Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
অভিযুক্ত তৃণমূল প্রভাবিত পরিচালন সমিতি

স্কুল শিক্ষিকাকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর অভিযোগ

ছাত্র আন্দোলনের চাপের মুখে পড়ে সম্প্রতি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের বেশ কয়েকটি কলেজের টিচার ইন চার্জ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির। এ বার সেই ধারা বজায় রেখেই স্কুলের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল প্রভাবিত পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৯
Share: Save:

ছাত্র আন্দোলনের চাপের মুখে পড়ে সম্প্রতি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের বেশ কয়েকটি কলেজের টিচার ইন চার্জ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির। এ বার সেই ধারা বজায় রেখেই স্কুলের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল প্রভাবিত পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে।

শনিবার নারায়ণগড় থানার পাকুরসেনী গণভারতী শিক্ষানিকেতনের ঘটনা। স্কুলের শিক্ষিকা কবিতা মৈত্রের অভিযোগ, তাঁর নামে আর্থিক দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ তুলে ক্ষতিপূরণের দাবি জানায় স্কুলের তৃণমূল প্রভাবিত পরিচালন সমিতির সদস্যরা। কবিতাদেবী টাকা দিতে না চাওয়ায় ওই সদস্যরা তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এই মর্মে কবিতাদেবী জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে ওই শিক্ষিকার অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন সমিতির পাল্টা দাবি, দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় ওই শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৯ সালের ১ এপ্রিল পাকুরসেনী গণভারতী শিক্ষানিকেতনে সহ-শিক্ষিকার কাজে যোগ দিয়েছিলেন খড়্গপুরের বাসিন্দা কবিতা মৈত্র। ২০০৭ সালের ১ জুলাই থেকে তিনি স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা পদে ছিলেন। সেই সময় স্কুলের পরিচালন সমিতি ছিল বামেদের দখলে। ২০০৯ সালে তৃণমূল স্কুলের পরিচালন সমিতিতে ক্ষমতায় আসার পর স্কুলের জন্য বরাদ্দ ২৭ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১০-এর ২২ অক্টোবর কবিতাদেবী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার পদ থেকে সরে ফের ওই স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা হিসেবে রয়েছেন। কবিতাদেবীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও একই অভিযোগে বারবার তাঁর উপর মানসিকভাবে চাপ দিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যরা।

স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী উত্‌সব উপলক্ষে শনিবার অভিভাবক সভা ডেকেছিল পরিচালন সমিতি। হাজির ছিলেন সমিতির জনা পাঁচেক সদস্য, পঞ্চায়েত মনোনীত সমিতির সদস্য রঞ্জিত্‌ বসু, কবিতাদেবী-সহ স্কুলের জনা কয়েক শিক্ষিকা। সেই সময় কবিতাদেবীর বিরুদ্ধে ফের ২৭ লক্ষ টাকা গরমিলের অভিযোগ তোলেন পরিচালন সমিতির সদস্যরা। কবিতাদেবীর অভিযোগ, তাঁকে স্কুলের অনুষ্ঠান বাবদ প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কবিতাদেবীর কথায়, “আমি টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে হেনস্থা করা হয়। পরে পরিচালন সমিতির সদস্য রঞ্জিত বসু জোর করে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেন।”

স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রবীর ভুঁইয়া বলেন, “কবিতা মৈত্র ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা থাকাকালীন স্কুলের ২৭ লক্ষ টাকার হিসেব মিলছিল না। এই নিয়ে আমরা সেই সময় জেলা পরিদর্শকের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলাম। শনিবারের সভায় সেই বিষয়টি নিয়েই কয়েকজন প্রশ্ন তোলায় উত্তর দিতে পারেননি কবিতাদেবী। তখন তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা গিয়ে বেরিয়ে যান।” প্রবীরবাবুর দাবি, এ বিষয়ে ওই শিক্ষিকাকে কেউ জোর করেনি। এমনকী তাঁরা ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি বলেও তিনি জানিয়েছেন। সভায় ছিলেন স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসূন সরকারও। তাঁর কথায়, “উনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে যান। উনি হয়তো অপমানিত হয়েছিলেন। ওই প্রশ্নে অপমান বা চাপের কিছু ছিল না।”

কবিতাদেবীর দাবি, রবিবার তিনি ঘটনার কথা জানিয়ে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কাছে ই-মেলে অভিযোগ জানিয়েছেন। এ নিয়ে ভারতী দেবীর মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। যদিও এই বিষয়ে নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, “আমি শুনেছি, ওই শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় কিছু লিখে গিয়েছেন।” সিপিএমের নারায়ণগড় জোনাল সম্পাদক ভাস্কর দত্ত বলেন, “অবাঞ্ছিত ঘটনা। এত বছর পর কেন নতুন করে টাকা তছরুপের কথা উঠছে? ওই শিক্ষিকা যদি নিরপরাধ হন ,তা হলে মাথা উঁচু করে স্কুলে যাওয়া উচিত। পুলিশের উচিত ওই শিক্ষিকাকে নিরাপত্তা দেওয়া।” কবিতাদেবী বলেন, “পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়েছি। এবার স্কুল শিক্ষা দফতরে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE