয়মিত টিকাকরণ না হওয়ায় অনেক সময় জলাতঙ্ক রোগের প্রকোপ দেখা যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় এই রোগ ‘হাইড্রোফোবিয়া’ বলে পরিচিত। এই রোগে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগীর রোগীর মুখের লালা বা রক্ত থেকে অন্য একজনের দেহেও জলাতঙ্কের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে জলাতঙ্ক রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দেহের ওপরের অংশে কুকুর কামড় দিলে অ্যান্টি র‍্যাবিস সিরাম (এআরএস) ও অ্যান্টি র‍্যাবিস ভ্যাক্‌সিন (এআরভি) দেওয়া হয়। তবে কুকুর শরীরের নীচের অংশে কামড় দিলে প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র ‘এআরভি’ নিলেই কাজ হয়। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোন কুকুরের জলাতঙ্কের জীবাণু রয়েছে তা বোঝা সম্ভব নয়। তাই কুকুরের কামড় খাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। কারণ একবার হাইড্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়।”

কুকুরের দাপট কমাতে কী ভাবছে পুরসভা? খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “শহরে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে এটা ঠিক।শীঘ্রই কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা কুকুরের নির্বীজকরণ করে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যাবে।”

street dog kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy