Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্রশ্ন একটাই, ডিম ভরা না ছাড়া

সত্যেন দত্তের ‘ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে, নাচছে ইলিশ মাছ’— এখন এমনই সহজ-সরল দামে ফিরেছে বাজারে। ছড়ানো কলাপাতায় স্তূপীকৃত ইলিশ। সকালের রোদে চকচক করছে রুপোলি শস্য। বেলা বাড়তেই কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর, বাজারে ভন ভন করছে ক্রেতার ভিড়।

ইলিশ নিয়ে দরাদরি। কৃষ্ণনগরের এক বাজারে। নিজস্ব চিত্র

ইলিশ নিয়ে দরাদরি। কৃষ্ণনগরের এক বাজারে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৯
Share: Save:

পটল, ঢ্যাঁড়স এমনকী কুমরোর ছেঁকা খেয়ে আড়ষ্ট ভদ্রলোক এড়িয়েই যাচ্ছিলেন। জল-ধোয়া সবজেটে কলাপাতায় ঝলমল করছে রুপোলি শস্য, তা করুক, ও দিকে পা বাড়লে হাতে নিশ্চয় ফোসকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে! মাছের বাজারে তাই চুনো পুঁটি আর কাটা পোনার দিকেই পা বাড়িয়েছিলেন, মাছওয়ালার তারস্বরে হল্লায় গেঁথে গেলেন— ‘আরে জল নয়, ধুলোর দর সাড়ে তিনশো টাকা!’

লোকটা বলে কি? থতমত খেয়ে খানিক থমকে মন্ত্রমুগ্ধের মতোই এগিয়ে গেলেন এবং কিনে ফেললেন আধ কিলো ইলিশ , হ্যঁ ওই দরেই।

সত্যেন দত্তের ‘ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে, নাচছে ইলিশ মাছ’— এখন এমনই সহজ-সরল দামে ফিরেছে বাজারে। ছড়ানো কলাপাতায় স্তূপীকৃত ইলিশ। সকালের রোদে চকচক করছে রুপোলি শস্য। বেলা বাড়তেই কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর, বাজারে ভন ভন করছে ক্রেতার ভিড়।

কারও পছন্দ ডিম ছাড়া একটু চওড়া ইলিশ। কেউ আবার ভরা ডিমের ইলিশ ছাড়া নেবেনই না। বেচারা মাছওয়ালা। ইলিশপ্রেমীদের সামলাতে হিমশিম। হবে নাই বা কেন? ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢেলে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। ওজন কমবেশি পাঁচশো গ্রাম। তবে ওজন ছ’শো ছাড়ালেই দাম ৩০০ টাকা। একটু বেলার দিকে ঘাঁটাঘাঁটিতে একটু নরম হয়ে আসা ইলিশ ২০০ টাকাতেও বিকিয়েছে নবদ্বীপের বাজারে।

শেষ কবে এই ধুলোর দরে ইলিশ বিকিকিনি হয়েছে অনেক ভেবেও বলতে পারছেন না পোড় খাওয়া বাদারুরা। বহুদিন পর নাগালে ইলিশ পেয়ে তাঁদের অনেকেরই বুঝু চোকের কোণে মায়া জলের চিক চিক।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সপ্তাহখানেক ধরে ডায়মন্ডহারবার এবং দিঘায় প্রচুর ইলিশ উঠেছে জোগানে কোনও ঘাটতি নেই। ‘‘হোক না ছোট, কত দিন ধরা দেয়নি বাজারের ব্যাগে!’’ তোখ ছলছল করছে কৃষ্ণনগরের এক প্রবীণের।

ব্যবসায়ীরা নিদান দিয়েছেন, আবহাওয়া ঠিক থাকলে দিন কয়েক আরও মিলবে ইলিশ।অথচ মাসদেড়েক আগে ইলিশের ছবিটা ছিল একেবারে উল্টো। গাঙ বাংলার ঠিকানা ভুলে তারা যে সব পাড়ি দিচ্ছিল মায়ানমার মুলুকে।

লালগোলা থেকে হোগলবেড়িয়া। পদ্মা-গঙ্গার ঘাটে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল জেলেদের হা হুতাশ। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা ছিল সমুদ্র উজিয়ে মোহনায় এসেই ইলিশের ঝাঁক মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছিল বাংলাদেশ কিংবা আরও দূরে মায়ানমারের দিকে।

ফলে ইলিশহীন বর্ষা বাঙালির জিভের স্বাদ ছিনিয়ে নিয়েছিল যেন। দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি, হালকা মেঘ, সঙ্গে পূবালী বাতাসের ধাক্কা আবার কি ফিরিয়ে আনস তাদের?

কান্দির জেমো এনএন হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক ইলিশ বিশেষজ্ঞ সূর্যেন্দু দে’র কথায় “আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বর্ষা এ বার এমন ছন্দে ছিল যা ইলিশের জন্য সবদিক থেকে উপযুক্ত। প্রবল বৃষ্টির কারণে জলের দূষণমাত্রা হ্রাস পেতেই মাছের ঝাঁক ফের এ দিকে আসতে শুরু করেছে।”

নদিয়া জেলার প্রবীণ মৎস ব্যবসায়ী চিন্ময় ভৌমিক বলেন, “ইলিশ বেশি ওঠে পূর্ণিমা পক্ষে। কিন্তু এ বার অমাবস্যার কোটালেও ইলিশ উপচে পড়েছে। এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা।” জানা গিয়েছে এই মুহূর্তে শুধু নবদ্বীপ বাজারে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার কেজি ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। কৃষ্ণনগর, বহরমপুরেও ছবিটা ধারে কাছেই।

‘ওয়েস্টবেঙ্গল ফিশার মেন অ্যাসোসিয়েশনের’ সহ-সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ডায়মন্ডহারবার এবং দিঘা মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়েছে। এমনটা সাধারন ভাবে হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Fish Market ইলিশ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE