Advertisement
E-Paper

চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে হাসপাতাল

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগেও অসুখ-বিসুখ হলে এলাকার মানুষকে ছুটতে  হতো প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
রোগীর ভিড় নতিডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

রোগীর ভিড় নতিডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে গ্রামীণ হাসপাতাল। এলাকার প্রায় তিন লক্ষ মানুষ যে হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন থানারপাড়ার সেই নতিডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসকের সংখ্যা এক জন। লাগোয়া নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’জন চিকিৎসককে দিয়ে কোনও রকমে কাজ চালালেও স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেই অভিযোগ রোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগেও অসুখ-বিসুখ হলে এলাকার মানুষকে ছুটতে হতো প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। এই অসুবিধা ও স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ দিনের দাবি মাথায় রেখে ২০১১ সালের মে মাসে ৩৬ শয্যার এই গ্রামীণ হাসপাতালটি চালু হয়। তখন অবশ্য এটা ছিল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরে সেটা গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয়।

নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের প্রায় তিন লক্ষ মানুষ চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে এক জন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)-সহ চিকিৎসক থাকার কথা ৬ জন। বর্তমানে আছেন শুধু এক জন বিএমওএইচ। এমন পরিস্থিতিতে অস্থায়ী ভাবে আরও দু’জনকে নিয়ে এসে কাজ চালানো হচ্ছে। তার পরেও চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক।

হাসপাতাল থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ন’মাসে অন্তর্বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৭২৩ জন। ন’মাসে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ৯৫,১০০ জন। জরুরি বিভাগেও সংখ্যাটা ত্রিশ হাজার ছাড়িয়েছে। হাসপাতালের বিএমওএইচ শঙ্কর মণ্ডল জানাচ্ছেন, নদিয়ার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন। গত দু’-এক বছরে বেশ কয়েক জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন। নতুন কেউ না আসায় হাসপাতালে তিনিই একমাত্র চিকিৎসক। বাধ্য হয়ে নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই চিকিৎসককে এখানে আনা হয়েছে। দুই চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখছেন এক জন ফার্মাসিস্ট।

প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চারশো রোগী বহির্বিভাগে ও ২৫ জন রোগী অন্তর্বিভাগে ভর্তি হন। প্রতিদিন গড়ে তিন জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয় হাসপাতালে। এ ছাড়াও রয়েছে জরুরি বিভাগ। সব মিলিয়ে এই বিপুল সংখ্যাক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। গত কয়েক মাস ধরে নাগাড়ে এই অসুবিধার কথা জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনকে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। চিকিৎসকদের ক্ষোভ, ‘‘প্রতিদিন সবাইকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরাই অসুস্থ হয়ে পড়ব। এত সমস্যার মধ্যেও কিন্তু পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে অফিসের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” চিকিৎসক বিধান হালদার বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে রোগীর চাপ খুব বেড়ে যায়। ৩৬ শয্যার হাসপাতালে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হন। তখন অবসর তো দূরের কথা, নাওয়া খাওয়া ভুলে টানা কাজ করে যেতে হয়। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়লে এই সমস্যা থেকেই যাবে।”

বাসিন্দা, চিকিৎসাধীন রোগী ও আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, এত কম চিকিৎসকের পক্ষে ভাল চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া খুবই কঠিন। নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের আশ্বাস, সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শীঘ্র এই সমস্যার সমাধান হবে। যদিও সেই আশ্বাসে বিশেষ ভরসা পাচ্ছে না নতিডাঙা।

doctors Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy