Advertisement
E-Paper

জীবনযুদ্ধে টোটোয় সওয়ার ‘অন্য লক্ষ্মী’ শ্বেতা

স্বামীর ব্যবসায় মন্দা। সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছিল। তবু জীবনযুদ্ধে ভেঙে পড়েননি। সংসারের হাল ধরতে গৃহবধূ থেকে হয়েছেন টোটো চালক।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৮
লড়াকু: চালকের আসনে শ্বেতা চৌধুরী।

লড়াকু: চালকের আসনে শ্বেতা চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

তিনি যেন অন্য লক্ষ্মী।

স্বামীর ব্যবসায় মন্দা। সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছিল। তবু জীবনযুদ্ধে ভেঙে পড়েননি। সংসারের হাল ধরতে গৃহবধূ থেকে হয়েছেন টোটো চালক। তিনি মেদিনীপুরের শ্বেতা চৌধুরী। মেদিনীপুর শহরের প্রথম মহিলা টোটো চালক। মঙ্গলবারও তাঁর দেখা মিলেছে শহরের রাস্তায়। টোটো ছুটিয়েছেন। পুরুষদের ভিড়ে এ কাজ করতে ভয় করে না? বছর বিয়াল্লিশের শ্বেতা বলছেন, ‘‘কীসের ভয়? আমার কোনও ভয় বা লজ্জা নেই। সৎ পথে রোজগার করতে নেমেছি। নিজে খেটে খেতে চাই। কারও কাছে যেন হাত পাততে না- হয়।’’

মেদিনীপুর শহর ই- রিকশা টোটো অপারেটর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বুদ্ধ মহাপাত্র মনে করাচ্ছেন, ‘‘কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ উনি যেন তারই উদাহরণ।’’ বুদ্ধ জুড়ছেন, ‘‘কোনও কাজই ছোট নয়। কাজটাকে যদি কেউ ভালবেসে করেন। উনি শহরের একমাত্র মহিলা টোটো চালক। ওঁকে আমরা সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। আশা করি ওঁকে কোনও রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে না।’’

শ্বেতাও জানাচ্ছেন, তাঁকে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। তিনি থাকেন শহরের খাপ্রেলবাজারে। বাপের বাড়ি পুরুলিয়ায়। শ্বেতার বাবা উত্তরপ্রদেশে থাকতেন এক সময়ে। পরে কর্মসূত্রে পুরুলিয়ায় চলে আসেন। সেখানেই বসবাস শুরু করেন। স্বামী সুতনু চৌধুরীর পোশাকের দোকান রয়েছে শহরের জেলা পরিষদ রোডে। লকডাউন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা মার খেয়েছে। শ্বেতা জানাচ্ছেন, ওই ব্যবসা ভাল চলছে না দেখেই তাঁর টোটো চালানোর সিদ্ধান্ত। জমানো টাকায় মাস দুয়েক আগে টোটো কেনেন। এই সময়ের মধ্যে টোটো চালানো অনেকটাই শিখে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের আগে আমি গাড়ি চালিয়েছি। তাই টোটো চালাতে অসুবিধা হচ্ছে না।’’ বড় রাস্তায় অবশ্য গতি খানিক কমিয়ে দেন। ঝুঁকি এড়াতে।

স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন অনেক দিন থেকেই দেখতেন ওই মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘এক সময়ে ঘরে থেকেই পোশাকের ব্যবসা করেছি। সে ব্যবসা অবশ্য বেশি দিন চলেনি।’’ টোটো নিয়ে রাস্তায় নামার পরে শুরুর দিকে ইতিউতি কিছু লোকের গঞ্জনা ও লাঞ্চনাও সইতে হয়েছে তাঁকে। তবে পাশে পেয়েছেন পরিবারকে। পাশে পেয়েছেন টোটো চালকদের ওই সংগঠনকেও। অভাবের সংসারে এখন রোজগারের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তা থেকে আত্মবিশ্বাসও যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে তাঁর। মেদিনীপুর শহরে প্রচুর টোটো চলে। শহরে বৈধ টোটোর সংখ্যাই সাড়ে ন’শোর বেশি। রয়েছে অসংখ্য অবৈধ টোটো। তাঁর টোটো বৈধতা পাবে, আশা করছেন ওই মহিলা টোটো চালক। শ্বেতা জানিয়েছেন, তিনি কৃতজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। কেন? তিনি বলছেন, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করেছেন। এতে আমাদের মতো মেয়েদের সুবিধা হয়েছে। আমিও ওই প্রকল্পে আবেদন করেছিলাম। সুবিধা পেয়েছি।’’

মাটির গড়া লক্ষ্মী প্রতিমা নন। যেন জীবন-লড়াই দিয়েই বাঁধা তাঁর কাঠামো। সৎ ভাবে বেঁচে থাকার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন অনেকেই। মেদিনীপুরের পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলছেন, ‘‘উনি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা হতে পারেন।’’

Toto Coronavirus in Midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy