সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী
বৃত্তের শুরুটা হয়েছিল শহিদ মিনার ময়দানে। বৃত্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে তারই অদূরে রেড রোডে!
নভেম্বরের এক দুপুরে অনেককে চমকে দিয়ে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে শহিদ মিনারের মাঠে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মে মাসের আর এক দুপুরে মমতার আমন্ত্রণে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন মঙ্গলকোটের নতুন তৃণমূল বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা।
বাম জমানায় নন্দীগ্রামের আন্দোলনে গোড়া থেকে সক্রিয় ছিল সিদ্দিকুল্লার জমিয়তে। পরে সেই আন্দোলনের শরিক হয়ে তৃণমূল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পরেও এক মঞ্চে যাননি মমতা-সিদ্দিকুল্লা। বরং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বারুইপুর স্টেশনের গায়ে সিদ্দিকুল্লার জমায়েতে যে দিন ভিড় ভেঙে পড়ল, প্রসন্ন হতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী। নন্দীগ্রাম যা পারেনি, ৯ বছর পরে সংখ্যালঘু ভোটের টান সেই রসায়নই সম্ভব করে ফেলেছে। লাভ হয়েছে মমতার। বারবার ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ের মুখ না দেখা সিদ্দিকুল্লাও নবান্নে পা রাখছেন একেবারে মন্ত্রী হিসাবে!
সরকার চালাতে গিয়ে পাঁচ বছরে বেশ কয়েক বার সংখ্যালঘুদের ক্ষোভের আঁচ পেতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। মুখে দাবি করেও কাজে ফাঁক থেকে যাওয়ার অভিযোগ শোনা গিয়েছে সংখ্যালঘুদের নানা মঞ্চ ও ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে। ভোটের বছরে মমতা আর ঝুঁকি নেননি। সটান চলে গিয়েছেন জমিয়তের মঞ্চে। সিদ্দিকুল্লাকে ডেকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। সিদ্দিকুল্লা সেই প্রস্তাবে সাড়া তো দিয়েছেনই। তৃণমূল নেত্রীর বেছে দেওয়া ১৯টি কেন্দ্রে এ বার প্রচারে গিয়েছেন। ফল বলছে, তার মধ্যে ১৭টিতে জয় পেয়েছে তৃণমূল!
এর পরে মন্ত্রিত্বের পুরস্কার প্রায় বাঁধাই ছিল। রাজভবন থেকে বেরিয়ে বৃহস্পতিবার মমতা নিজের
তালিকা থেকে তাঁর নামটা পড়ে দেওয়ার পরে সিদ্দিকুল্লা ফোন করেছেন দলনেত্রীকে। মমতা বলেছেন, মন দিয়ে কাজ করতে। এবং কী আশ্চর্য, তার পরে এসেছে দলনেতারও ফোন! খাতায়-কলমে সিদ্দিকুল্লা তো এখনও এআইইউডিএফেরও নেতা! সেই দলের সভাপতি বদরুদ্দিন আজমল এ দিন তাঁকে জানিয়েছেন, পরবর্তী ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ওই দায়িত্বও চালিয়ে যেতে। আর থাকছে জমিয়তে। যে সংগঠনের তিনি রাজ্য সভাপতি তিন দশকেরও বেশি। সংখ্যালঘু সমাজে যাদের প্রভাব এ বার জোড়া ফুল ফুটিয়েছে বাংলায়। জমিয়তের সর্বভারতীয় সভাপতির উপস্থিতিতে রবিবার মহাজাতি সদনে বসছে রাজ্য কাউন্সিলের বৈঠক পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে।
সিদ্দিকুল্লা আপাতত এই ভেবেই খুশি যে, ১৯৭৭ সালের পরে এই প্রথম মঙ্গলকোট সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলকোটের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাংলায় যে সহাবস্থান ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে, তা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করব।’’ তাঁর মন্ত্রী হওয়ার খবরে এ দিনই মঙ্গলকোটে যে উৎসব শুরু হয়েছিল, নিজে ফোন করে সে সব বন্ধ করে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রেড রোডে শপথের পরে আজ মহমেডান স্পোর্টিং মাঠে জুম্মার নমাজ। তার পরে বিকেলেই নবান্নে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। এত দিন রাস্তার আন্দোলন, মেঠো সমাবেশে অভ্যস্ত সিদ্দিকুল্লা অপেক্ষা করে আছেন সরকারি কাজের অংশ হবেন বলে। আর এই মমতার সরকারের পুলিশকেই পেটানোর অভিযোগে যে মামলা ছিল জমিয়তে নেতা-সমর্থকদের নামে? সিদ্দিকুল্লা জানেন, বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার দিনে সে সব অপ্রিয় প্রসঙ্গ মনে রাখতে নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy