সাত বছরের দ্বীপায়ন সাহা। ইচ্ছে মতো দৌড়তে পারে না। হাঁটতে গেলেই টলে যায়। হরিণঘাটা ব্লকের মহাদেবপুর গ্রামের এই ছোট্ট ছেলেটি এক জিন ঘটিত বিরল রোগে আক্রান্ত যার নাম ‘ডুশেন মাসকিউলার ডিসট্রফি’। মাত্র তিন বছর বয়সে দ্বীপায়নের বাবা-মা প্রথম লক্ষ্য করেন তার হাঁটার সমস্যা। পরে দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানা যায়, জিন-ঘটিত এই রোগের একমাত্র সম্ভাব্য চিকিৎসা একটি বিশেষ ইঞ্জেকশন। খরচ ২৭ কোটি টাকা। আনতে হবে আমেরিকা থেকে।
দ্বীপায়নের বাবা মৃত্যুঞ্জয় পেশায় টোটোচালক। দিনযাপনের টানাটানির মধ্যে হঠাৎ বজ্রপাত— এই বিপুল চিকিৎসার খরচ। ভেঙে পড়েছেন তিনি। মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘হাল ছাড়লে চলবে না। ছেলেটাকে বাঁচাতে হলে লড়তেই হবে।’’ দ্বীপায়নের মা রিনা সারা দিন একমাত্র সন্তানকে বুকে আগলে রাখেন। চোখে মুখে কেবল দুশ্চিন্তা। রাতে ঘুম আসে না। ২৭ কোটি টাকা জোগাড় করা এত সহজ নয়। তবু ভরসা রাখেন ঈশ্বরের উপর। আশা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
তাঁদের মনকে শক্ত করতে শেখায় রানাঘাট শহরের ছোট্ট অস্মিকার পরিবারের লড়াই। স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি (টাইপ-১) রোগে আক্রান্ত ছিল অস্মিকা। ইঞ্জেকশনের দাম ছিল ১৬ কোটি টাকা। অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল সমাজ মাধ্যম, সাধারণ মানুষ, শিল্পী, বিভিন্ন সংস্থা। সেই অর্থ জোগাড় করে কয়েক মাস আগেই অস্মিকাকে ইঞ্জেকশন দিতে পেরেছিল পরিবার।
সমাজ মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দ্বীপায়নের জন্যও প্রচার শুরু হয়েছে। তবুও পথ দীর্ঘ। সময় কম। প্রতিটি দিন মূল্যবান। মৃত্যুঞ্জয়ের কথায়, “আমি টোটো চালাই, বড়লোক নই। যদি মানুষ এগিয়ে না আসেন, সম্ভব হবে না সবটা সামলানো।” দ্বীপায়নের চোখে এখন স্বপ্ন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)