বেলডাঙা স্টেশনে জ্বলছে ট্রেন।—ছবি পিটিআই।
ট্রেনের কামরাগুলো হাতের তেলোর মতো চেনা হয়ে গিয়েছে তাঁর। লালগোলা থেকে বেথুয়াডহরি— এই চেনা পথে সাতসকাল থেকে শেষ বিকেল। পনেরো বছরে এই অভ্যস্ত ট্রেনযাপনে কোনও ছেদ পড়েনি। এ বার পড়ল, পাক্কা পাঁচ দিন। ঘরের এক কোণায় তাঁর চাল আর চিঁড়ে ভাজার বস্তাগুলো চুপ করে আছে।
লালগোলা থেকে সাতসকালে চালভাজা-কাজু-পাঁপড়-চিঁড়েভাজা নিয়ে উঠে পড়ে আস্ত দিনটা ট্রেনের কামরা থেকে কামরায় ফিরি করে বিকেলের শিয়ালদহ-লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধরে ফিরে আসা। লালগোলার বাচ্চু হালদার বলছেন, ‘‘হকারি করে ক’টা আর টাকা হয়! আস্ত সংসারটা চলে ওই আয়ে। আর তো পেরে উঠছি না দাদা।’’ সারা দিনে হাড়ভাঙা খাটুনির পরে আয় মেরেকেটে ২৫০ টাকা। বাচ্চু বলছেন, ‘‘এ ভাবে কি দিন চলে বলুন তো!’’
লালগোলার শ্রীবাস হালদারও ট্রেনে ফিরি করেন নানা শুকনো খাবার। লালগোলা স্টেশন থেকে সকাল ১১টায় ৬৩১০৪ ডাউন মেমু লোকাল ধরে চলে যাওয়া, তার পরে রানাঘাট থেকে কামরা থেকে কামরায় ঘুরে ফিরে আসা। বাড়িতে তিন ভাই ও বাবা-মা। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। চার দিন থেকে ট্রেন বন্ধ থাকায় পেটে কিল দিয়ে বসে আছি। ভাবছি এ বার হকারি ছেড়ে দেব।’’ বহরমপুর স্টেশনে সংবাদপত্র বিক্রি করেন অমিত দে। প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে শুক্রবার বিকেল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সামান্য যে টাকা আয় করতেন তিনি তা-ও বন্ধ। অমিত বলছেন, ‘‘রেলকে কেন্দ্র করেই আমার বাঁচা। কিন্তু সেই রেলই অচল হয়ে গেলে পেট চলবে কী করে বলুন তো!’’
নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশ হতেই উত্তপ্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদ। বিক্ষোভের আঁচ সব থেকে বেশি পড়েছে ট্রেনের উপরে। বেলডাঙা, লালগোলা, নিমতিতা, মণিগ্রাম— একের পর এক স্টেশন পুড়ে খাক। লালগোলার কৃষ্ণপুর স্টেশনের কারশেডে পুড়ে গিয়েছে একাধিক ট্রেন। আর তার জেরে থমকে গিয়েছে ট্রেন-হকারদের রুজি। বেঙ্গল রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স অ্যান্ড হকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পুণ্ডরীকাক্ষ কীর্তনীয়া বলছেন, ‘‘নিত্যযাত্রী থেকে হকার সকলেই সমস্যায় পড়েছি। এ বাবে চললে গরিব হকার ভাইয়েরা বাঁচবে কী করে বলুন তো! আমরা ডিআরএমের কাছে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছি।’’
প্রগতিশীল রেলওয়ে হকার্স অ্যান্ড গার্মেন্টস ইউনিয়নের তাহেরপুর শাখার সহ সম্পাদক রবি দাস বলেন, ‘‘নদিয়া-মুর্শিদাবাদের কয়েক হাজার হকার ট্রেনের উপর নির্ভরশীল। ট্রেনে জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর সেই ট্রেন বন্ধ থাকায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। কী করে আমাদের সংসার চলবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy