Advertisement
০৩ অক্টোবর ২০২৩
Train accident

‘জ্ঞান ফিরতে দেখি, গোটা কামরা রক্তে ভিজে গিয়েছে’ 

খড়গ্রাম থানার মহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সের গোলাপ শেখ বছর কয়েক ধরেই চেন্নাইয়ে একটি কাগজ কারখানায় কাজ করেন।

ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত গোলাপ শেখের চিকিৎসা চলছে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত গোলাপ শেখের চিকিৎসা চলছে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক সাহা
খড়গ্রাম: শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ ০৯:১৮
Share: Save:

ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ওড়িশার বাহানাগা বাজার স্টেশনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বরাতজোরে প্রাণে বাঁচলেও দু’দিন পরেও সেই ঘটনার ক্ষত মনে এখনও দগদগে গোলাপ শেখদের। ররিবারই গ্রামে ফিরেছেন গোলাপ এবং তাঁর আট সঙ্গী।

খড়গ্রাম থানার মহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সের গোলাপ শেখ বছর কয়েক ধরেই চেন্নাইয়ে একটি কাগজ কারখানায় কাজ করেন। দিনকয়েক আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। শুক্রবার ফের কাজে যোগ দিতে তামিলনাড়ু যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওই থানারই আরও আট যুবক। পরিযায়ী শ্রমিক। সকলেই রবিবার বাড়ি ফিরেছেন, সকলেই সামান্য জখম হয়ে। কিন্তু গোলাপের কাঁধের কাছে হাড়ে চিড় ফাট দেখা গিয়েছে। দুর্ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এ দিন গোলাপ বলেন, ‘‘ট্রেনের সামনের দিকে এস ৪ কামরায় ছিলাম আমরা। ট্রেন বালেশ্বর স্টেশন ছেড়েছিল কিছুক্ষণ আগেই।সন্ধে নামছে। আমরা কয়েক জন নীচের বার্থে বসে গল্পগুজব করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ। গোটা কামরাটা ধুলোয় ভরে গেল। তারপর আর কিছু মনে নেই।’’ দুর্ঘটনার অভিঘাতে কয়েক মিনিটের জন্য সংজ্ঞা হারান গোলাপ। ফের যখন তাঁর জ্ঞান ফেরে, দেখেন কামরা রক্তে ভিজে গিয়েছে। যেখানে বসে ছিলেন সেখান থেকে অন্য দিকে ছইটকে পড়ে রয়েছেন তিনি। গোলাপ বলেন, “এক নিমেষে সব যেন কেমন ওলটপালট হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি, কামরার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত। হাজার হাজার মানুষের কান্নার আওয়াজ আর অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন কানে আসছিল।’’ রবিবার সকালে বাড়ি ফেরার পর পরিবারের লোকজনদের দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি গোলাপের সঙ্গী আব্দুল গফফর শেখ। তিনি বলেন, “গোলাপকে আমরা প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে দেখি একদিকে পড়ে আছে। মাথায় জল দিতেই জ্ঞান ফেরে। স্থানীয় কয়েক জনের সহযোগিতায় ওকে কামরা থেকে বের করে আনি।’’

বাকিরা সামান্য আঘাত পেলেও গোলাপের কাঁধের হাড়় ভেঙে গিয়েছে। এ দিন বাড়ি ফেরার পর পরিবারের লোকজন তাঁকে কান্দি হাসপাতালে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। সেখানেও বারবারই দুর্ঘটনার কথা তিনি বলছিলেন। গোলাপের কথায়, ‘‘আমাদের কামরায় একজন হিন্দিভাষী বয়স্ক ছিলেন। তিনি আমাদের গল্পে যোগ দিচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর দেখি তিনি মৃত পড়ে রয়েছেন। একটু আগে যে মানুষটা হাসিঠাট্টা করছিলেন এক মুহূর্তে তিনি মৃতদেহ হয়ে গেলেন।‘‘ গোলাপের স্ত্রী রানি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে সারারাত ধরে ওর ফোনের অপেক্ষা করেছি। কথা হল মাঝরাতে। মানুষটা বেঁচে ফিরেছে, সেটাই সব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE