Advertisement
১৮ মে ২০২৪
সৌজন্যে শো-কজ

দিলীপের পাশে বসে কোপে সমরেশ, বদল ব্লক

শুক্রবার বিকেলে মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে এলাকার বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বসেছিলেন এগরার তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাস। একই মঞ্চে ছিলেন তৃণমূল পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা, বাম কাউন্সিলর নবকুমার ঘোড়ই ও এগরা-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সিদ্ধেশ্বর বেরা।

পাশাপাশি: মেলার মঞ্চে সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বিধায়ক সমরেশ দাস। নিজস্ব চিত্র

পাশাপাশি: মেলার মঞ্চে সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বিধায়ক সমরেশ দাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৭
Share: Save:

রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ হলেও স্থানীয় তৃণমূলের বিধায়ক ও বিজেপি সাংসদকে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এগরা মেলার উদ্যোক্তারা। মেলার অরাজনৈতিক চরিত্রকে স্মরণ করিয়েই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন তৃণমূলের পুরপ্রধান, তৃণমূল সভাপতি এবং পুরসভার বাম কাউন্সিলরও। কিন্তু রাজনৈতিক সৌজন্যের এই ছবির বিপরীতে হেঁটে মেলায় বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকার অপরাধে দলীয় বিধায়কে শো-কজের পাশাপাশি, দলের এক ব্লক সভাপতিকে পদ থেকে সরিয়ে দিল শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, বিরোধীদের সঙ্গে মেলায় থাকার জন্য ভর্ৎসনা করা হল এগরা পুরসভার চেয়ারম্যান ও এক কাউন্সিলরকেও। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে জেলায়।

শুক্রবার বিকেলে মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে এলাকার বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বসেছিলেন এগরার তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাস। একই মঞ্চে ছিলেন তৃণমূল পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা, বাম কাউন্সিলর নবকুমার ঘোড়ই ও এগরা-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সিদ্ধেশ্বর বেরা। সৌজন্যের এমন আবহে দিলীপ ও সমরেশ দুজনে কুশল বিনিময় করেই থেমে থাকেনি ভাষণ দিতে গিয়ে সমরেশ সৌজন্য ও মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সৌজন্য দেখানোর রেশ কাটার আগেই শাস্তির মুখে পড়ত হল তিনি সহ মঞ্চে হাজির তৃণমূল নেতাদের। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী এদিনই সমরেশ দাসকে শো-কজ করেন। দলের এগরা-১ ব্লক সভাপতি সিদ্ধেশ্বর বেরাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা, আর এক তৃণমূল কাউন্সিলরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।

বিজেপি সাংসদের সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির থাকার জন্য দলীয় বিধায়ক-নেতাদের এমন শাস্তির ঘটনায় দলের রাজ্য-জেলা নেতৃত্বের এমন পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমরেশ। যা নিয়ে ‘অধিকারী গড়ে’ গোষ্ঠীকোন্দলের পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জল্পনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এগরা মেলার উদ্যোক্তা এগরা সাংস্কৃতিক মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। মেলা কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন বামফ্রন্টের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রবোধ সিংহ ও সম্পাদক পদে রয়েছেন মৃণ্ময় মিশ্র । মেলা কমিটির সদস্যদের মধ্যে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরই লোক রয়েছে। প্রতি বছরই মেলায় শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। গত বছরেও মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একমঞ্চে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী ও বামফ্রন্টের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রবোধ সিংহকে। এবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিশিরের নাম রয়েছে। নাম রয়েছে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ ও তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাসের। তবে শুক্রবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশির ছিলেন না। যদিও বিজেপি সাংসদের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা গিয়েছে তৃণমূল বিধায়ক সহ দলের অন্য নেতাদের।

দলে শাস্তি নিয়ে শনিবার সমরেশ বলেন, ‘‘দলই আমাদের সৌজন্য দেখাতে বলেছে। মেলার অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষ এসেছেন এলাকার সাংসদ হিসেবে। আমি উপস্থিত ছিলাম এলাকার বিধায়ক হিসেবে। এটা কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। তাই আমি কোনও দলবিরোধী কাজ করিনি। মেলার মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি বরং দলের মর্যাদা রক্ষা করেছি। সামাজিক সৌজন্যের বাইরে তো রাজনীতি নয়।’’

তৃণমূলের এগরা-১ ব্লক সভাপতির অপসারণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এরকম স্বৈরতান্ত্রিকভাবে কাউকে পদ থেকে সরানো ঠিক হয়নি। আগে শো-কজ করা যেতে পারতো। ডেকে কথাও বলা যেত।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘দলের ডিসিপ্লিনারি কমিটি বিষয়টি দেখছেন। যা পদক্ষেপ করা হয়েছে তা রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই হয়েছে। ওঁর বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’

ঘটনায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের মধ্যে কোনও সৌজন্যবোধ নেই। এর আগে আমরাও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওই মেলায় গিয়েছি। তবে এটা তৃণমূলের লোক দেখানো। আদপে কোনও শাস্তি হবে না।’’

শুক্রবার রাতেই খড়্গপুর শহরে নতুন নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে বিজেপির এক সই সংগ্রহ অভিযানে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানে তৃণমূল বিধায়ককে শো-কজ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বলেন, “সমরেশ দাস এলাকার বিধায়ক। ওখানে পুরপ্রধানও ছিলেন। ওঁরা ওখানকার পুরনো লোক। একটা সামাজিক মেলা-অনুষ্ঠান চলছিল। আমার মনে তো কোনও প্রশ্ন আসেনি। আমি সাংসদ হিসাবে প্রথম গিয়েছিলাম। যাঁদের এটুকু সহনশীলতা নেই, তাঁদের তো রাজনীতি করাই উচিত নয়।”

মেলা কমিটির সম্পাদক মৃন্ময় মিশ্র বলেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এ বারও মেলায় এলাকার জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে মেলায় উপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Dilip Ghosh BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE