Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Murshidabad

হাজার বছরের পুরনো মূর্তি পড়ে ঘরের কোণে

বিষ্ণুমূর্তির আয়ুধ বাইরে থাকে, এতে রয়েছে ভিতরে। ভূদেবীর হাতে চামর থাকে,এখানে হাতে রয়েছে দণ্ড। 

বিমান হাজরা
 সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৮
Share: Save:

কেউ মাখাচ্ছেন ঘি, কেউ দিচ্ছেন সিঁদুর,আর কেউ বা ঢালছেন দুধ। অথচ মূর্তির থাকার কথা সংগ্রহশালায়।

মনিগ্রামে বাড়ি তৈরির জন্য ভিত কাটার সময় মাটির ৫ ফুট গভীরতা থেকে উদ্ধার হয় ৪ ফুট উচ্চতার কালো পাথরের বিষ্ণু মূর্তি। দু’ফুট চওড়া ওই মূর্তির পদতলে শোভা পাচ্ছে ৪টি ছোট মূর্তি। সরকারি সংগ্রহালয়ে না গিয়ে সেই মূর্তি নিয়ে পূজার্চনা চলছে গ্রামের মন্দিরে।

মুর্শিদাবাদের জেলা মিউজিয়ামের কিউরেটর মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রবর্তী জানান, সম্ভবত দ্বাদশ শতকের মূর্তি এটি। তবে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য বিষ্ণুমূর্তি থেকে এই মূর্তিটি অনেকটাই ভিন্ন। বিষ্ণুমূর্তির আয়ুধ বাইরে থাকে, এতে রয়েছে ভিতরে। ভূদেবীর হাতে চামর থাকে,এখানে হাতে রয়েছে দণ্ড।

ভিতের মাটিতে অজস্র কালো, লাল মাটির পাত্রের টুকরো রয়েছে। এখানে খনন চালালে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন সামগ্রী মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিহাসের স্বার্থেই সেগুলি সংরক্ষণ করা দরকার।

এই বাড়ির পাশেই ঠিক ৭ মাসের মাথায় ফের বাড়ি তৈরির ভিত খুঁড়তে গিয়ে মাটির তলা থেকে উদ্ধার হয় ৩টি পাথরের মূর্তি। এর মধ্যে একটি মূর্তি দ্বিখণ্ডিত। মাটির প্রায় ৪ ফুট গভীরতা থেকে উদ্ধার হয় কালো পাথরের মূর্তিগুলি। আগের বিষ্ণুমূর্তির মতো চকচকে ও নিখুঁত নয়। বহু জায়গা ভেঙে গিয়েছে।

মনিগ্রামের পাশেই হাটপাড়া। সেখানে প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার নিদর্শন মিলেছে আগেই। সেখান থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে গয়েশাবাদ। সেখানে মিলেছে কালো পাথরে খোদাই গণেশ ও প্রস্তর নির্মিত একাধিক ভগ্ন মূর্তি

ও থালা।

২০১১ সালের ১ এপ্রিল সাগরদিঘির গয়েশাবাদ থেকে একটি ইট ভাটার মাটি কাটার সময় ভাগীরথীর নদীর পাড় থেকে ২০০ মিটার দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ৫ ফুট লম্বা ও দেড় ফুট উচ্চতার একটি কালো পাথরের চৌকাঠ খণ্ড উদ্ধার হয়। মাটির ৬ ফুট গভীরতা থেকে। সেই প্রস্তর খণ্ডের গায়ে প্রায় এক ইঞ্চি খোদাই করে গড়ে তোলা হয়েছে সুদৃশ্য গণেশ মূর্তি। মিলেছে দুটি অজ্ঞাত মূর্তির ভগ্ন প্রস্তরখণ্ড, পাথরের থালা, বাটির ভগ্নাংশ।

সেগুলি পরীক্ষার পর রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা জানান, এগুলি ভূমির যে স্তরে পাওয়া গিয়েছে সেই ভূমি প্রকৃতির স্তরগুলি পরীক্ষার পরই জনবসতির সময়কাল ও বিস্তার সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া সম্ভব। এ রজন্য ভূতত্ত্ববিদদের সাহায্য প্রয়োজন। যে এলাকায় খননের সময় এই প্রস্তর মূর্তি ও তার খণ্ডাংশ মিলেছে মূলত কাঁকুড়ে মাটি সেগুলি। গ্রামে পুকুর খুঁড়তে গিয়ে অনেকেই পেয়েছেন একাধিক বিষ্ণুমূর্তি।

লক্ষণ প্রামাণিকের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিটিও মিলেছে পুকুর খুঁড়তে গিয়েই। ৭ কিলো ওজনের দেড় ফুট উচ্চতার সেই মূর্তিটি মিলেছে ১০ ফুট পুকুরের আরও ৫ ফুট গভীরে। বাড়িতে রেখে পুজার্চনা করছেন পরিবারের লোকজন। এ ভাবেই প্রত্নসামগ্রী পড়ে রয়েছে নানা জায়গায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Ancient statue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE