Advertisement
E-Paper

গাঁয়ে-গাঁয়ে চর, যোদ্ধাদের খবর

শেষ চৈত্রে মোড়ের বইয়ের দোকানে ক’টা পঞ্জিকা পড়ে রয়েছে, তার খবর রাখে ক্লাস টুয়ের পার্থ মণ্ডল। সেই খবরটা এনেছিল— ক্লাস এইটের রিয়া মণ্ডলের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৮

শেষ চৈত্রে মোড়ের বইয়ের দোকানে ক’টা পঞ্জিকা পড়ে রয়েছে, তার খবর রাখে ক্লাস টুয়ের পার্থ মণ্ডল। সেই খবরটা এনেছিল— ক্লাস এইটের রিয়া মণ্ডলের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। পঞ্জিকা কিনে ফেরার সময়ে বাড়ির কর্তা পুরোহিতের কাছে যাচ্ছেন। আর, খুদে গুপ্তচর পার্থ ছুটেছে হরিহরপাড়া ব্লক অফিসে!

রুকুনপুরের দক্ষিণপাড়ায় পেঁয়াজ কারবারি সালাম মণ্ডলের বাড়িতে সপ্তাহ দুই ধরে অচেনা লোকজনের আনাগোনা। গাঁয়ের লোক ভেবেছিল, পেঁয়াজের মরসুম, পাইকার-টাইকার হবে। কিন্তু গুপ্তচরেরা তো আর হাত গুটিয়ে বসে নেই! সে বাড়িতে যিনি গরুর দুধ দোয়ান, সটান তাঁর কাছে গিয়ে হাজির তিন কিশোরী — প্রায়ই কারা আসছে ওই বাড়িতে?

গোয়ালা বলেন, ‘‘বাবুর ছোট মেয়ের বিয়ে যে গো! দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু, তার তো বিয়ের বয়সই হয়নি? ‘‘সে জানি না। আমি যে বলেছি, কাউকে বোলোও না। কাজটা যাবে।’’ ব্যস, খবর চলে গিয়েছে রুকুনপুর হাইস্কুলে দিদির কাছে।

বৈশাখে বিয়ের মরসুমে স্বরূপপুরে কাঁসার দোকানির মাথায় হাত। সকাল নেই, বিকেল নেই নজরদারি চালাচ্ছে ক’টি মেয়ে। ‘‘তোদের জন্য খদ্দের সব চলে যাচ্ছে’’— দোকানি প্রায় হাঁকিয়ে দিয়েছে মেয়েগুলোকে। আর তার পরেই দোকানের এক কর্মীর হাতে-পায়ে ধরে রাজি করিয়ে ফেলেছে ওই মেয়েরা। ‘‘দাদা, কম বয়সে কারও বিয়ে হচ্ছে জানলে তোমরা বোনকে শুধু জানিয়ে দিও। ওই স্কুলে গিয়ে আমাদের খবর দেবে।’’

গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ ভাবেই ১৪টি নাবালিকার বিয়ে আটকে গিয়েছে হরিহরপাড়ার দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতে। সৌজন্যে, ৩২ জন ‘কন্যাশ্রীযোদ্ধা’— রুকুনপুরের ফজিলা খাতুন, রেহেনা খাতুন, ববিতা খাতুন, সাহিনা আখতার বানু, সাহিন আখতার, তরজিমা খাতুন, অপর্ণা হালদার, সঙ্গীতা বিশ্বাস... এবং তাদের আরও সব সঙ্গীসাথিরা। এদের মধ্যে নিজের বিয়ে রুখেছে এমনও আছে পাঁচ জন।

তবে অনেকের বালিকা বিবাহে উৎসাহীদের বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার মাসুলও দিতে হচ্ছে পদে-পদে। সম্প্রতি ট্যাংরামারি গ্রামে বিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে মেয়েদের। কনের বাড়ির লোক চোখ গরম করে বলেছে, ‘দেখে নেব!’ সঙ্গীতার কথায়, ‘‘রাস্তায় আমাদের টিপ্পনী কাটা হয়, ‘ওই চলল কার বিয়ে রুখতে!’ আমরা শুনেও শুনি না।’’

যাতে হামলা হলে যাতে মেয়েরা আত্মরক্ষা করতে পারে, গত মঙ্গলবার থেকে হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে পাঁচ দিনের ক্যারাটে ও যোগব্যায়াম প্রশিক্ষণ শিবির চালু করা হয়েছে। এই ৩২ জন যোদ্ধাকে যিনি একত্র করেছেন, সেই সমাজকর্মী জাকিরুন বিবি বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ বুঝছে, পুরো পুলিশ-প্রশাসন রয়েছে আমাদের সঙ্গে। তাই গোড়ায় একটু ভয় পেলেও এখন আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।’’

হরিহরপাড়ার যুগ্ম বিডিও উদয় পালিত বলেন, ‘‘যেটুকু জেনেছি তাতে বিয়ে রোখায় জেলার ২৬টি ব্লকের মধ্যে আমরা এক নম্বরে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, হরিহরপাড়ার এই মেয়েদের ‘মডেল’ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

minor Marriage prevention
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy