Advertisement
E-Paper

ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেন পাকা বাড়ির মালিকেরা

এ ব্যাপারে কল্যাণী ব্লকের বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নারায়ণ হালদার।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৫:৪৬
উপর থেকে নীচে যথাক্রমে অতন্দ্র মৃধার বাড়ি, সোমনাথ অধিকারী এবং মুকুল সাঁতরার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

উপর থেকে নীচে যথাক্রমে অতন্দ্র মৃধার বাড়ি, সোমনাথ অধিকারী এবং মুকুল সাঁতরার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

ঝকঝকে সুন্দর রঙ করা পাকা বাড়ি। গায়ে ঝড়ঝাপটের চিহ্নমাত্র নেই। কিন্তু বাড়ির মালিকের অ্যাকাউন্টে আমপান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ টাকা ঢুকে গিয়েছে!

ঘর্ণিঝড়ে ঘরহারাদের মাথাপিছু ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। টাকা সরাসরি চলে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের বদলে একতলা বা দোতলা পাকা বাড়ির মালিকেরা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বলে মিথ্যা দাবি করে টাকা পেয়ে গিয়েছেন। এ ব্যাপারে কল্যাণী ব্লকের বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নারায়ণ হালদার।

কল্যাণীর মদনপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মাজদিয়ায় ২৮ জনের ঘর আমপানে পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে বলে রিপোর্ট জমা পড়েছে কল্যাণী ব্লকে। তার ভিত্তিতে ব্লক স্তর থেকে তাঁদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ২০ হাজার টাকা চলে গিয়েছে। অনেকে সেই টাকা তুলেও নিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, ওই ২৮ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জনের পাকাপোক্ত ইটের গাঁথনিওয়ালা বাড়ি রয়েছে। এবং আমপানের সেই বাড়ির সামান্যতম ক্ষতিও হয়নি। শুধু শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁরা ওই টাকা পেয়েছেন। অভিযোগকারী নারায়ণ হালদারের কথায়, ‘‘তালিকা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এঁরা প্রত্যেকে এলাকার সম্পন্ন মানুষ। পাকা বাড়ির মালিক। বিষয়টি জেনেই বিডিও ও মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। এটা একটা মারাত্মক দুর্নীতি চলছে।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বাপ্পা অধিকারীর দাদা সোমনাথ অধিকারী ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। পেশায় ব্যবসায়ী সোমনাথবাবুর বাড়ি বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, আট কামরার দোতলা বাড়ি তাঁর। আমপান সেই বাড়ির বিন্দুমাত্র ক্ষতি করেনি। সোমনাথবাবু অবশ্য নির্বিকার ভাবেই বললেন, ‘‘সবকিছু তো মানুষের জন্যই। তাই সরকারি টাকা আমি নিয়েছি।’’ কিন্তু ওই টাকা দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল বলে জানানো হলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকারের টাকা যে সুযোগ পাবে সেই নেবে। এতে গরিব-বড়লোকের কী আছে!’’

মাজদিয়ার সাঁতরাপাড়ায় পঞ্চায়েত সদস্য পবিত্র সাঁতরাও ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। এ দিন গিয়ে দেখা গেল, তাঁরও দিব্যি সুন্দর রঙ করা দোতলায় বাড়ি। তাঁর স্ত্রী মুকুল সাঁতরার কথায়, ‘‘রান্নাঘরের চারটে টালি ভেঙে গিয়েছে। ওই টাকার থেকে ২০০ টাকা খরচ করে টালি কিনবো। বাকি টাকা ব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখব!’’ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ এখন মনে হচ্ছে, টাকাটা নেওয়া উচিত হয়নি। আসলে সেই সময় ভেবেছিলাম, রাজনৈতিক ক্ষমতা যখন আছে তখন নিয়ে নিই!’’

ওই গ্রামেরই অমিত ও অতন্দ্র মৃধা নামে দুই ভাই-ও ঘর ভাঙার টাকা পেয়েছেন। তাঁদের বাড়ি গিয়েও দেখা গেল, দু’জনেরই পাকাপোক্ত ঘর। অতন্দ্রর স্ত্রী প্রতিমা বলেন, ‘‘বাড়ি আছে ঠিকই কিন্তু সংসারটা কিছুদিন ধরে খুব একটা সচ্ছল ভাবে চলছিল না। তাই সুযোগ বুঝে টাকাটা নিয়েই নিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে, টাকাটা গরিবেরা পেলেই ভাল হত।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের কুমুদ সরকারকে ফোন করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। ওই এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের রূপালি সাহা-র কথায়, ‘‘সত্যিই পঞ্চায়েত এ সব করেছে। এর জবাব পঞ্চায়েতই দিতে পারবে।’’

ব্লক অফিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, অন্যের ভাঙা ঘরের ছবি দেখিয়ে কিছু লোক টাকার জন্য আবেদন করে সরকারি টাকা নিয়েছেন। একাধিক অভিযোগ পেয়ে এখন আধিকারিকেরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখছেন। কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পঙ্কজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘আমিও ঘটনাটি শুনেছি। বিডিও-কে বলেছি। এর তদন্ত হওয়া উচিত। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।’’

এ ব্যাপারে কল্যাণীর বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও চলছে। রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ না হলে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।’’

Cyclone Amphan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy