Advertisement
১৭ মে ২০২৪
TMC

অ্যাডভান্টেজ খলিলুর, ফল্ট জাকির!

জাকিরের অনুগামীরাও পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সভার ফেস্টুনে মন্ত্রীর ছবি বাদ দিয়ে কেন সাংসদের ছবি? দলীয় সভায় তা নিয়ে বাদানুবাদ কম হয়নি।

খলিলুর রহমান ও জাকির হোসেন

খলিলুর রহমান ও জাকির হোসেন

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৩:০৯
Share: Save:

দলের জেলা নেতাদের অনেকেই তাঁকে উপেক্ষা করছেন। অভিযোগটা সরাসরি না হলেও, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানের ইঙ্গিতটা যাঁর দিকে ছিল তিনি মন্ত্রী জাকির হোসেন। জেলা নেতাদের তা জানতে বাকি ছিল না।
জাকিরের অনুগামীরাও পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সভার ফেস্টুনে মন্ত্রীর ছবি বাদ দিয়ে কেন সাংসদের ছবি? দলীয় সভায় তা নিয়ে বাদানুবাদ কম হয়নি। খলিলুরের অভিযোগ, ‘‘এত দিন সংগঠনের কোনও পদে ছিলাম না। তাই জানতে পারতাম না দলের কোথায় কী কর্মসূচি রয়েছে, জঙ্গিপুরে সভা-সমিতিতে আমাকে ডাকা হত না। আমি চাই দলে সবাই যোগ্য সম্মান পান।’’
দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খানের সামনেই, রঘুনাথগঞ্জে এক দলীয় সভায় জাকির-খলিলুর কাজিয়ার রেশ থিতিয়ে যাওয়ার আগেই, বৃহস্পতিবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মুর্শিদাবাদ জেলায় দলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ঘোষণা করায় লকডাউনের আবহে যে অ্যাডভান্টেজ-খলিলুর, বলাবাহুল্য। এবং অবশ্যই চাপে পড়লেন মন্ত্রী জাকির হোসেন এবং শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। দলের অন্দরের খবর, এত দিন এই দুই নেতার ডাকা কোনও সভা সমিতিতেই ডাক পেতেন না জঙ্গিপুরের সাংসদ। এ বার তাঁর হাতে মুর্শিদাবাদের ৮টি বিধানসভার দেখভালের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় দলের অনেকেই মনে করছেন, খলিলুরের ভিত শক্ত হল।
জঙ্গিপুর মহকুমার তৃণমূল সভাপতি বিকাশ নন্দ বলছেন, “জেলার ২২টি বিধানসভার মধ্যে ৮টিতাঁর দেখভালে থাকবে, এ কী কম কথা! বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর গুরুত্ব তো বাড়লই। দলের বহু নেতাই বিভিন্ন জায়গায় সভা করলেও সাংসদ হলেও তাঁকে ডাকা হত না। এখন জঙ্গিপুরে দল সম্পর্কে কোন কর্মসূচি হলে খলিলুর রহমানকে বাদ দেওয়া যাবে না।’’
শমসেরগঞ্জের বাসিন্দা খলিলুরের সঙ্গে দলের স্থানীয় বিধায়ক আমিরুল ইসলামের সম্পর্কও ‘মধুর’! খলিলুরের ভাইপো আনারুল হকের সঙ্গে একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে আমিরুলের দলবল। আমিরুল অনুগতদের বিরুদ্ধে খলিলুরের বাড়িতে হামলা এবং আনারুলের ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ নিয়েও এক সময় জেলা তোলপাড় হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে, মাত্র ১৩০০ ভোটে জয়ী আমিরুল এর ফলে যথেষ্ট চাপে পড়লেন বলেই মনে করছেন দলের জেলা নেতারা।
আমিরুল অবশ্য বলছেন, “দল যা ভাল বুঝেছে তাই করেছে। তবে, একটা কথা মনে রাখা দরকার, আমরা সবাই যদি আন্তরিক ভাবে কাজ করি তবেই দল শক্তিশালী হবে।’’ তাঁর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত মন্ত্রী জাকির হোসেন অবশ্য এই পরিবর্তন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। বলেন, “দলনেত্রী যা ভাল বুঝেছেন করেছেন। তাঁর নির্দেশ মেনে চলি, সেটাই চলব আগামী দিনে।”
জাকির-খলিলুর আকচাআকচি অবশ্য নতুন নয়। তামাক শিল্পের দুনিয়ায় পরিচিত এই দুই উদ্যোগপতির রেষারাষে ব্যবসায়ীক।
রাজনীতির উঠোনে জাকির পা রাখার পরে তাই খলিলুরের তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিছক সময়ের অপেক্ষা ছিল বলেই মনে করেন দলের তাবড় নেতারা। তবে, ব্যবসার জগতে তাঁদের চাপা রেষারেষি রাজনীতির আঙিনাতেও চাপা থাকেনি। বিরোধীদের অবশ্য কাটাক্ষ, অ্যাডভান্টেজ খলিলুর নিছকই পার্টি ফান্ডের খাতিরে। জেলার এক শীর্য কংগ্রেস নেতা বলছেন, ‘‘সামনে নির্বাচন, এখন খলিলুরকে ব্রাত্য রাখা যায়। দলে তাঁর পদমর্যাদা বাড়ল
সে কারণেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TCM Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE