মশা সেজে ডেঙ্গি প্রতিরোধের পাঠ। মণীন্দ্রনগরে। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক
হাঁটুতে থুতনি রেখে ঝিমোচ্ছেন বৃদ্ধ, ‘‘অত জানিনে বাপু, ডেঙ্গি নামটা শুনিচি গো, তবি কী কইরি হয় জানব কেমনে!’’ বেশ কর্কশ শোনায় গলাটা। আখতার আলি প্রশ্নটায় বেশ বিরক্ত। দু’পা এগোতেই সাগিনা বিবির মুখোমুখি। মুখে কাপড় ঢেকে, যেন বেজায় লজ্জা পেয়েছেন ভঙ্গিতে বলছেন, ‘‘ওই পোকা-টোকায় কামড়ালে হয় বলে শুনেছি, অত কি গাঁয়ের মানুষ জানে?’’ পাল্টা একটা নিরীহ প্রশ্ন রাখছেন তিনি।
ডেঙ্গির নামমাহাত্ম্যের সঙ্গে একটা আবছা পরিচয় থাকলেও তার উৎসটা এখনও ধরতে পারেনি মণীন্দ্রনগর। আর তাই, বুধবার নীগরবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেপুলেদের নিয়ে গ্রাম ঘুরে সচেতনতার ক্লাস করতে গিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন শিক্ষকেরা।
গ্রামের মানুষজনকে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে গিয়ে তাঁরা দেখলেন, মশা এবং ডেঙ্গির মধ্যে কোনও যোগসূত্রের কথা জানেনই না মণীন্দ্রনগর। মশারির সঙ্গে তাই আলাপ তো দূরস্থান, জমা জল, এঁদো আবর্জনা, ঝোপঝাড়— মশার আঁতুরঘর সাবাড় করার কোনও সচেতনতাই দানা বাঁধেনি আস্ত গ্রামের কারও মধ্যেই।
তাঁরা শুধু জানেন, জ্বর হলে পাড়ার আনসার হাকিমের দ্বারস্থ হওয়া আবশ্যক। ঘোর লাগলে মহকুমা হাসপাতাল।
স্কুলের শিক্ষক সঞ্জীব সাহা বলছেন, ‘‘ভাবতে পারেন, শহরের প্রায় লাগোয়া ওই গ্রামে মশার সঙ্গে ডেঙ্গি যে এক সুতোয় জড়িয়ে, তাই জানেন না ওঁরা। আমরা নিজেদের উদ্যোগে এই সভা করতে গিয়ে দেখেছি, গ্রাম এখনও গ্রামেই পড়ে রয়েছে!’’ খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, মণীন্দ্রনগরেই ডেঙ্গির থাবায় মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক জন।
ছেলেপুলেদের নিয়ে তাই ওই স্কুলে শিক্ষকেরা রীতিমতো নাটক করে বুঝিয়ে এসেছেন, ডেঙ্গির ভয়াবহতা। গ্রামের মানুষজনকে দিয়ে এসেছেন মশারি, ডেঙ্গি প্রতিষেধক। স্কুলের প্রধানশিক্ষক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকায় অনেকেই পিছিয়ে পড়া। তাঁদের অনেকে বাইরে কাজ করতে যান। কিন্তু ডেঙ্গির ভয়াবহতা সম্পর্কে কোনও বার্তাই তাঁদের কাছে এখনও পর্যন্ত পৌঁছয়নি।’’
স্কুলের ছাত্রেরা ডেঙ্গি বাহক এডিশ মশা সেজে এ দিন দিনভর বুঝিয়ে গেলেন সাগিনা বিবি, জেসমিন বিবি, অনিতা দাস’দের। কিন্তু তাতে কি হুঁশ ফিরল?
জেসমিন বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস মাস্টারমশাইরা এলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy