গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
নবাবের শহরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এলে এখানে ঢুঁ দেবেনই। বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ের মিষ্টির দোকানের ছানাবড়ার স্বাদে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন বার বার। ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় আবার শহরে আসছেন রাহুল। দোকানদার ধরেই নিয়েছেন কর্মসূচির ফাঁকে তাঁর দোকানে রাহুল আসবেনই। তাই ৭ কিলোগ্রামের স্পেশ্যাল ছানাবড়া তৈরি করছেন অরুণ দাস।
সালটা ১৮৯৭। অগস্টের মাঝামাঝি। প্রতিষ্ঠা হয় সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের। সেই সময় মুর্শিদাবাদের প্রসিদ্ধ এক মণ ওজনের ছানাবড়া তৈরি করে বেলুড় মঠে নিয়ে যান স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ। বস্তুত, সেই প্রথম বার ছানাবড়া পাঠানো হয়েছিল বেলুড়ে। তার ১১৭ বছর পর বহরমপুরের ছানাবড়ার স্বাদ চেখে দেখেন রাজনীতির অন্যতম যুব আইকন রাহুল। তত দিনে অবশ্য বহরমপুরের ছানাবড়ার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে ছানাবড়া খাওয়ার আবদার করেছিলেন ‘স্নেহের রাহুল।’ প্রণবও বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে রাহুলকে নিয়ে চলে আসেন। সে দিন সাধারণ ক্রেতাদের মতো বেঞ্চে বসে তৃপ্তি করে মিষ্টি খেয়েছিলেন রাহুল। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কর্মসূচির সৌজন্যে অধীর চৌধুরীর গড়ে আসছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল। সেই খবর পাওয়া ইস্তক উত্তেজনায় ফুটছেন বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ের একটি মিষ্টির দোকানের মালিক। নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। রয়েছে ঠাসা কর্মসূচি। তার মধ্যে থেকে হয়তো দোকানের দিকে আসার সময়ও হবে না কংগ্রেস নেতার। তবুও আশা ছাড়তে রাজি নন ওই দোকানের মালিক তথা মূল কারিগর অরুণ দাস। রাহুলের জন্য তিনি ৭ কিলোগ্রামের পেল্লাই ছানাবড়া প্রস্তুত করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দোকানে আসার সময় না পেলে রোড-শো চলাকালীন ছানাবড়া প্রিয় নেতার হাতে তুলে দেব।’’ যদিও অরুণ আশাবাদী যে, রাহুল ঠিকই সময় বার করে তাঁর দোকানেই আসবেন।
১ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ সফর শেষ করে ফরাক্কা দিয়ে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করার কথা রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র। ওই দিন বহরমপুর শহরের বিএসএনএল মোড় থেকে টেক্সটাইল মোড় হয়ে কান্দির নবগ্রাম পর্যন্ত হুড খোলা গাড়িতে যাবেন রাহুল। স্থানীয় কংগ্রেস সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব রাহুলের কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্য দিকে, অরুণও তাঁর ‘জিআই’ তকমা পাওয়া মিষ্টি নিয়ে তৈরি হচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার দোকানে এসেছিলেন রাহুল। অধীরদাও ছিলেন সঙ্গে। প্রথমে তো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। দাদার কথামতো সাধারণ ছানাবড়াই খাইয়েছিলাম সে বার। পরের বার আট-নয় কেজির ছানাবড়া তুলে দিয়েছিলাম ওঁর হাতে।” হাতের ইশারায় রাহুলকে যে প্লেটে খাইয়েছিলেন, সেটাও দেখালেন অরুণ। পাশেই তোলা রয়েছে যে গেলাস থেকে প্রণব জলপান করেছিলেন। অরুণের গলায় উত্তেজনা। তিনি বলেন, “এ বার উনি (রাহুল) এলে হ্যাটট্রিক হবে।’’
মিষ্টি দোকানি অরুণের এই ইচ্ছা এবং প্রস্তুতির খবর আছে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “মিষ্টির দোকানের মালিক এসেছিলেন আমাদের কাছে। কিন্তু এ বার বোধহয় নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে না-ও যেতে পারেন উনি। তবে রাহুলজি বহরমপুরের মিষ্টি খেলে তো আমরা ভীষণ খুশি হব। দেখা যাক...।”
মুর্শিদাবাদে রাহুল আসার আগের দিনই জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বহরমপুর স্টেডিয়ামে রাহুলদের রাত্রিযাপনের অনুমতি বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। সেই বিতর্কের মধ্যে শেষমেশ রাহুলের রাত্রিবাসের একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বহরমপুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে হাটগাছা নবগ্রামের একটি স্কুলের মাঠে রাহুল এবং তাঁর টিম থাকবেন। অরুণ বলছেন, ‘‘তার মধ্যেই এক বার ঠিকই আসবেন রাহুলজি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy