Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Student

Test: টেস্টে রাজি করতে পরীক্ষার্থীর দুয়ারে শিক্ষক

জানা গিয়েছে, ওই মাদ্রাসায় দশম শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩০। মাদ্রাসা খুলতেই শিক্ষকেরা লক্ষ্য করেন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পড়ুয়ারা মাদ্রাসায় এসেছে।

সবুজ শেখের বাড়িতে শিক্ষক।

সবুজ শেখের বাড়িতে শিক্ষক।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:২১
Share: Save:

সমস্ত ছাত্রছাত্রী যাতে মাধ্যমিক টেস্ট-এ বসে তার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন একদল শিক্ষক। শুধু তা-ই নয় হরিহরপাড়ার পদ্মনাভপুর হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সহ জনা কয়েক শিক্ষক পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে ঘুরছেন হাটে-বাজারেও।0

শিক্ষকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অভিভাবকদের একাংশ। করোনা আবহে প্রায় ২০ মাস বন্ধ থাকার পর প্রায় মাস খানেক আগে খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিধি মেনে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন শুরু হয়েছে স্কুল, মাদ্রাসায়। স্কুল, মাদ্রাসা খুলতেই দেখা যায় শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত একাংশের পড়ুয়া। মফস্সল এলাকার বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা কেউ ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়েছে। কেউ আবার এলাকাতেই বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

গত সোমবার থেকে বিভিন্ন স্কুলে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। সেখানেও অনুপস্থিত অনেক ছাত্রছাত্রী। গত বুধবার থেকে হরিহরপাড়ার পদ্মনাভপুর হাইমাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেরা লক্ষ্য করেন ৭২ জন পড়ুয়ার মধ্যে অনুপস্থিত ২ জন ছাত্র ও দশ ছাত্রী সহ মোট ১২ জন পড়ুয়া। সোমবার থেকে ওই মাদ্রাসায় টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। সমস্ত পড়ুয়ারা যাতে টেস্ট পরীক্ষায় বসে তার জন্য আগাম তৎপরতা শুরু করেছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।

জানা গিয়েছে, ওই মাদ্রাসায় দশম শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩০। মাদ্রাসা খুলতেই শিক্ষকেরা লক্ষ্য করেন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পড়ুয়ারা মাদ্রাসায় এসেছে। তবে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী একদিনও ক্লাসে হাজির হয়নি বলে খবর। আর সেই অনুপস্থিতির তালিকা ধরেই বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা গিয়ে জানতে পারছেন কারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কেউ আবার বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ওই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির পড়ুয়া মুসা করিন হাটে হাটে আনাজ বিক্রি শুরু করেছে। অপর ছাত্র সুরজ মণ্ডল হাটে-বাজারে আখের রস বিক্রি করছে। বুধবার ও শনিবার ওই এলাকায় হাট বসে। শনিবার হাটে গিয়ে শিক্ষকেরা কথা বলেন সুরজ, মুসা করিমদের সঙ্গে। যদিও হাটে শিক্ষকদের দেখে প্রথমে লজ্জায় পড়ে সুরজ, মুসা করিমরা। দুজনেই সোমবার থেকে পরীক্ষায় বসবে বলে জানায়। মুসা করিম বলে, ‘‘মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। অভাবের সংসারে কিছুটা সাহায্য করতে হাটে-হাটে আনাজ বিক্রি করছি। স্যররা এসেছিলেন টেস্ট ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার জন্য। আমি পরীক্ষা দেব।’’ সুরজও জানায়, ‘‘স্যারদের কথা মত টেস্ট-এ বসব। মাধ্যমিকও দেব।’’ শনিবার হাটে গিয়ে বেশ কিছু অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষকেরা। আনাজ বিক্রেতা এক অভিভাবক বলেন, ‘‘মাস কয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। স্যারদের কথা মত মেয়েকে বলব অন্তত মাধ্যমিক পরীক্ষাটা দিতে।’’ ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সব ছাত্রছাত্রী যাতে পরীক্ষায় বসে তার জন্য ক্লাসে অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রী ও তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি তারা যেন পড়াশোনাটা চালিয়ে যায়। টেস্ট ও মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে বলেও বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী জানিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Teacher test examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE