Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
শোকে মূহ্যমান মহেশপুর

ট্রাক ধেয়ে এল মেলায়, মৃত দুই

রাস্তা নয়, গাজনের মেলায় পংক্তি ভোজ সেরে মাঠে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তাঁরা। প্রায় শ’তিনেক গজ দূরে জাতীয় সড়ক, একের পর এক গাড়ির ছুটোছুটি।

শোকাহত: কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র

শোকাহত: কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৫
Share: Save:

রাস্তা নয়, গাজনের মেলায় পংক্তি ভোজ সেরে মাঠে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তাঁরা। প্রায় শ’তিনেক গজ দূরে জাতীয় সড়ক, একের পর এক গাড়ির ছুটোছুটি।

আচমকাই একটি মোটরবাইককে পথ ছাড়তে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় লরিটি। তার পর তিন বার ডিগবাজি খেয়ে সেই বিপুল লরি ধেয়ে আসে গাজনের মেলায়। ভরা মেলায় ট্রাকের তলায় চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শঙ্কর প্রামাণিক (৩৩) এবং শান্তি কর্মকার (৪১)। আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচ জন গ্রামবাসী।

শুক্রবার রাতের ওই দুর্ঘটনার রকম দেখে পুলিশও বলছে, ‘‘একেই বলে বেঘোরে প্রাণ হারানো!’’

বেলডাঙার ভাবতা গ্রামে গাজনের মেলা বসে প্রতি বছর। চৈত্র সংক্রান্তির রাতে সে মেলায় ভেঙে পড়ে আশপাশের গাঁ-গঞ্জ। মেলা শেষে লাগোয়া মন্দিরে বসে পংক্তি ভোজের ঢালাও আসর। ব্যতিক্রম হয়নি এ বারও।

শুক্রবার বিকেল থেকে ভেঙে পড়েছিল ভাবতার মাঠ। সন্ধের দিকে ভিড় বাড়তে তাকে আরও।

এই সময়ে, লাগোয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হু হু করে ছুটে আসা একটি পাথর বোঝাই লরির মুখোমুখি পড়ে যায় উল্টো দিক থেকে আসা একটি মোটরবাইক। তাকে বাঁচাতে গিয়েই ঘটে বিপত্তিটা।

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লরিটা উল্টেই শুধু যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, অন্তত তিন বার ডিগবাজি খেয়ে সে’টি ধেয়ে আসে মেলার মাঠে। তার পর, মন্দিরের সামনে একটি কলের এসে থামে। তবে ততক্ষণে চাপা পড়ে গিয়েছেন শান্তি ও শঙ্কর।

তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বটে, তবে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, করার কিছু নেই, মারা গিয়েছেন দু’জনেই।

শঙ্কর প্রামাণিকও শান্তিকুমার কর্মকার

মৃত দু’জনেই লাগোয়া মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। গ্রামবাসীরা মেলায় পুলিশ না দেওয়া, এবং রাস্তায় জাতীয় সড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে রাস্তায় বসে পড়েন। রাত ৯টা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত জাতীয় সড়কে যান চলাচলই কার্যত থমকে যায়। রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে য়ায়। খবর যায় থানায়। সেখান থেকে বড়সড় পুলিশ বাহিনী এসে স্থানীয় গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁদের তুলে দেন।

তবে, এ দিন সকালেও ওই লরির চালক ও খালাসির খোঁজ মেলেনি।

শনিবার সকালে, মহেশপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল শান্তিকুমারের বাড়ির সামনে আলপনা পড়েছে। তবে পয়লা বৈশাখের পুজো হয়নি গ্রামের কোনও বাড়িতেই। গ্রামের মানুষজন জানান, শঙ্কর আর শান্তি ছিল প্রায় হরিহর আত্মা। শঙ্করের ছিট টেবেড়ার সেলুন আর শান্তি কাজ করতে গ্রামের এক কামারশালায়। বন্ধ সে দু’টিও। উঠোনে বসে ছটফট করছেন শান্তির মা কাননবালা,‘‘আমাদের বাড়ির সামনে গত সন্ধ্যাতেও বোলান হয়েছে। ছেলেটা দেখেছে আর আজ সব ফাঁকা হয়ে গেল গো!’’

পুকুরের পাশে শঙ্করেরর প্রামানিকের বাড়ির সামনে জটলা। দুই ছেলে নিয়ে কি স্ত্রী মমতা আছাড়ে পড়ছেন মেঝেয়, ‘‘ওই সেলুন থেকেই যা আয় হত, এখন দু’টো ছেলেকে নিয়ে কী করে সংসারটা চালাব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident National Highway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE