Advertisement
E-Paper

গ্রেনেড ছোড়ার ‘টাইপ ৮৯’ বানানোর ছকও ছিল জঙ্গিদের

নিছক আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), গ্রেনেড বা রকেট লঞ্চার নয়। খাগড়াগড়ের বাড়িতে বসে জঙ্গিরা যে যে সব মারণাস্ত্র তৈরির মতলবে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে গোয়েন্দাদের সব থেকে উদ্বেগে ফেলেছে ‘টাইপ ৮৯ গ্রেনেড ডিসচার্জার’ তৈরির ‘ব্লু-প্রিন্ট’। একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে ওই অস্ত্র তৈরির পদ্ধতি ডাউনলোড করে তার প্রিন্টআউট নেওয়া হয়েছে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৬

নিছক আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), গ্রেনেড বা রকেট লঞ্চার নয়। খাগড়াগড়ের বাড়িতে বসে জঙ্গিরা যে যে সব মারণাস্ত্র তৈরির মতলবে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে গোয়েন্দাদের সব থেকে উদ্বেগে ফেলেছে ‘টাইপ ৮৯ গ্রেনেড ডিসচার্জার’ তৈরির ‘ব্লু-প্রিন্ট’। একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে ওই অস্ত্র তৈরির পদ্ধতি ডাউনলোড করে তার প্রিন্টআউট নেওয়া হয়েছে। সেই প্রিন্টআউট এনআইএ-র হাতে আসার পরে তদন্তকারীদের সন্দেহ, খাগড়গড়ের কুশীলবেরা গ্রেনেড ছোড়ার অন্যতম জোরালো সরঞ্জাম তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কাজেই, চক্রান্তের জাল দেশের বাইরে ছড়িয়েছে তো বটেই, এর পিছনে অনেক বড় কিছু মাথা জড়িত বলে তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন।

গ্রেনেড-ছোড়ার অন্যতম প্রচলিত অস্ত্র গ্রেনেড-লঞ্চার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘টাইপ-৮৯’ (নি-মর্টার নামেও ডাকা হয়) তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ‘ইম্পিরিয়াল জাপানিজ আর্মি’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। অস্ত্রটি দিয়ে এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত গ্রেনেড ছোড়া সম্ভব। সাধারণ গ্রেনেড-লঞ্চারের তুলনায় এর পাল্লা অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া, ‘টাইপ-৮৯’ থেকে প্রতি ঘণ্টায় অনেক বেশি সংখ্যায় গ্রেনেড ছোড়া যায়। সাধারণ ‘হ্যান্ড গ্রেনেড’ ছুড়লে যত দূর যাবে, তার থেকে আরও বেশি দূরত্বে নিক্ষেপ করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে গ্রেনেড-লঞ্চার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ‘টাইপ-৮৯’ দিয়ে অনেক বড় ধরনের গ্রেনেড, এমনকী, ইম্প্রোভাইজড বা দেশি গ্রেনেড ছোড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

এনআইএ সূত্রের খবর, খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় যে ৫৫টি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেগুলি ছিল দেশি গ্রেনেড কিংবা অন্য কথায়, গ্রেনেডের প্রযুক্তিতে তৈরি বড়সড় সকেট-বোমা। ‘টাইপ-৮৯’-এর সাহায্যে সেগুলি ছোড়া করা যেত কি না সেই ব্যাপারে তদন্তকারীরা সামরিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবেন। গোয়েন্দাদের মতে, ‘টাইপ-৮৯’ ব্যবহার করে নাশকতা চালালে তার প্রভাব অনেক বেশি পড়বে, অথচ, হামলাকারীদের ধরা পড়ার ঝুঁকি কম। কারণ, সে ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় আইইডি রেখে আসা এবং তা ফাটানোর ঝক্কি নিতে হবে না। ১ কিলোমিটার দূরে বসেও গ্রেনেড ছুড়ে বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে।

এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “খাগড়াগড়ে উদ্ধার হওয়া আইইডিগুলি ‘টাইপ-৮৯’ থেকে ছোড়া যেত কি না, সেটা এখনই হয়তো বলা সম্ভব নয়। কিন্তু হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় বসে যারা আইইডি ও বুলেট তৈরি করেছে, সেই একই চক্র ‘গ্রেনেড ডিসচার্জার’ তৈরির প্রস্তুতিও নেওয়ার কথা ভেবেছে। এটাই সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয়।” ওই অফিসারের ব্যাখ্যা, ‘টাইপ-৮৯’ খুব মামুুলি অস্ত্র নয়, তা সত্ত্বেও চক্রটি সেটা তৈরির মতলবে ছিল। সে ব্যাপারে তারা যে অনেকটা এগোয়নি, তা-ও এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ওই অস্ত্র তৈরির নির্দেশিকার প্রিন্টআউট নেওয়া থেকে অনুমান করা যায়, জেহাদ-যোগের জাল একই সঙ্গে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং অনেকটাই গভীরে তার শিকড় রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, খাগড়াগড়ের ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরে যে ‘আইইডি ও অস্ত্র গবেষণাগার’ তৈরি করা হয়েছিল, তা সম্ভবত ওই চক্রের প্রথম গবেষণাগার নয়। একটি বিশেষ সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এ রকম একটি ‘গবেষণাগার’ খাগড়াগড়ের আগেই তৈরি করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, খাগড়াগড়-কাণ্ড নিয়ে হইচই হওয়ার পরে ওই গবেষণাগারে হয়তো এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সেই গবেষণাগারের পাট পুরোপুরি চুকিয়ে ফেলা হয়নি। এক গোয়েন্দা-কর্তার যুক্তি, “মালমশলা, গোলাবারুদ ও অন্য সরঞ্জাম রাতারাতি সরানো মুশকিল। দফায় দফায় সেগুলো সরাতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হবে। তাই মনে হচ্ছে, ওই গবেষণাগার এখনও রয়েছে। কিন্তু কাজকর্ম বন্ধ।” এই অবস্থায় ওই জায়গাটিকে চিহ্নিত করে খুঁজে বের করাই চ্যালেঞ্জ বলে ওই অফিসার মন্তব্য করেছেন।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, কোনও এক জায়গায় একটি মাত্র নয়, ছোট ছোট বেশ কয়েকটি এ ধরনের গবেষণাগার তৈরি করে ফেলাই কওসর-শাকিলদের দলের মতলব ছিল। বর্ধমানে খাগড়াগড় ছাড়াও বাবুরবাগ ও বাদশাহী রোডে এই ধরনের গবেষণাগার তৈরির ফন্দি তাদের ছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, এক জন মোয়াজ্জেমের সঙ্গে পরিচিতির সূত্র ধরে শাকিল আহমেদকে খাগড়াগড়ের বাড়ির দোতলা ভাড়া দিয়েছিলেন হাসান চৌধুরী। ওই মোয়াজ্জেমের সঙ্গে স্থানীয় একটি মসজিদের নিয়মিত যাতায়াতের সূত্রেই শাকিলের পরিচয়। সেই সূত্র ধরে গোয়েন্দারা মনে করছেন, খাগড়গড়ে ভাড়াবাড়িতে ওঠার আগে শাকিল ওই এলাকায় ছিল এবং জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছিল। গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, বাবুরবাগ বা বাদশাহী রোডের কোথাও শাকিল ভাড়াটে হিসেবে থাকত। কিন্তু খাগড়াগড়ের আগে সেখানে অস্ত্র বা গোলাবারুদের ‘গবেষণাগার’ তৈরি করা হয়েছিল কি না, গোয়েন্দারা তা খতিয়ে দেখছেন।

khagragarh blast bardwan jamaat e islami surbek biswas militant 89 type grenades state news bomb blast online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy