Advertisement
০৯ মে ২০২৪
Jalangi River in Danger

জলঙ্গি বাঁচাতে ১৩৮ কিমি পদযাত্রা

একটা সময়ে নদিয়া জেলার ভিতর দিয়ে বয়ে যেত ছোট-বড় অংখ্য নদী। অজস্র বিল, খাল, নালা ভর্তি জল। সেখানে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা মাছ ছিল জেলার মানুষের রোজকার খাদ্য।

জলঙ্গি নদী বাঁচাতে পদযাত্রা।কৃষ্ণনগরে।

জলঙ্গি নদী বাঁচাতে পদযাত্রা।কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৫
Share: Save:

শুকিয়ে যাচ্ছে জেলার খাল, বিল, নদী-নালা। জলস্তর নেমে যাচ্ছে হু-হু করে। জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকই বর্তমানে বিপজ্জনক সীমার নীচে চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, এখনও পর্যন্ত জেলার যে সামান্য ক’টি নদীনালা কোনও মতে বেঁচে আছে, তাদের রক্ষা করে স্বাভাবিক গতিপথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পথ হাঁটলেন নদীপ্রেমীরা। সাত দিনে তাঁরা সকলে মিলে প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন। সে দলে যেমন ছিলেন চিকিৎসক, শিক্ষক-সহ সমাজ সচেতন নাগরিকেরা, পাশাপাশি ওই একই দাবিতে পথ হাঁটলেন এলাকার মৎস্যজীবী থেকে পড়ুয়ারাও। সকলেরই একটাই দাবি— নদী বাঁচিয়ে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে হবে।

একটা সময়ে নদিয়া জেলার ভিতর দিয়ে বয়ে যেত ছোট-বড় অংখ্য নদী। অজস্র বিল, খাল, নালা ভর্তি জল। সেখানে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা মাছ ছিল জেলার মানুষের রোজকার খাদ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক নদী মজে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। খাল, নালা, বিল শুকিয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে কোথাও চাষের জমি, আবার কোথাও ইটের ভাটা তৈরি হয়েছে। তার পরেও জলঙ্গি, চূর্ণী, ইছামতি, মাথাভাঙা, ভৈরবের মতো নদী এখনও টিকে আছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে আগামী দিনে এই জেলার মানুষ প্রবল জলকষ্টে ভুগতে চলেছেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই পরিস্থিতিতে নদীর জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন জেলার একাধিক পরিবেশ ও নদীপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা।

এর আগেও জলঙ্গি নদীকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন সচেতন মানুষ। সাইকেল মিছিল থেকে শুরু করে, বাঁধাল খোলার দাবি নিয়ে মৎস্যজীবীদের স্মারকলিপি জমা দেওয়া, প্রায় দশ হাজার পড়ুয়াকে দিয়ে জেলাশাসক, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার মতো ধারাবাহিক, একাধিক অন্দোলন-কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ বার সরাসরি নদীর জন্য পথ হাঁটা শুরু করলেন
জেলার মানুষ।

মুর্শিদাবাদের কাছে চরমধুবনা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে জলঙ্গি নদী সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অনেক আগেই উৎসমুখ থেকে করিমপুর ২ ব্লকের চরমোক্তারপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার জলঙ্গি কার্যত হারিয়ে গিয়েছে। এই চরমোক্তারপুর এলাকায় ভৈরব ও জলঙ্গি মিলিত হয়েছে। এখান থেকে স্বরূপগঞ্জে ভাগীরথী নদীতে মেশা পর্যন্ত প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার নদীর গতিপথ কিছুটা হলেও বেঁচে আছে। যদিও এখন নানা ভাবে ওই গতিপথ থামানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ।

তাই নদী বাঁচাতে ২ জানুয়ারি চরমোক্তারপুর থেকে জলঙ্গি নদীর পাড় ধরে হাঁটা শুরু করেছেন অনুপ হালদার, রঞ্জন দাস, শঙ্খশুভ চক্রবর্তী, জিমান হোসেন, তন্ময় সরকার ও বিশ্বজিৎ সমজুমদারেরা। সঙ্গে হাঁটছেন নদী তীরের বাসিন্দারাও। হাঁটা চলছে নদীর দুই তীরে মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার উপর দিয়ে। হাঁটার পথে পথসভা, লিফলেট বিলি, স্কুলে ঢুকে পড়ুয়াদের সচেতন করাও চলছে। ওই পথে সঙ্গী হয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী, পরিবেশ ও নদীপ্রেমীরা। মূলত, ‘দ্য গ্রিন ওয়াক’, ‘বিজ্ঞান অন্বেষক পত্রিকা’ ও ‘সেভ জলঙ্গি’র উদ্যোগে ওই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি, একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অংশ নেন এই কর্মসূতিতে। সেভ জলঙ্গির সভাপতি যতন রায় চৌধুরী বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নদী, জল ও দূষণহীন পরিবেশের সুরক্ষা আদায় এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য।” আজ, সোমবার নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ এসে থামবে এই নদী বাঁচানোর পদযাত্রা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE