Advertisement
E-Paper

বেতন কমল দিনে তিন টাকা, দিনভর বিক্ষোভ শ্রমিকদের

মজুরি কমল কেন, সেই প্রশ্ন তুলে কারখানা অবরোধ করে কাজ বন্ধ করে দিলেন শ্রমিকেরা। মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন। শুক্রবার রঘুনাথগ়ঞ্জের সিমেন্ট কারখানার অবস্থা সামলাতে পুলিশ আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০১:২১
কারখানার গেটে বিক্ষোভ শ্রমিকদের। —নিজস্ব চিত্র।

কারখানার গেটে বিক্ষোভ শ্রমিকদের। —নিজস্ব চিত্র।

মজুরি কমল কেন, সেই প্রশ্ন তুলে কারখানা অবরোধ করে কাজ বন্ধ করে দিলেন শ্রমিকেরা। মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন। শুক্রবার রঘুনাথগ়ঞ্জের সিমেন্ট কারখানার অবস্থা সামলাতে পুলিশ আসে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ন্যূনতম সরকারি মজুরি ২৫৫ টাকা হলেও, দিন কয়েক আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে বলে, ২৫২ টাকার বেশি মিলবে না। এ দিন সকাল থেকেই প্রায় ৪০০ শ্রমিক কারখানার গেট আটকে বসে পড়েন। মাল বোঝাই লরি আটকে যায়। রেলের খালি ওয়াগন সিমেন্ট নিতে এসে আটকে যায়।

একই মহকুমায় দু’টি সিমেন্ট কারখানায়— ফরাক্কা ও রঘুনাথগঞ্জে পৃথক বেতন পান শ্রমিকেরা। ফরাক্কার চেয়ে রঘুনাথগঞ্জ কারখানার বেতন অর্ধেক। সাধারণত জুলাই বা সেপ্টেম্বর মাসে ৮-১২ টাকা মজুরি বাড়ে। তা তো বাড়েনি। উল্টে কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে বেতন কমানো হয়।

শ্রমিকদের ক্ষোভ তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধেও। সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া রঘুনাথগঞ্জের ধলো গ্রামে ওই সিমেন্ট কারখানায় চলতি বছরের ১১ জুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের একটি মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে ওই সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে মউ চুক্তি স্বাক্ষর করেন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন, মুর্শিদাবাদ জেলার আইএনটিটিইউসি’র সভাপতি আবু সুফিয়ানও। তখনই অভিযোগ উঠেছিল চুক্তিতে শ্রমিকদের আর্থিক ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুক্রবার সেই অসন্তোষ প্রকাশ্যে আসে।

একটি অরাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক কেতাবুল শেখ-সহ শ্রমিকদের একটা বড় অংশ তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে এ দিন ক্ষোভ উগরে দেন। কেতাবুল বলেন, ‘‘চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী তৃণমূলের নেতারা শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাঁরা যে মজুরির কথা বলেছিলেন তা পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিয়োগ পত্র, পরিচয়পত্র এমন কী গেট পাস দেওয়া হবে শ্রমিকদের। কিন্তু আজও তা দেওয়া হয়নি।’’

তিনি জানান, পিএফের টাকা কাটা হচ্ছে। কিন্তু সে টাকা জমা দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। বিমার কোনও ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকদের পোশাক, সাবান, মেডিক্যালের খরচ কিছুই দেওয়া হয় না। দুই শ্রমিক দুর্ঘটনায় আহত হলেও কানাকড়িও ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা। তৃণমূলের যে নেতারা চুক্তি করেছিলেন তাঁরা এখন কোনও দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। কেতাবুল বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে। আর কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়। আমরা নিজেরাই সংগঠন চালিয়ে আমাদের দাবি আদায় করব।’’

আবু সুফিয়ান অবশ্য শ্রমিকদের উপর সব দায় চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শ্রম দফতরের আধিকারিকদের উপস্থিতিতেই চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি মতো শ্রমিকেরা ২৫৫ টাকার কম বেতন পাওয়ার কথা নয়। এখন শ্রমিকেরা চুক্তি না মানলে মানবেন না। ওরা যা ভাল বোঝেন তা করতে পারেন। আমার তাতে কিছু বলার নেই।’’

তবে ওই চুক্তি যে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী তা মানছেন তৃণমূলের জঙ্গিপুরের পর্যবেক্ষক আইনজীবী সৈয়দ সাদেক রিটু। তিনি বলেন, ‘‘কাজের দিক থেকে ফরাক্কার সঙ্গে রঘুনাথগঞ্জ কারখানার কোনও ফারাক নেই। তবুও রঘুনাথগঞ্জের শ্রমিকেরা কম বেতন পাচ্ছেন। শ্রমিকদের ভাতে মেরে কীসের স্বার্থে এই চুক্তি করা হয়েছে দলের তা তদন্ত করে দেখা উচিত। ক্ষোভ অন্যায় নয়।’’

ফরাক্কার তৃণমূলের শ্রমিক নেতা দলের জেলার সহকারি সভাপতি সোমেন পাণ্ডেও বলে, ‘‘ফরাক্কার সিমেন্ট কারখানার শ্রমিকেরা কী কী সুবিধা পান নিজে তা আবু সুফিয়ানের হাতে দাবি আকারে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তার একটিও চুক্তিতে নেই। এতে একই কাজ করে রঘুনাথগঞ্জের শ্রমিক অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন। অর্ধেক বেতন পেলে ক্ষোভ তো স্বাভাবিক।’’

কারখানার পক্ষে পারসোনেল ম্যানেজার সুমনকল্যাণ রায় অবশ্য বলেন, ‘‘শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ টাকা করে কমিয়ে দিয়েছে সরকার। চুক্তি মেনে আমরাও তাই করেছি। এখন ওদেরই নেতাদের সই করা চুক্তি ওরাই মানতে চাইছেন না।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কোনও বক্তব্য থাকলে আলোচনা করে তার সমাধান করা উচিৎ ছিল। তা না করে কারখানা অচল করে রেখেছেন শ্রমিকেরা। নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করা হয়েছে।’’

শ্রমিকদের এই বিক্ষোভকে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেন সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান ও ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। ওই দুই নেতা ফরাক্কার সিমেন্ট কারখানার দুই শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি। তাঁরা বলেন, ‘‘নিজেদের স্বার্থ না থাকলে কেউ শ্রমিকদের ভাতে মেরে এ ভাবে চুক্তি করতে পারে না। তাই এই চুক্তি নিয়ে সোরগোল উঠেছে।’’ দুই নেতারই দাবি, ‘‘নেতারা কেন এই ধরনের চুক্তিতে সই করলেন তৃণমূলকে তার জবাবদিহি করতে হবে।’’

Cement factory Agitation mainul Haq abu sufyan Trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy