Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Nabanna

সমস্ত অদক্ষ শ্রমিককেই জব-কার্ড দিতে নির্দেশ

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। তার পরের বছর লোকসভা ভোট। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের বিষয়টি তাই হালকা ভাবে নেওয়ার পরিস্থিতি সরকারের সামনে নেই।

সম্প্রতি কেন্দ্রের থেকে একশো দিনের টাকা পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছে রাজ্য।

সম্প্রতি কেন্দ্রের থেকে একশো দিনের টাকা পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছে রাজ্য। ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৩২
Share: Save:

দীর্ঘদিন একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা বন্ধ থাকায় জব-কার্ড থাকা শ্রমিকদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকেই। কিন্তু রাজ্যের কোষাগারের যা হাল, তাতে তা দীর্ঘদিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সমস্যার। ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সরকারের কাছে জরুরি। না-হলে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা থেকে যায়। সম্প্রতি কেন্দ্রের থেকে একশো দিনের টাকা পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে নবান্নের শীর্ষ মহলের নির্দেশ, বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকদের কারও জব-কার্ড না থাকলে, তাঁর জন্য তা বরাদ্দ করতেই হবে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘কাজে আগ্রহীরা যাতে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান তাই এই বন্দোবস্ত।’’ পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের দাবি, সাধারণত প্রতি বছর কেন্দ্র কর্মদিবসের লক্ষ্যমাত্রা দেয়। প্রতি বছরই পশ্চিমবঙ্গ সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে। তবে কোনও বার কেন্দ্র লক্ষ্যমাত্রা কমালেও এই মানুষগুলির কোনও সমস্যা হবে না।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। তার পরের বছর লোকসভা ভোট। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের বিষয়টি তাই হালকা ভাবে নেওয়ার পরিস্থিতি সরকারের সামনে নেই। শ্রমিকদের প্রত্যেকের জব-কার্ড থাকলে একদিকে যেমন তাঁদের কাজের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে, তেমনই একশো দিনের প্রকল্পের শ্রমিক-বাজেটেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সম্ভবত সেই কারণেই এই অবস্থান নিচ্ছে রাজ্য। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “একশো দিনের মজুরির টাকা বন্ধ থাকায় সেটির শ্রমিকদের বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে বিকল্প কাজ দিতে কয়েকহাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে রাজ্যকে।”

সব দফতর এবং জেলাশাসকদের উদ্দেশে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নির্দেশ, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের আওতায় জব-কার্ড থাকা অদক্ষ শ্রমিকদের দফতরভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োগ করতে হবে। যে শ্রমিকদের কাছে জব-কার্ড নেই, জেলা প্রশাসনগুলি তাঁদের জন্য সঙ্গে সঙ্গে জব-কার্ড তৈরি করে দেবেন। কাজে লাগানো জব-কার্ডধারী শ্রমিকদের তালিকা রাখতে হবে সরকারি পোর্টালে। প্রত্যেক দফতর নোডাল অফিসারের মাধ্যমে গোটা বিষয়ের নজরদারি করবেন। জেলাশাসকেরাও দফতরগুলির সঙ্গে এ ব্যাপারে সমন্বয় বজায় রাখবেন।

প্রশাসনিক ব্যাখ্যায়, একশো দিনের কাজে মূলত দু’টি ভাগের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ গুরুত্বপূ্র্ণ। প্রথমটি শ্রমিকদের মজুরির জন্য এবং দ্বিতীয়টি প্রকল্পের সামগ্রিক খাতে। রাজ্যে জব-কার্ড থাকা শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি হলে এবং তাঁদের পর্যাপ্ত কর্মদিবস দেওয়া গেলে সমানুপাতিক ভাবে এই খাতে কেন্দ্রের বরাদ্দও বাড়তে পারে। তখন গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার টাকা জোগাড়ে ব্যস্ত হতে হবে না অর্থসঙ্কটে থাকা রাজ্যকে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। যার মূল উপাদানই হল শ্রমিক মজুরির খাত। তাতে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকা রাজ্যের পাওয়ার কথা কেন্দ্রের থেকে। কেন্দ্রের সব শর্ত এবং পরামর্শ মেনে নেওয়ায় রাজ্যকে সেই বকেয়া মেটানোর আশ্বাসও দিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। ফলে আগের ‘ভুল’ আর যাতে না হয়, তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হচ্ছে রাজ্যকে। প্রশাসনের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় অর্থ রাজ্যের কাছে এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি, ডিএ-প্রশ্নেও আদালতের সামনে অর্থসঙ্কটের দাবিই করতে হচ্ছে রাজ্যকে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যসচিবের লিখিত নির্দেশে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, জব-কার্ড থাকা শ্রমিকদের নিখুঁত তথ্য ভান্ডার রাখতেই হবে।”

তবে আধিকারিকদের অনেকে জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দফতর তাদের প্রকল্পের কাজ করায় প্রধানত ঠিকাদারদের দিয়ে। ফলে তাঁরা কোন শ্রমিককে কাজে লাগাবেন, তা তাঁদের বিষয়। সাধারণত বিশেষ নির্মাণ প্রকল্পে অদক্ষ শ্রমিকদের পরিবর্তে দক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়। তাই রাজ্য নির্দেশ দিলেই অদক্ষ শ্রমিকদের সব কাজে লাগানো হবে, তার নিশ্চয়তা থাকে না। আবার ঠিকাদার নির্বাচনের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এমন শর্তও আরোপ করা থাকে না, যা অদক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগাতে ঠিকাদারকে বাধ্য করতে পারে। যদিও প্রশাসেনর এক পদস্থ কর্তার কথায়, “এই কারণে সব শ্রমিককেই জব-কার্ডের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা জব-কার্ড থাকা শ্রমিকদেরই যাতে কাজে লাগায়, তা নিশ্চিত করতে হবে জেলাশাসকদেরও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Job Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE