জীবিত মহিলাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে জমির মালিকানা বদলের রেকর্ড করিয়ে তা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি এক রিট আবেদনের ভিত্তিতে সিআইডি-র ডিআইজিকে আদালতের নির্দেশ, এ নিয়ে ফরাক্কার বিএলএলআরও থেকে জঙ্গিপুরের এসডিএলএলআরও-সহ ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। নথিপত্র পরীক্ষার পরে তদন্ত-রিপোর্ট হাই কোর্টে জমা দিতে বলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়।
ডিআইজিকে আরও নির্দেশ, কলকাতার ভবানী ভবনে ডেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। নথি পরীক্ষায় যদি জালিয়াতি খঁুজে পাওয়া যায় তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ করতে পারবে সিআইডি।
ফরাক্কার শিবনগরের বাসিন্দা শাশ্বতী দাসকে ‘মৃত’ দেখিয়ে তাঁর জমি অন্যের নামে রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ। শাশ্বতীর অভিযোগ, তাঁর শাশুড়িকে তাঁর মেয়ে হিসেবে উত্তরাধিকারী সাজিয়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। ওই মহিলার অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কয়েক জন আধিকারিকও জড়িত। তাঁর দুই আত্মীয় এবং এলাকার এক জমি মাফিয়াও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে তাঁর দাবি।
সব জানিয়ে শাশ্বতীর পক্ষ থেকে রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিবের কাছে তদন্ত দাবি করে লিখিত আবেদন জানানো হয়। দফতরের সহকারি সচিব ২০২৪ সালের ২ মে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন মুর্শিদাবাদের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা আধিকারিক তথা এডিএম-কে। কিন্তু অভিযোগ, বিচারপতি নির্দেশ দেওয়ার সময় পর্যন্ত এই ঘটনার কোনও তদন্ত করেননি মুর্শিদাবাদ জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কোনও আধিকারিক। শাশ্বতী রবিবার বলেন, “আমি এখনও বেঁচে রয়েছি। অথচ ২০১৯ সালে দেখানো হয়েছে যে আমি তখন থেকে ২০ বছর আগে মৃত। আমার শাশুড়িকে আমার মেয়ে বলে দেখিয়ে আমার এক আত্মীয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কয়েক জনের সঙ্গে যোগসাজস করে কয়েক কোটি টাকার সম্পতি হাতিয়ে নিতে চাইছেন। আমি ফরাক্কা থানায় গিয়ে এফআইআর করেছি ২০১৯ সালে। পুলিশ আসল অভিযুক্তদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়নি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি ও আমার স্বামী দু’জনেই বৃদ্ধ। একমাত্র ছেলে ২০২১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। আতঙ্কে রয়েছি।’’ মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পি প্রমথ বলেন, “আদালতের নির্দেশ হাতে পাইনি। কেন ঘটেছে, খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)