Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Kalyani Gandhi Memorial Hospital

চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ অস্ত্রোপচার, আইসিসিইউ

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কল্যাণীতে গড়ে ওঠে রাজ্যের একমাত্র সরকারি হৃদ্‌রোগের হাসপাতাল।

রাজ্যের একমাত্র সরকারি হার্টের হাসপাতাল গান্ধী মেমোরিয়াল। বুধবার। কল্যাণীতে।

রাজ্যের একমাত্র সরকারি হার্টের হাসপাতাল গান্ধী মেমোরিয়াল। বুধবার। কল্যাণীতে। ছবি:সুদেব দাস।

সুদেব দাস
কল্যাণী শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৯:২৫
Share: Save:

রাজ্যের একমাত্র সরকারি হৃদ্‌রোগের হাসপাতাল গান্ধী মেমোরিয়াল। অথচ, এই হাসপাতালেই প্রায় দেড় বছর ধরে চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ রয়েছে ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’। অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীদের মধ্যে যাঁদের ওই ধরনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, তাঁদের হাসপাতালের তরফে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৩৫০ শয্যার সরকারি হৃদ্‌রোগের হাসপাতালে এক জনও ওপেন হার্ট সার্জেন না থাকার বিষয়টি নিয়েও ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের একাংশ। শুধু তাই নয়, প্রায় দুই বছর আগে এই হাসপাতালে ২৪ শয্যার নতুন ইনটেনসিভ করনারি কেয়ার ইউনিট বা আইসিসিইউ চালু করার কথা থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কল্যাণীতে গড়ে ওঠে রাজ্যের একমাত্র সরকারি হৃদ্‌রোগের হাসপাতাল। জানা গিয়েছে, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ছাড়াও পূর্ব ভারতের একাংশের মানুষ এক সময়ে নিখরচায় হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা করাতে এই হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল ছিলেন। পরবর্তীতে সময় যত গড়িয়েছে, হাসপাতালের পরিকাঠামোর ততই অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের আগে চিকিৎসকের অভাবে বেশ কিছু দিন এখানে বন্ধ ছিল ওপেন হার্ট সার্জারি। ওই বছর শেষের দিকে এক জন কার্ডিওথোরাসিস চিকিৎসককে দিয়ে কোনও মতে ওই সার্জারি বিভাগ চালু করে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু সেই চিকিৎসকও ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে অবসর নিয়েছেন। তার পর থেকেই হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে ওপেন হার্ট সার্জারির কাজ। বর্তমানে এনজিওগ্রাফি, প্রেসমিকার বসানোর মতো পরিষেবা অবশ্য মিলছে।

হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, প্রতি দিনই বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা করাতে এখানে আসছেন। তাঁদের বেশির ভাগই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া। যাঁদের ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন, তাঁদের বাধ্য হয়ে কলকাতার বড় কোনও সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হচ্ছে। অন্য দিকে, প্রায় দুই বছর আগে হাসপাতালে নতুন করে ২৪ শয্যার আইসিসিইউ বিভাগ তৈরি হলেও তা চালুই করা যায়নি। প্রায় কোটি টাকার যন্ত্রাংশ কার্যত পড়ে নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করে রোগীর আত্মীয়দের অনেকেই বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ আইসিসিইউ বিভাগ মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পরিবর্তে নিজেই এখন কোমায় চলে গিয়েছে! জানা গিয়েছে, পুরনো পরিকাঠামোয় থাকা ১২ শয্যার আইসিসিইউ ওয়ার্ডের উপরে নির্ভর করে কোনও রকম পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। আবার, অনেক সময়ে ওই ১২ শয্যার আইসিসিইউ ওয়ার্ডে ঠাঁই না হওয়ায় রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের জিবন্তী এলাকার বাসিন্দা বছর ৭৫ আশিক শেখ। তাঁর ছেলে আলতাব শেখ বলেন, ‘‘বহরমপুর হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে হৃদ্‌রোগের হাসপাতালে এসেছি। এখানেও চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এত বড় হাসপাতাল থাকলেও অস্ত্রোপচার এখানে হবে না। কারণ, চিকিৎসকই নেই।’’

ক্ষুব্ধ আরও এক রোগীর আত্মীয় হুগলির সুগন্ধার বাসিন্দা নিলয় সরকার বলেন, ‘‘দেড় বছর একটা সরকারি হৃদ্‌রোগের হাসপাতালে ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি প্রমাণ করে, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! নীল-সাদা রং করা হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের পরিষেবা আর মেলে না।’’

কোথায় সমস্যা? কেন বন্ধ রয়েছে ওপেন পার্ট সার্জারি? গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট আশিস মৈত্র বলেন, ‘‘কার্ডিওথোরাসিস চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে।’’

তাঁর আরও দাবি, ‘‘নতুন আইসিসিইউ ওয়ার্ডটি পূর্ত দফতরের (বিদ্যুৎ) গাফিলতির কারণেই চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এই বিষয়টিও স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।’’

রাজ্যের একমাত্র সরকারি হার্টের হাসপাতাল গান্ধী মেমোরিয়াল। বুধবার। কল্যাণীতে।ছবি:সুদেব দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE