E-Paper

মফস্সলে বহু স্কুলে নেই একাধিক বিষয়ের শিক্ষক

একই অবস্থা নওদার আমতলা অন্নদামণি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। ওই বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকপদ ৪২। কিন্তু সেখানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৬ জন।

মফিদুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক সঙ্কটে জেলার বহু উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিভিন্ন উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়েছে পড়ুয়া। অনেক মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকদের।

নওদার প্রত্যন্ত গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ডাকাতিয়াপোঁতা হাই স্কুল। গত বছর ওই বিদ্যালয় থেকে দশ জন শিক্ষক ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে বদলি হয়েছেন শহর বা শহরতলির বিদ্যালয়ে। অনেকে বদলি নিয়েছেন বাড়ির কাছাকাছি বিদ্যালয়ে। তবে নতুন করে কোনও শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেননি। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক সহ ওই বিদ্যালয়ে রয়েছেন মাত্র ছ'জন শিক্ষক। রয়েছেন দু’জন পার্শ্বশিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ে নেই ইংরেজি, গণিত, জীবনবিজ্ঞান, ইতিহাসের মতো বিষয় পড়ানোর মতো কোনও শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ্তেন্দু মণ্ডল বলেন, ”একাধিক বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষক না থাকার কারণে এ বছর বিভিন্ন শ্রেণির ১৬ জন ছাত্রছাত্রী অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।”

একই অবস্থা নওদার আমতলা অন্নদামণি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। ওই বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকপদ ৪২। কিন্তু সেখানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। সম্প্রতি ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে দশ জন শিক্ষক অন্যত্র বদলি হলেও নতুন করে কোনও শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেননি। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি, ভুগোলের মতো বিষয়ের শিক্ষক মাত্র এক জন করে। উচ্চ মাধ্যমিকে ইতিহাস, ইংরেজি, ভূগোল, শিক্ষা বিজ্ঞান পড়ানোর কোনও শিক্ষক নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমর্তভান খাতুন বলেন, ”শিক্ষক না থাকায় ঠিক মতো পঠনপাঠন চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। কয়েকজন অতিথি শিক্ষক নিয়ে ক্লাস চালাতে হচ্ছে।”

হরিহরপাড়ার স্বরূপপুর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক সহ ন'জন শিক্ষক ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পে বদলি হয়েছেন। এসেছেন মাত্র তিন জন শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ে ১৬টি শিক্ষকপদ ফাঁকা রয়েছে। তার মধ্যে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ফাঁকা রয়েছে ১২টি শিক্ষকপদ। ওই বিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ইতিহাস, শিক্ষা বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল বিষয় পড়ানোর মতো কোনও শিক্ষক নেই। ছ'জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে কোনও মতে চলছে উচ্চমাধ্যমিকের পঠনপাঠন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে আবেদন পূরণের সময় ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি টাকায় দেওয়া হচ্ছে অতিথি শিক্ষকদের সাম্মানিক। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক যাদবচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘একাধিক বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় অতিথি শিক্ষক দিয়ে পঠনপাঠন চালাতে হচ্ছে।”

শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে হরিহরপাড়ার সাহাজাদপুর হাইস্কুল, মালোপাড়া হাইস্কুল, নওদার শ্যামনগর হাইস্কুল সহ গ্রামাঞ্চলের বহু বিদ্যালয়।

শিক্ষক সংগঠন ডব্লুটিএ’র জেলা সভাপতি প্রদীপ নারায়ণ রায় বলেন, “‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের বহু বিদ্যালয় শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করা।”

মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সফিউজ্জামান শেখ বলেন, “এ কথা সত্য যে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের তরফে বিষয়টি রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে জানাব। চাইব সরকার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সদর্থক পদক্ষেপ নেবে।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর কুমার শীল বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ হলে সমস্যার সমাধান হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hariharpara

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy