E-Paper

বর্ষার ভাঁড়-ভাঙা টাকায় এক টুকরো বসন্ত অস্মিকার ঘরে

রবিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বর্ষা তার ভাঁড়-ভাঙা টাকার সবটুকু তুলে দিল এক বছরের অস্মিকার বাবা-মায়ের হাতে। রানাঘাটে, অস্মিকাদের বাড়িতে বসে।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৫
অস্মিকার হাতে টাকা তুলে দিচ্ছে বর্ষা।

অস্মিকার হাতে টাকা তুলে দিচ্ছে বর্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের জন্মদিনে বন্ধুদের উপহার কিনে দিতে মাটির ভাঁড়ে টাকা জমাচ্ছিল এক বালিকা। এক দিন হঠাৎই সে টিভিতে দেখে, তার থেকেও ছোট আর এক শিশু লড়াই করছে কঠিন রোগের সঙ্গে। বিরল জিনঘটিত রোগের সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই। তার সেই চিকিৎসায় অনেক টাকা চাই। অনেক টাকা। সেই খবর দেখে মন বদলে ফেলল বালিকা। ভাঁড় ভেঙে টাকা গুনে নিয়ে সে বাবা-মায়ের সঙ্গে পার হয়ে চলে এল প্রায় দেড়শো কিলোমিটার।

রবিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বর্ষা তার ভাঁড়-ভাঙা টাকার সবটুকু তুলে দিল এক বছরের অস্মিকার বাবা-মায়ের হাতে। রানাঘাটে, অস্মিকাদের বাড়িতে বসে।

অস্মিকার মা লক্ষ্মী দাস পরে এই নিয়ে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন: ‘‘সাগরদিঘির ছোট্ট মেয়েটির কথা কোনও দিন ভুলব না।’’ নিজেকে সামলে তিনি এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমাদের হাতে আর চার মাস সময় রয়েছে। এখনও প্রয়োজন প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। জানি না, কী করে এত টাকা জোগাড় হবে।’’

অস্মিকা এর কিছুই বুঝতে পারেনি। বর্ষা যখন তার পাশে বসে ভাব করছিল, নতুন মুখ দেখে সে তাকিয়ে আছে অপার বিস্ময়ে।

রানাঘাটের দাসপাড়ার অস্মিকা ‘স্পাইনাল মাসক্যুলার অ্যাট্রফি’ নামে এক বিরল স্নায়ু-পেশির রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রায় ১৬ কোটি টাকা খরচ করে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া গেলে তার প্রাণ বাঁচবে। অস্মিকার বাবা ওয়েব ডিজ়াইনার, মা বধূ। ওই টাকা জোগাড় করা তাঁদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। ইতিমধ্যে অনেকে আর্থিক সাহায্য করেছেন তাঁদের। এ দিনও সাগরদিঘির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই দম্পতির হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেয়।

বর্ষার মা ঝুমকি দাস জানান, ১৫ মার্চ তাঁর মেয়ের সপ্তম জন্মদিন। ওই দিন খরচ করবে বলে মেয়ে টিফিনের খরচ থেকে বাঁচিয়ে ভাঁড়ে টাকা জমাচ্ছিল। ঝুমকি বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে ও টিভি দেখে অস্মিকার ব্যাপারে জানতে পারে। দু’দিন আগে সে বলল, জমানো টাকা বাচ্চাটির চিকিৎসায় দিতে চায়।’’ মেয়ের এই প্রস্তাবে এক কথায় রাজি হয়ে যান ঝুমকি এবং তাঁর স্বামী সঞ্জীব।

ভাঁড় ভেঙে দেখা যায়, তাতে ৪,১৩৭ টাকা রয়েছে। আরও কিছু টাকা যোগ করেন সঞ্জীব। এ দিন সকালে রানাঘাটে গিয়ে অস্মিকার মায়ের হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন ঝুমকি। তিনি বলেন, ‘‘টাকাটা হয়তো সামান্য। তবু মেয়ের ইচ্ছা ফেলতে পারিনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Child Health Ranaghat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy