Advertisement
E-Paper

দলের মধ্যে ভোটে হারলেন সিপিএম জেলা সম্পাদক! উত্তরের ফলাফলে প্রশ্নে আলিমুদ্দিনের ভূমিকাও

এই পরাজয় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের ভূমিকাকেও। এ ছাড়া, দলীয় সূত্রে খবর, রবিবারের ভোটাভুটিতে দলের আরও এক জন বড় নেতা হেরে যেতে যেতেও জিতে গিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১২
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে বলছেন মৃণাল চক্রবর্তী।

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে বলছেন মৃণাল চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বেনজির ঘটনা সিপিএমে! উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির নির্বাচনের ভোটাভুটিতে হেরে গেলেন স্বয়ং বিদায়ী জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। সঙ্গে মৃণালের এই পরাজয় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের ভূমিকাকেও। দলীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশ এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, সম্প্রতি মৃণাল যে দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছিলেন, তা বার বার বলা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করেননি রাজ্য নেতৃত্ব। ফলে বিদায়ী জেলা সম্পাদকের হার শুধু মৃণালের একার নয়, বরং আলিমুদ্দিনের তরফে যাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের দূরদর্শিতার অভাবটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

গত রবিবার বারাসতে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন শেষ হয়েছিল। তবে সম্মেলন শেষ হলেও আসল কাজটাই ছিল অধরা! নতুন জেলা কমিটির জন্য ৭৪ জনের নামের যে প্যানেল পেশ হয়েছিল, তার পাল্টা পক্ষ থেকে আরও ২৭ জনের নাম জমা পড়ে। নানান তর্কবিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত জেলা কমিটি গঠন না-করেই শেষ করে দেওয়া হয় ২৬তম জেলা সম্মেলন। সেই রাতেই বুঝিয়েসুঝিয়ে ২৫ জনকে নাম প্রত্যাহার করানো গেলেও অনড় থাকেন সল্টলেক এবং মধ্যমগ্রামের দুই নেতা। তাঁরা নাম প্রত্যাহার করেননি। ফলে জেলা কমিটি বাছতে ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে পড়ে। রবিবার সেই ভোটাভুটি হয় বারাসতে দলের জেলা দফতরে। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা যায়, বিদায়ী জেলা সম্পাদক হেরে গিয়েছেন! বরং ভোটের সংখ্যার নিরিখে জেলা কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন মধ্যমগ্রামের নেতা সনৎ বিশ্বাস।

গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন। প্রথম দিনেই দাবি উঠেছিল বিদায়ী জেলা সম্পাদক মৃণালকে সরানোর। দলের একাংশের দাবি ছিল, মৃণাল দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। গত তিন বছরে বহু বার দীর্ঘ ছুটি নিতে হয়েছে তাঁকে। তাই তাঁকে নেতৃত্বের মতো গুরুদায়িত্বে না রাখাই বাঞ্ছনীয়। তার পর সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন, শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত এবং শেষ দিনে দফায় দফায় আলোচনা করেও কোনও মীমাংসা-সূত্র বার করতে পারেননি দলের উপস্থিত রাজ্য নেতৃত্ব। বিতর্কের মধ্য দিয়েই গত রবিবার সেই সম্মেলন শেষ হয়। সে দিন রাত ১২টার পরেও কোন্দল চলে সম্মেলনকক্ষে। সম্ভাব্য ‘বিপর্যয়’ সামাল দিতে প্রায় অর্ধেক আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চলে গিয়েছিল বারাসতে। উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর সদস্যেরাও। কিন্তু লাভ হয়নি। কমিটি গঠনের বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যায়। শেষমেশ রবিবার ভোটাভুটি করে কমিটি তৈরি এবং সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, এ কথা সর্বজনবিদিত যে মৃণাল ছিলেন ভারসাম্য রক্ষার নেতা। তিন-চার জন দাবিদারকে ঠেকাতে পর পর দু’বার তাঁকে জেলা সম্পাদক করা হয়েছিল। তার নেপথ্যে ছিলেন প্রাক্তন এক মন্ত্রী। মৃণালের হারে সিপিএমের তৃতীয় বিকল্পের নীতিও ধাক্কা খেল বলে আলোচনা শুরু হয়েছে দলে। পাশাপাশি, প্রাক্তন ওই মন্ত্রীর আধিপত্যও যে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কার্যত উবে গেল তা-ও মানছেন অনেকে। সিপিএমের এক তরুণ নেতার কথায়, ‘‘রাজ্য পার্টির নেতারা দলের সদস্যদেরই মনোভাব বোঝেন না। তাঁরা সাধারণ মানুষের মনোভাব বুঝবেন কী ভাবে?’’

দলীয় সূত্রে খবর, রবিবারের ভোটাভুটিতে দলের আরও এক জন বড় নেতা হেরে যেতে যেতে জিতে গিয়েছেন। তিনি বাম জমানার এক প্রাক্তন মন্ত্রীর আপ্তসহায়কও ছিলেন। আগামী বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক নির্বাচন হবে। তত দিন পর্যন্ত রাজ্যসম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাসকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, তার তিন দিন পরেই আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। তার আগেই প্রশ্ন উঠল রাজ্য নেতৃত্বের দূরদর্শিতা নিয়ে।

CPIM CPM District Committee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy